পাগলা’ ক্ষেপিস না কেন?

 In খেলাধুলা, খোলা কলাম

'পাগলা' ক্ষেপিস না কেন?

পাগলা খেপে গেলে এমনই হয়! এই পাগলাকে ক্ষেপে গেলে সামলানোর ক্ষমতা ক্রিকেট রাজ্যে কয় টিমের আছে। অন্তত ইংল্যান্ড বুঝে গেছে। নড়াইল এক্সপ্রেস তার পাগালা মুডে ছুটলে গস্তব্যে পৌঁছার আগে থামে না। সেই ‘পাগলা‘ নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি বিন মর্তুজা। তাই বারবার মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে জয়ের আনন্দ বুকে নিয়ে বাড়ির পথে থাকা বা টিভি সেটের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা লাখো ক্রিকেট ভক্ত মাশরাফির দিকে আদুরে সুরে বলছেন, প্রতি ম্যাচে আমাদের মাশরাফি পাগলাটা এমন ক্ষেপলেই পারে।

প্রথমে ব্যাট হাতে দলের বিপর্যয়ে লড়াকু ৪৪। এরপর বল হাতে ম্যাজিক স্পেল- ৮.৪-২৯-৪! যেন স্বপ্নের মতো একটা দিন কাটলো! মাশরাফি বিন মুর্তজা এক সাহসী যোদ্ধা ও দক্ষ অধিনায়কের নাম। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে এক অন্য মাশরাফির দেখা মিললো। রোববার ব্যাটে-বলে অপ্রতিরোধ্য এক রূপ নিয়ে হাজির হলেন টাইগার দলনায়ক।

সাহসী ও দক্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশকে স্মরণীয় এক জয় এনে দেন। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে হেরে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় বাংলাদেশের। রোববার সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে মাত্র ২৩৮ রান করেছিল টাইগাররা; সেটাও মাশরাফির শেষের দিকের ঝড়ের ওপর ভর করে। এমন মাঝারি সংগ্রহ নিয়েও যে ইংল্যান্ডে মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জেতা যায় শুরুতে বোলিংয়ে ঝড় তোলে দলের মধ্যে সেই বিশ্বাসই জাগিয়ে তোলেন মাশরাফি। পাঁচ সপ্তাহ আগে পাকিস্তানের বিশ্বমানের বোলারদের তুলোধুনে করে ওয়ানডে ইতিহাসের রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৪৪ রান করা ইংল্যান্ডের সামনে বাংলাদেশের সংগ্রহটা মামুলিই তো। তবে মাশরাফি নামক এক যোদ্ধার কারণে সেটিই পাহাড়সম হয়ে দাঁড়ায়।

ইংলিশ ব্যাটিং লাইনের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশকে দারুণ এক জয় এনে দেন টাইগার দলনায়ক। ব্যাটিংয়ে ৪৪ রান ও বোলিংয়ে ২৯ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট- পরিসংখ্যান মাশরাফির মাহাত্ম্য ঠিকঠাক বোঝাচ্ছে না। রোববার মিরপুরে ১৬৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে যখন বাংলাদেশ ধুঁকছিল ঠিক তখনই যোদ্ধার মতো লড়াই করেন টাইগার দলনায়ক। ২৯ বলে ৪৪ রানের ‘ঝড়ো’ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ২৩৮ রানের ভদ্রস্থ সংগ্রহ এনে দেন। এরমধ্যে অষ্টম উইকেটে নাসিরকে নিয়ে ৪৯ বলে ৬৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন মাশরাফি।

যার বদৌলতে লড়াই করার মতো পূঁজি পায় লাল সবুজের দল। দুদিন আগে মিরপুরের এই পিচেই ৩০৯ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। ফলে বাংলাদেশের করা ২৩৮ রান হেসেখেলেই ইংলিশরা পেরিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। তবে সেটা হতে দিলেন না মাশরাফি। শুরুতেই সফরকারী শিবিরে একের পর এক আঘাত হেনে দলটির মেরুদণ্ড ভেঙে দেন। যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ইংলিশরা। ইনিংসের চতুর্থ ও মাশরাফির করা ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে বোকা বনে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মোসাদ্দেক হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে জেমস ভিন্স সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশ মিরপুরে গর্জন তোলে।

পরের ওভারে সাকিবের বলে বেন ডাকেট আউট হলে আরো চাপের মুখে পড়ে যায় ইংলিশরা। এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগান মাশরাফি। ইনিংসের অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে দুর্দান্ত এক বলে জেসন রয়কে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন এই টাইগার দলনায়ক। এক ওভারের ব্যবধানে আক্রমণে এসে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বেন স্টোকসকে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড করে ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন মাশরাফি।

এরপর ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান জ্যাক বলকে আউট করে তুলিতে শেষ আঁচড়টা দেন ম্যাশ। দিন কয়েক আগেই ৩৪তম জন্মদিন ছিল তার। কিন্তু উৎসবটা সেভাবে করতে পারেননি। সতীর্থদের কাছে ‘পাগলা; নামে পরিচিত এই তারকা এবার উদযাপনের দারুণ সুযোগ পেয়ে গেলেন। ‘পাগলা’ ক্ষেপে গেলে আসলে এমনই হয়! এটা ইংল্যান্ড রোববার রাতে ভালো করেই টের পেল।

Recent Posts

Leave a Comment