ঈদের আনন্দ।। জমির হোসেন
ঈদ আসার আগেই সবাই ঈদের বহুমাত্রিক আনন্দকে ভাগ করে নিতে প্রস্তুতি নেয়। এরমধ্যে অনন্য এক আনন্দের নাম চাঁদ দেখা। কারন এর সাথে রয়েছে খুশির প্রথম বার্তা। চাঁদের সাথে দেখা হউক বা না হউক চাঁদ উদযাপন কমিটি ঈদ উদযাপন করার সংবাদ জানিয়ে দেন। এরপর চিরাচরিত নিয়মে চলে ঈদের কেনাকাটা অসাধ্য আর সাধ্য অনুসারে বছরের এই দিনটিকে পালন করতে দূরন্ত ব্যস্তময় সময় কাটায় নগর,মহানগরসহ দেশের সর্বজনরা। তবে এরমধ্যে প্রবাসীরা সবসময় একটু ব্যতিক্রম ঈদ উদযাপন করে থাকেন। প্রবাসে যান্ত্রিক জীবনের মাঝে ঈদের মহা আনন্দকে বরণ করে নিতে হয়। যার একমাত্র যৌক্তিক কারন দেশ নয় বিদেশ।ঈদ মানেই তো হাসি,আনন্দ ও উল্লাস।তবু আনন্দের মাঝে কোন কোন কাল নিরানন্দ থাকে।একটি বছর কত চড়াই উতরাই পার করতে হয় মানব জীবনে।কিন্তু বছরের দুইটি দিন এলে দূঃখ,বিরহ-বেদনা,ক্লেশ সব দূর হয়ে যায়।ঈদের পূরবর্তী বার্তার আগমনে।ক্ষনিকের জন্য হলেও ঈদের খুশিতে সব রাগ-রাগুনীর অবসান টানে।পবিত্র ঈদুল ফিতরের একটি তাৎপর্য এবং ঈদুল আযহার আরেকটি তাৎপর্য।তাই দুটো খুশির দিন ভিন্ন মাত্রার আনন্দ বয়ে আনে আমাদের ঈদে। হাসি,খুশির মাঝে আছে নীরব কান্না।মুখ আছে,বুলিওআছে।কিন্তু বুঝাবার যেন সাধ্য নেই। দেশে বিদেশে ঈদের আনন্দ সম্পূর্ন আলাদা।প্রবাসে আমাদের ঈদ।সকালে উঠেই কর্মময় জীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু হয়।একজন মুসলিম হিসেবে ফজর নামাজ আদায় করে রুটিন অনুযায়ী কাজে যোগ দিতে যাত্রা শুরু করতে হয়।এর পর কর্মস্থলে একটি ব্যস্ত সময় কাটে।সকালের সুর্য পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিমদিকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত জীবন পরিবর্তনের আশায় প্রবাসে কর্মময় রসি টানতে হয়।বিরতীহীন চলতে থাকে কর্মশালা।হয়তো জীবন উন্নয়নের ভাগ্য পরিবর্তন হওয়ার পূর্ব মুর্হুত পর্যন্ত প্রবাসের এ ব্যস্ততা চালিয়ে যেতে হবে।এর মাঝে পার হবে আরো কত ঈদ।আমার কাছে অধরা হয়ে থাকবে ঈদের খুশি।তবু প্রবাসের যান্ত্রিক জীবন নিয়ে বেশী একটা খারাপ নেই।মাঝে মাঝে একটুতো খারাপ লাগবেই।কারন বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। যার কৃষ্টি,সংস্কৃতিতে জীবনের প্রথম পথ চলা।তাই ইচ্ছে করলেই এই শিকর থেকে নিজেকে বেশী দূরে রাখা সম্ভব নয়।বেশী খারাপ লাগে ঈদ এলেই।তাই হয়তো একটু বেশী আবেগে আপ্লুত হই। মায়াবী মায়ার টান বাড়ে স্বদেশে রেখে আসা মা,বাবা,আত্বীয়,পরিবার পরিজনসহ আরও আপনজনদের জন্য।স্বদেশে ঈদের এক,দুই সপ্তাহ আগেই চারিদিক আনন্দে জোয়ার বইতে শুরু করে। ঈদুল ফিতরে রমজানের বাহারি ইফতার আর ঈদুল আযহা সময় কোরবানি করার ধূম। এই ভিন্ন ভিন্ন আনন্দ মনকে উতলা করে তুলে।বেদনা সিক্ত মন থাকলেও এই মহাখুশির দিনে সব ধেয়ে যায় অজানা ঠিকানায়।একজন অন্যজনের দাওয়াতী মেহমান হিসেবে বাসায় আসে। ঘরোয়া পরিবেশে কতইনা মজা হয়।যা এক সময়ে স্মৃতির ফ্রেমে বন্ধী হয়ে রয়।এই আনন্দময় সময় গল্প,গুজব প্রবাসে আধুনিকায়নের যুগে সব থাকা সত্ত্বেও পাওয়া যায়না। তাই চিরস্মরনীয় এই দিনে বিলেত থেকে মনে পড়ে সবাইকে।প্রবাসে সবই আছে।নেই লাল সবুজের সুজলা,সুফলা শস্য,শ্যামলের বাংলাদেশ।ঈদ আছে।নেই ঈদের আনন্দ।প্রতিবেশীও আছে। নেই মনের মতন প্রতিবেশী।এই খন্ড খন্ড হৃদয়ের চাওয়াগুলো প্রবাসের এতো চাকচিক্যের মাঝে মন ভরেনা। ফিরে যেতে মন চায় মাটির টানে স্বদেশের আঙিনায়।
জমির হোসেন
রোম ইতালি