জাতীয় পার্টি ‘সর্বোচ্চ আদালত ঘোষিত অবৈধ রাষ্ট্রপতিরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন’ এই বিধানের রাখার বিষয়ে কঠোর আপত্তি জানান। সেইসঙ্গে বিলটি সংশোধন, জনমত যাচাই-বাছাইর প্রস্তাব করেন। পরে তাদেও দাবি কণ্ঠভোটে নাকচ হলে বিলটি পাস করা হয়।
জাতীয় সংসদে বিলটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য জাতীয় পার্টি তিন বার সহযোগিতা করেছে। তাই তারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র একজন রাষ্ট্রপতিকে টার্গেট করে বিলে এ ধরণের সংশোধনী আনা বাঞ্চনীয় নয়।’ বিলটির বিরোধীতা করে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘একটি মামলার রায়ে সুপ্রীম কোর্ট এরশাদের ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসন আমলের বৈধতা দিয়েছে। ফলে তাকে বঞ্চিত করা ন্যয়সঙ্গত হবে না।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির তালিকায় খুনী মোস্তাকের নাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘যেখানে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে সেখানে খুনি মোস্তাকের নাম থাকতে পারে না।’
জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যার মনে যা, লাফ দিয়ে ওঠে তা। এই বিলে কোথাও রাষ্ট্রপতি এরশাদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তারপরও তারা এই বিষয়টি নিয়ে আসলেন কেন? ওটাই তাদের দুর্বলতার দিক। তারা বিষয়টি সংসদে উত্থাপন না করলেই পারতেন। তারাই প্রমাণ করলেন তাদের নেতা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র ও মার্শাল ল’ একসঙ্গে চলতে পারে না। জাতীয় পার্টি এখন তা মেনেই সংসদে এসেছেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ চিরতরে বন্ধ করতে তিনি বিলে বিরোধীদলকে সমর্থনের আহ্বান জানান।
জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বিলে রাষ্ট্রপতির পেনশন ভাতা ধরা হয়েছে মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ। বর্তমানে রাষ্ট্রপতির ৬১ হাজার ২০০ টাকা বেতন হিসেবে অবসর ভাতা হয় ৪৫ হাজার ৯০০ টাকা। আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসরভাতা ততো গুণ হবে, যত বছর কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আর অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট এবং দাপ্তরিক ব্যয় পাবেন।
তাছাড়া একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধা, সরকারী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে যানবাহন ব্যবহার, টেলিফোন সংযোগ, কুটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের অভ্যন্তরে সার্কিট হাউস ও রেষ্ট হাউস ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
বিলে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৬ মাস রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এমন ব্যক্তি এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আর অবসর ভাতা গ্রহণ করে কোনো রাষ্ট্রপতি মৃত্যুবরণ করলে তার বিধবা স্ত্রী বা ক্ষেত্র মতে বিপত্নীক স্বামী মাসিক অবসরভাতা দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন। তবে নৈতিক স্খলন বা অন্য কোনো অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হলেও কোনো রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা পাবেন না।
এছাড়া সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক অসাংবিধানিক পন্থায় অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন মর্মে ঘোষিত কোনো ব্যক্তি অবসর ভাতা বা অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী হবেন না বলেও প্রস্তাবিত আইনে বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক এই দুই সেনা কর্মকর্তার শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। তবে সুপ্রীম কোর্ট এরশাদের ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শাসনামল বৈধ বলে রায় দিয়েছে।