রাজনৈতিক সমাধানের জন্য নাগরিক সমাজের কিছু প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতির দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি পদের পূর্ণ স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ও দায়িত্ব পুনর্নির্ধারণ করাসহ সংবিধানের কয়েকটি ধারা এবং সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়ায় পূর্ণ গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের অভিযাত্রা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম শামুসল হুদা। এতে বলা হয়, “দুর্ভাগ্যবশত আমাদের নেতৃবৃন্দ সজ্ঞানে কিংবা
অজ্ঞানে এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তুলতে হবে। তারা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অতীত ও বর্তমানের বিষয়ে আপস-মীমাংসার মানসিকতা থাকা যে গণতন্ত্র বিকাশের জন্য অপরিহার্য, সেটাও উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল হুদা বলেন, তারা মনে করেন সংস্কার নিয়ে তাদের প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক ও চর্চা চলতে থাকলে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ কোনো না কোনো সময় ফিরে আসবে। উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো: সাংবিধানিক সংস্কার: রাষ্ট্রপতি পদের পূর্ণ স্বাধীনতা; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভারসাম্য আনা; প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ও দায়িত্ব পুনর্নির্ধারণ করা, সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা রেখে নারীদের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক সংসদীয় আসন সংরক্ষণ; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলার কাছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ক্ষমতা ও সম্পদ হস্তান্তর করা, জাতীয় ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোট চালু করা। সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ সংস্থা: জাতীয় সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও আমলাতন্ত্রের সংস্কার। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা, দলগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশি শাখা বিলুপ্ত করা এবং ছাত্র-পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে দলের কাঠামো থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, এম হাফিজ উদ্দিন খান, কলামিস্ট ও সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর প্রমুখ অংশ নেন।