বাংলাদেশ-বিশ্ব ব্যাংক : বরফ গলবে কী

 In খোলা কলাম

বাংলাদেশ-বিশ্ব ব্যাংক : বরফ গলবে কী

পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন প্রত্যাহার ও সরকারের শীর্ষ মহলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের বিরাগভাজন হয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। এতসব ঘটন-অঘটনের পর বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর। এ সফর শুধুই কী লোক দেখানো! নাকি বাংলাদেশ-বিশ্ব ব্যাংকের সুসম্পর্ক ফেরানোর প্রচেষ্টা!

অর্থনীতিবিদদের মতে, জিম ইয়ং কিমের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-বিশ্ব ব্যাংক সম্পর্কে ঘাস গজানো রাস্তা কিছুটা পরিষ্কার হবে, শীতল হবে সম্পর্ক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার অংশীদার হতেই বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের এ সফর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ  বলেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে চলে গিয়েছিল। দুই পক্ষই একে অপরকে অনেক কঠোর ভাষায় কথা বলেছে।  বিশ্ব ব্যাংকতো সরাসরিই সরকারের শীর্ষ মহলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশও বিশ্ব ব্যাংককে অভিযোগ প্রমাণে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। তাতে মন গলেনি বিশ্ব ব্যাংকের। শেষ পর্যন্ত সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করেছে। আসলে বিশ্ব ব্যাংক চিন্তাও করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার এতবড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারবে।

তিনি বলেন, এতসব ঘটনার পর বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসেছে। ঘোষণা না দিলেও এটা স্পষ্ট যে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অতীতের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর মূলত: এ বার্তাই নিয়ে এসেছে। যদিও বলা হচ্ছে আন্তজার্তিক দারিদ্র্য নিরসন দিবস উদযাপন করতে তিনি এসেছেন।

আবু আহমেদ বলেন, আমি বলব, প্রেসিডেন্ট মূলত বাংলাদেশ-বিশ্ব ব্যাংকের তিক্ততার সম্পর্ক ঘোচাতেই ঢাকায় এসেছেন। কারণ, বিশ্ব ব্যাংকের অসহযোগিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এ অবস্থায় সম্পর্ক ভালো করে বিশ্ব ব্যাংক অবশ্যই এই কৃতিত্বের অংশীদার হতে চাইবে।

তবে বিশ্ব ব্যাংক আর বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ফাটলের কথা মানতে চাননি সংস্থাটির বাংলাদেশস্থ প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে কখনোই দ্বন্দ্ব ছিল না। সম্পর্ক স্বাভাবিকই ছিল। বিশ্ব ব্যাংক শুধুমাত্র পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। এটাও একটা নির্দিষ্ট কারণে করা হয়েছিল। অন্য সকল প্রকল্পের অর্থ বাংলাদেশকে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। কিছু কিছু প্রকল্পে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হয়েছে সবাই শুধু এই বিষয়টাকেই দেখছে। দেখেন, বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের অর্জনকেও স্বীকৃতি দিয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে অভাবনীয় সাফল্যের কারণে বিশ্ব ব্যাংক আন্তজার্তিক এ দিবস বাংলাদেশে উদযাপন করছে। বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে বিশ্ববাসীকে জানাবে বিশ্ব ব্যাংক।

জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের এ সফরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা আরো বাড়বে। বড় বড় প্রকল্পগুলোতে সহজ শর্তে ঋণ পাবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা করবে বিশ্ব ব্যাংক।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম এখন ৩ দিনের সফরে ঢাকায় আছেন। ২০১২ সালের জুনে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পের ১২০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর থেকেই বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রায় এক দশক পর বিশ্ব ব্যাংকের কোনো প্রধান বাংলাদেশ সফরে এলেন।

Recent Posts

Leave a Comment