‘খালেদা ক্ষুব্ধ, আই ডোন্ট কেয়ার’

 In খোলা কলাম


‘খালেদা ক্ষুব্ধ, আই ডোন্ট কেয়ার’

শনিবার সন্ধ্যায় ৮৩ বছর বয়সী শিক্ষাবিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিবর্তন ডটকমের। এই জীবনে লিখেছেন ৭০টি বই। একজন সফল শিক্ষক তিনি। এখনও এই বয়সে শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিরন্তর লিখে যাচ্ছেন। আরো বেঁচে থাকতে চান শুধু লেখার জন্য। গত কয়েক বছর বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেও নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করেন। কখনও সক্রিয় রাজনীতি করেননি। তার সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে সফল আর পরিতৃপ্ত জীবনের কথা বলার পাশাপাশি জীবনকে উপভোগ করা, ব্যক্তি জীবনের কথা এবং রাজনীতির স্পর্শে থাকার পেছনের কথা বলেছেন অকপটে।

স্যার, আপনার রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে জানতে চাই।
বিএনপির সঙ্গে আমার পলিটিক্যাল টাচটা দুর্ঘটনাক্রমে। আমি আমার বিশ্বাস থেকে বিএনপিতে যোগ দেইনি। ’৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের কথায় মুগ্ধ হই। উনি তখন এই সার্ক (SARC) নিয়ে কাজ করছিলেন। কথা শুনে লোকটার প্রতি আস্থা তৈরি হয়। কেন এই আস্থা তৈরি হল জানি না। সেই তার সাথে যোগাযোগ শুরু হল। নানান কাজে কথা হত।

তারপর?
জিয়াউর রহমান মারা গেলেন। এরপর বেগম জিয়া রাজনীতিতে আসলেন। বেগম জিয়া মাঝে মধ্যে উপদেশ নিতেন। এই আমি বিএনপি… আর কিছু না। আমি ওদের কাছ থেকে কোনো সুযোগ নেইনি।

(নিজের পাশের সোফার একটি অংশ দেখিয়ে বলে গেলেন এমাজউদ্দীন আহমদ…)

এই চেয়ারে ইয়াজউদ্দিন (সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য) বসত। উনি আমার থেকে একটু বয়সে বড় ছিল। কিন্তু ওকে সবাই কোনো বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চুপ করে থাকতে বলত। সবাই বলত, ও কি বলতে কি বলে ফেলে। তাই সেও চুপ করে থাকত। ওকে চুপ করিয়ে রাখা হত। কিন্তু সে এদেশের রাষ্ট্রপতি হল (হি বিক্যাম প্রেসিডেন্ট অব দ্য কান্ট্রি)।

এই যে ড. মোশাররফ (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন)। ১৯৭৭-এ আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে একটা প্রোগ্রাম নিলাম। আমরা ঠিক করলাম কোনো সামরিক কর্মকর্তাকে আমরা ক্যাম্পাসে অভিনন্দন জানাব না। সেই প্রোগ্রামে ড. মোশাররফ খুব কড়া বক্তৃতা দিলেন। এতে জিয়াউর রহমানের নজরে পড়ল। জিয়াউর রহমান ডেকে তাকে বললেন, এবার আসেন, অনেকতো সমালোচনা করলেন। এবার একসাথে কাজ করি চলুন, দেখুন কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, কীভাবে ভালো কাজ করা যায়। সেই থেকে মোশাররফ জিয়াউর রহমানের সাথে রাজনীতিতে।

আপনি?
অন্য কোনো লোভ-লালসা থেকে আমি ওখানে (বিএনপিমনাদের সাথে) যাইনি। আমি লোভ কি তা জানিনা। ওদের ক্ষমতার সময়ে আমি কোনো কিছু চাইওনি, নেইওনি। আমি শিক্ষক থাকতে চেয়েছি।

এখন কেমন চলছে?
মাঝে-আমি একটা প্রস্তাব দিয়ে ছিলাম। জামায়াতকে ২০ দল থেকে সরিয়ে দিতে হবে। জামায়াত ছাড়তে হবে। ভারত, ইউরোপ আমেরিকা সবাই চাচ্ছে বিএনপি জামায়াতকে ছাড়ুক। তাহলে ছাড়তে অসুবিধা কোথায়? একথা বলাতে খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হলেন। ক্ষুব্ধ হোক। আই ডোন্ট কেয়ার (আমি পরোয়া করি না)।

আমাদের বাঙালির সাড়ে চার হাজার বছরের অর্জন স্বাধীনতা। এই ’৭১-এর অর্জনে যারা বাঁধা দিয়েছে তাদের আমি ক্ষমা করতে পারি না। ৭১ আমাদের সাড়ে চার হাজার বছরের উজ্জ্বলতম পাওয়া। এখানে আমি তার (জামায়াতের) কোনো ছুঁতা মানতে রাজি নই (আই এম নট প্রিপেয়ার টু এক্সকিউজ দেম)। এ দলে ব্যক্তিগতভাবে অনেকে আমার বন্ধু। কিন্তু পাপকে ক্ষমা করা যায়, পাপিকে না।

বেগম জিয়া ক্ষেপে গেলেন। ভোট! উনার ভোট কমে যাবে। আমি চোরকে ভোট দিব? তাহলে যারা ক্ষমতায় আছে তারা খারাপ কেন?

স্যার আপনার রাজনীতি সংশ্লিষ্টতা ও ছাত্র জীবনের রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমি ১৯৫৬ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ১৯৫২-তেই জেলে যেতে হয়েছিল। সে সময় পড়াশোনাতেও বিঘ্ন ঘটে। পলিটিক্যাল সায়েন্স এরপর ইংরেজিতেও মাস্টার্স করলাম। ১৯৫৩-৫৪তে ফজলুল হক হলের ভিপি হলাম। এতে মওলানা ভাসানীর দৃষ্টি পড়ল আমার দিকে। তিনি তখন যুক্তফ্রন্ট তৈরি করছেন।

সে থেকেই কি আপনি ভাসানীর ভক্ত?
হ্যাঁ। ভাসানী, ফজলুল হক অসাধারণ মানুষ ছিলেন। এতো সহজ আর সাধাসিধা ছিল তাদের জীবন। এতো সাধারণভাবে কথা বলতেন…। ফজলুল হকের একটা খুব সাদামাটা বাসা ছিল, ঐ যে ইত্তেফাকের ওখানে। তাদের কী যে অসীম দেশ প্রেম…

(বলতে বলতেই আরো একটি সাক্ষাৎকারের তাগাদা। একটি টেলিভিশনের পাঁচ জনের টিম বারবার তাগাদা দিচ্ছে। হাতে নিজের লেখা দুইটি বই ধরিয়ে দিয়ে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বিদায় দিয়ে বললেন, বইগুলো পড়ে আবার এসো। আরও কথা বলা যাবে।)

আতিক রহমান পূর্ণিয়া

Recent Posts

Leave a Comment