যাত্রী বাড়াতে ডিজাইনের পরিবর্তন হবে

 In বিশেষ প্রতিবেদন

যাত্রী বাড়াতে ডিজাইনের পরিবর্তন হবে

বাংলাদেশে কয়েক’শ বছর আগে নদী পথে ইঞ্জিন চালিত যে যান চলতো তা স্টিমার নামে পরিচিত। স্টিমে (কয়লার বাষ্প) চলতো তাই স্টিমার বলা হতো। এখন সেই ধারাবাহিকতায় প্যাডেল স্টিমার (দুই পাশে পাখা) রয়েছে। যা রকেট নামে সবাই চেনে। উপর থেকে দেখতে রকেটের মতো। এজন্য রকেট বলা হয়।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে যাত্রী নিয়ে সরকারি যে সকল নৌ-যান চলাচল করে সেইগুলর মধ্যে রকেট ও যাত্রীবাহী জাহাজের সংখ্যা বর্তমানে ৬টি। যার একটি মেরামত করা হচ্ছে। এসব তথ্য জানান স্টিমারের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (মেরিন) খন্দকার মহিউদ্দিন রতন।

নিরাপদ ও অত্যাধুনিক যাত্রী সেবা দিয়ে ঢাকা থেকে মোড়লগঞ্জ পর্যন্ত স্টিমার চলাচল করে। কয়েক বছর আগে এই যান ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত যেতো। নাসিরখালী চ্যানেলের নদীর নাভ্যতা কমে যাওয়ায় মোরলগঞ্জ পর্যন্ত সার্ভিস চালু রয়েছে।

লঞ্চ ও স্টিমারের মধ্যে শুধু যাত্রী সেবা নয়, নিরাপত্তার দিকেও ব্যবধান রয়েছে। এ বিষয়ে খন্দকার মহিউদ্দিন রতন জানান, লঞ্চের তুলনায় স্টিমার অনেক বেশি নিরাপদ। স্টিমারের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া লঞ্চের তুলনায় স্টিমারের কেবিন ও ডেকের আয়তন  অনেক বেশি। বাঙ্গালী ও মধুমতী স্টিমারে ৫৬টি বাথরুম রয়েছে। পিএস অষ্ট্রিচ, মাহসুদ, টার্ন ও লেপচা স্টিমারে ১২টির বেশি শুধু বাথরুম।

এরপর অস্ট্রিচ, মাহসুদ রকেটে প্রথম শ্রেনির ১২টি কেবিন জন্য ৬টি বাথরুম। দ্বিতীয় শ্রেণীর ১০টি কেবিনের জন্য ৪টি বাথরুম। পিএস টার্ন ও লেপচা কেবিনের সংখ্যা অন্য স্টিমারের থেকে কয়েকটা কম। আর বাঙ্গালী ও মধুমতী স্টিমারে ভিআইপিসহ ৬০টি কেবিন রয়েছে। যা লঞ্চের কেবিনের তুলনায় অনেক বড়।

মহিউদ্দিন রতন বলেন, যাত্রীদের জন্য লঞ্চের খাবার টলিতে করে কেবিনের ভেতরে দেয়া হয়। আর রকেটে অনেক বড় ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে আড্ডা দিতে পারেন যাত্রীরা।

যাত্রীদের জন্য এতো সুবিধা রাখার পরেও কেন লঞ্চের থেকে যাত্রী কম স্টিমারে? জবাবে তিনি বলেন, আমাদের একটা টিকেটের মূল্য সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হয়। যা লঞ্চে দরকার হয় না। একটা লঞ্চ ফাঁকা থাকলে টিকেটের দাম কমিয়ে দেয়। যা স্টিমারের যাত্রীদের জন্য করা হয় না। এছাড়া লঞ্চ মালিকরা নিজের স্বার্থে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যাত্রী সেবা দিয়ে থাকেন। আর এ কারণে আমাদের যাত্রী কম। লঞ্চ ফাঁকা থাকলে যাত্রীদের টেনে হেচরে টিকেটের দাম কম নিয়ে লঞ্চে তুলছে। আর সদরঘাটের এক কোনে ১৩ নম্বর জেডিতে স্টিমারের টার্মিনাল। যা মূল টার্মিলান থেকে এক কিলোমিটার দূরে। যাত্রীরা ল্যাগেজ, ব্যাগ, বাচ্চা নিয়ে এতো দূর যেতে চায় না। এ জন্য আমাদের যাত্রী লঞ্চের তুলনায় কম।

লঞ্চের মতো রকেটের টিকেট পাওয়া সহজ নয়। এরপর শুক্রবার স্টিমার চলাচল বন্ধ থাকে। স্টিমারের টিকেট ঘাট থেকে বা বিআইডব্লিউটিসি অফিস থেকে এবং সহজ ডটকম থেকে পাওয়া যায়।

লঞ্চের তুলনায় স্টিমারের যাত্রী বাড়ানো যায় কিভাবে? জানতে চাইলে রতন বলেন, লঞ্চের থেকে খোলা মেলা স্থান রয়েছে স্টিমারে। লঞ্চে কেবিন বেশি। তারা যে ভাবে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারে আমরা তা পারি না।  এছাড়া যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা কম। স্টিমারের ছাদে কখনো যাত্রী নেয়া হয় না। পাশের ফাঁকা স্থান খালি থাকবে। আর লঞ্চের ছাদে একটু ফাঁকা স্থান পেলেই যাত্রী বসে যায়। নানা ধরণের ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীরা লঞ্চে যাতায়াত করেন। সচেতনতা বোধ যাত্রীদের মধ্যে আসলে স্টিমারের যাত্রী বাড়বে। এদিকে স্টিমারের যাত্রী বাড়ানোর জন্য সহজ ডটকম দায়িত্ব নিয়েছে। তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না।

স্টিমারের সার্বিক নিরাপত্তাসহ জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম লঞ্চের থেকে বেশি। নেভিগেশনাল এইড যা রয়েছে সব রয়েছে স্টিমারে। আধুনিক যন্ত্র, জিপিএস, কম্পাস, রাডার, বিএসএফ, যোগাযোগের জন্য ওয়ার্লেস। স্টিমার মাঝ পথে নষ্ট হয়ে থেমে থাকে না। যদি কোন সমস্যা হয় তাৎক্ষনিক উদ্ধার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার সার্বিক দায়িত্ব নেওয়া হয়।

লঞ্চের ডেকের ভাড়ার থেকে স্টিমারের ডেকের ভাড়া কম। স্টিমারে ঢাকা–বরিশাল ১৭০ টাকা আর ঢাকা-চাঁদপুর ১০০ টাকা। প্রথম শ্রেনীতে চাঁদপুর ৯২০ টাকা আর বরিশাল ২ হাজার তিন’শ টাকা।

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া পর্যন্ত স্টিমারের একটা সার্ভিস রয়েছে। সেখানে তিনটি জাহাজ চলাচল করে। আগামী বছর ওই রুটে একটি এবং ঢাকা-মোড়লগঞ্জ রুটে দুটি নতুন স্টিমার চালু হবে।

স্টিমারের যাত্রী বাড়ানোর জন্য ডিজাইনে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন নৌ পরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, স্টিমার বর্তমানে যে পদ্ধতিতে যাত্রী ওঠায় বা নামায়। এ কারণে মূল টার্মিলানে স্টিমার আসতে পারে না। সবশেষ টার্মিনাল থেকে যাত্রী ওঠাতে হয়।

স্টিমার লম্বালম্বি ভাবে এক পাশ হয়ে যাত্রী ওঠায়। আগামী বছরের মধ্যে স্টিমার, লঞ্চের মত সামনে থেকে যাত্রী ওঠাতে পারবে। এর জন্য বাঙ্গালী ও মধুমতী স্টিমারের সামনে কেটে লঞ্চের মত বানানো হবে, আর নতুন স্টিমার যা নির্মান করা হবে সেইগুলোরও সামনে থেকে যাত্রী ওঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলেন মন্ত্রী।

লঞ্চের তুলনায় স্টিমারের যাত্রী কমের বিষয়ে তিনি বলেন, লঞ্চ মালিক সিন্ডিকেট। এরপর স্টিমারের টিকেটের মূল্য নির্ধারিত যা কমানো সম্ভব নয়। কিন্তু লঞ্চের টিকেটের দাম কমানো সম্ভব। এসব কারণ বাদেও আরো বেশি কিছু কারণে যাত্রী কম যা আমরা চিহ্নিত করেছি। সব থেকে বেশি যে কারণে যাত্রী কম তা হলো মূল টার্মিনাল থেকে স্টিমার অনেক দূর থেকে যাত্রী ওঠায়। তাই মূল টার্মিলানে স্টিমার ভেতরে পারে তার  ব্যবস্থা করা হবে। আর আগামী বছরের মধ্যে স্টিমারের যাত্রী সমস্যার সমাধান হবে বলেন নৌ মন্ত্রী।

Recent Posts

Leave a Comment