তাঁর শূন্যতা তারার মতো বাজে : মিনার মনসুর

 In শিল্প-সাহিত্য, সফল মানুষ

 

কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে তর্ক চলছে। প্রায় কয়েক দশক ধরে তাঁকে বাংলাদেশের প্রধান কবি, অন্যতম প্রধান কবি এইসব অভিধায় ভূষিত করার পর এখন চলছে যাচাই-বাছাই। বলা হচ্ছে, শামসুর রাহমানের কবিতার প্রতি তরুণ কবি ও পাঠকরা ক্রমেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এটা কীভাবে সাব্যস্ত বা নিরূপিত করা হয়েছে জানি না, তবে এমন একটি আলোচনা যে ফল্গুধারার মতো নিভৃতে বহমান তা শামসুর রাহমানও জানতেন।

তরুণরাই যে এ তর্কের বিউগলবাদক তাও তাঁর অজানা ছিল না। তার মানে হলো, এটা হঠাৎ করে শুরু হয়নি। শামসুর রাহমানের (১৯২৯-২০০৬) মৃত্যুর পর এক দশক অতিবাহিত হয়েছে। ধরে নেওয়া যায় যে তারও অন্তত এক-দেড় দশক আগেই এ তর্কের সূত্রপাত। তবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বা উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। বরং কবিকে অন্য অনেকের তুলনায় ভাগ্যবানই বলতে হয়। কারণ প্রায় অর্ধেকটা শতাব্দীজুড়ে কবি-সমালোচক, এমনকি কবিতাবিষয়ে উদাসীন আমজনতার কাছ থেকেও কবি হিসেবে তিনি শীর্ষত্বের যে শর্তহীন স্বীকৃতি ও সমাদর পেয়ে এসেছেন এমন সৌভাগ্য সবার হয় না।

অনস্বীকার্য যে জাতি হিসেবে আমরা আবেগপ্রবণ। তার প্রভাবও প্রায় সর্বব্যাপ্ত। ফলে ঐতিহ্যগতভাবেই এখানে যুক্তির চেয়ে ভক্তির পাল্লাই ভারী। আমরা যখন কাউকে পছন্দ করি কিংবা ভালোবেসে ফেলি, তখন তার কোনো খুঁতই চোখে পড়ে না। আবার যখন কাউকে অপছন্দ বা ঘৃণা করতে শুরু করি, তার গুণগুলোও আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি বা তার কর্মকে ভালোমন্দ মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে দেখা সাধারণের জন্যে ততটা জরুরি না হলেও সাহিত্যবিচারে এক্ষেত্রে কোনো প্রকার আপস চলে না। কিন্তু আমাদের রুচি ও মানসিকতা এখনো তাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি।

এমনকি আমাদের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতিও এর খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। তারপরও ভাবতে ভালো লাগছে যে কেউ কেউ প্রধানত গত কয়েক প্রজন্মের তরুণরা শামসুর রাহমানের মতো কবিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে দ্বিধা করছেন না। এটা অক্ষমতা বা অপছন্দজনিত ক্রোধ বা ক্ষোভ বলে আমার মনে হয়নি। শামসুর রাহমানের কবিতার বিরুদ্ধে তাদের প্রধান যে অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলোকে তারা তাদের মতো করে যুক্তির শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং করছেন। এটা আমার কাছে কবিকে সমগ্রভাবে দেখার একটি আন্তরিক প্রয়াস বলে মনে হয়েছে। শামসুর রাহমানের কবিতার প্রতি প্রবল ভালোবাসা সত্ত্বেও এ প্রয়াসকে স্বাগত জানাতে আমি কুণ্ঠিত নই।

মনে রাখা জরুরি যে শুধু তাঁর কবিতার বইয়ের সংখ্যাই প্রায় ৭০টি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয়েছে ১৯৬০ সালে। তারপর আমৃত্যু অর্থাৎ আরও প্রায় অর্ধশতাব্দী অবধি সচল ছিল তাঁর কলম। মৃত্যুর প্রায় দুই যুগ আগেই ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’র স্বীকৃতি পেয়েছেন দুর্মুখ বলে পরিচিত কবি-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের কাছ থেকে। বললে অত্যুক্তি হবে না যে দীর্ঘ যাত্রাপথের প্রায় পুরোটাই দুই বাংলার বিশিষ্ট কবি ও সমালোচকদের প্রশংসার পুষ্পবৃষ্টিতে স্নাত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। আর এটা যে এখনকার মতো কোনো দল বা সংঘশক্তির কৃপায় বা কূটকৌশলে প্রাপ্ত নয় তাও সুবিদিত। এমন একজন কবিকে যে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় তা বোঝার জন্যে সাহিত্যবিশারদ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

শামসুর রাহমানের বিপুল সৃষ্টিসম্ভার এবং অর্জন দুয়ে মিলে যে বৃহৎ অবয়বটি তৈরি হয়েছে তাকে তুলাদণ্ডে তুলে নতুন করে তার মূল্য নিরূপণ শ্রমসাধ্য শুধু নয়, রীতিমতো দুঃসাহসিক একটি কাজও বটে। ফলাফল যাই হোক না কেন, স্বেচ্ছায় সেই কঠিন কাজে যারা ব্রতী হয়েছেন তাদের ভূমিকা কলম্বাসের সঙ্গে তুলনীয়। অবশ্য এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে ভারতের সন্ধানে নাও ভাসিয়ে তারা হয়তো আমেরিকায়ও পৌঁছে যেতে পারেন, কিন্তু তাতে ক্ষতির চেয়ে লাভের পরিমাণই বেশি। লাভ দুদিক থেকেই। প্রথমত, আমরা শামসুর রাহমানের অনুরাগী পাঠকরা কবিকে নতুন করে দেখার সুযোগ পাবো যা আমাদের কবিদর্শনকে অধিকতর পূর্ণতা দেবে; দ্বিতীয়ত, কবি হিসেবে শামসুর রাহমানেরও নবায়ন ঘটবে যা কালের সীমা অতিক্রমকারী কবিমাত্রের জন্যেই জরুরি বলে আমার ধারণা।

শামসুর রাহমানের কবিতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো বেদবাক্য নয়। অতএব, এগুলো যে অভ্রান্ত অখণ্ডনীয় এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। সাহিত্যবিচারের স্বীকৃত যত মানদণ্ডই থাকুক না কেন, বিচারকার্যটি যিনি বা যারা করছেন তাদের ভূমিকা বা দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টিও এক্ষেত্রে কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সেটিও যে সুযোগ পেলেই সিন্দবাদের সেই বুড়োর মতো মানদণ্ডের ঘাড়ে চেপে বসতে পারে তা মনে রাখাই শ্রেয়।

তারপরও আমি বলবো, এটা একটা শুভ সূচনা সেটা আমাদের সমালোচনা সাহিত্যের জন্যেও। কিছু বিষয় টেবিলে উত্থাপিত হয়েছে। এখন অন্যরাও তাতে শরিক হতে পারেন। অভিযোগের সপক্ষে যে-সব যুক্তি দেখানো হয়েছে সেগুলোকেও তুলাদণ্ডে তুলে যাচাই-বাছাই চলতে পারে। তবে এটা খুবই শ্রমসাধ্য কাজ যা এড়িয়ে চলতেই আমরা অধিক পছন্দ করি। তার পরও আমার বিশ্বাস, কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন। শামসুর রাহমানের কবিতাবিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য হলে তা খারিজ করে দেবেন বিনা দ্বিধায়। জয় হবে যুক্তির। একই সঙ্গে সমৃদ্ধ হবে শিল্পসাহিত্য চর্চা বা অনুশীলনের দীর্ঘ উপেক্ষিত ধারাটি।

বলে রাখা ভালো যে আমি শামসুর রাহমানের কবিতা মূল্যায়ন করতে বসিনি। সেই দুঃসাহসও আমার নেই। আমার চোখ মূলত প্রেমিকের। সেই শৈশবে যখন থেকে কবিতার সঙ্গে সম্পর্ক তখন থেকেই শামসুর রাহমান আমার অন্যতম প্রিয় কবি। বলতে প্রলুব্ধ হচ্ছি যে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শামসুর রাহমান কেন আমার প্রিয় কবি তার বৃত্তান্ত লিখেই পুরো খাতা শেষ করেছিলাম। প্রেমিক পণ্ডিতের মুখাপেক্ষী নন। প্রেমিকার রূপ বা সৌন্দর্য বিষয়ে বিচারকমণ্ডলী কী বললেন তাতে তার কিছুই যায় আসে না। কারণ তার একমাত্র দায়বদ্ধতা হৃদয়ের কাছে। যেভাবেই হোক অতিক্রান্ত কৈশোরেই শামসুর রাহমানের কবিতা আমার হৃদয়কে জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছিল।

নতুন বই নতুন কবিতার জন্যে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম। তাঁর সদ্য প্রকাশিত কবিতাগুলো এক বিস্ময়মাখা মুগ্ধতা নিয়ে আসতো আমার জন্যে যা ঠিক রবীন্দ্রনাথ কিংবা জীবনানন্দের মতো নয়, যদিও দুজনই আমার অত্যন্ত প্রিয়। নয় তাঁর সমসাময়িক আল মাহমুদ, শহীদ কাদরি কিংবা সৈয়দ শামসুল হকের মতোও। শামসুর রাহমানের বলার ভঙ্গি, ব্যবহৃত শব্দ, উপমা, চিত্রকল্প সবকিছুর সঙ্গেই যেন জড়িয়ে থাকতো মুগ্ধতার রেশ। সেই মুগ্ধতায় কখনো ছেদ পড়েনি, যদিও শেষের দিকে ব্যক্তিগত নানা ঝামেলার কারণে তাঁর কবিতার সঙ্গে আমার কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

এখন যারা ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে শত মাইল বেগে নতুন মডেলের গাড়ি হাঁকান, তাদের পক্ষে বাস্তবিকই কল্পনা করা কঠিন যে মাত্র তিন দশক আগে এ সড়কগুলোর অবস্থা কেমন ছিল এবং কী ধরনের গাড়ি চলাচল করতো এসব সড়কে। রবীন্দ্রনাথের পরে যারা তাঁরই নির্মিত বাংলা ভাষার মহাসড়কে আধুনিক বা অত্যাধুনিক কবিতার যান ছুটিয়েছেন তাদের কারো কারো ক্ষেত্রেও এমন বিভ্রম লক্ষ করা গিয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, শামসুর রাহমানকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও এ ধরনের বিভ্রমের আশঙ্কা প্রবল।

বিভাগোত্তরকালে ‘নতুন কবিতা’সংকলনের মধ্য দিয়ে এ ভূখণ্ডে যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, শামসুর রাহমান তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বলতম। তাঁর কবিতা বিচারের ক্ষেত্রে এ প্রেক্ষাপটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে তখন কারা কবিতা লিখতেন, কী ধরনের কবিতা লিখতেন, সেই কবিতার ভাষা কেমন ছিল এবং কলকাতাকেন্দ্রিক কবিতা থেকে তাকে আলাদা করা যেত কি না এই বিষয়গুলো চোখের সামনে রাখা গেলে শামসুর রাহমানের অবদান ও ঔজ্জ্বল্যের প্রকৃত মূল্য নিরূপণ করাটা সহজ হবে।

কবিতার নগণ্য একজন কর্মী হিসেবে বলতে পারি যে এমনকি সত্তরের দশকেও আমরা হেঁটেছি প্রধানত তারই নির্মিত পথরেখা ধরে। প্রেম বা দ্রোহের পদাবলি যাই লিখি না কেন, উপযুক্ত শব্দগুচ্ছের সন্ধানে হাত বাড়ালেই চার পাশে মৌমাছির মতো বেজে উঠেছে তাঁরই সৃষ্ট শব্দরাজি। অপ্রিয় হলেও সত্য যে তাঁর সৃষ্টির সংখ্যাধিক্যের নেতিবাচক দিকটি যতটা গুরুত্ব পেয়েছে, তিনি যে বিপুল শব্দসম্ভার ও ভাষার ঐশ্বর্য আমাদের উপহার দিয়েছেন তা ঠিক ততটাই উপেক্ষিত হয়েছে।

সবিনয়ে আমি প্রস্তাব করতে চাই যে ক্যাটালগিং, বিবরণধর্মিতা ও পুনরাবৃত্তির বিষয়গুলোর বিপরীতে শুধু তাঁর ব্যবহৃত নিজস্ব শব্দ, উপমা, রূপক ও চিত্রকল্পগুলোকে আলাদা করা হোক। তাহলেই অন্তত কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে। প্রথমত, তিনি এককভাবে ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতায় যা যোগ করে গেছেন আমাদের সাহিত্যে তার তুলনা খুব সহজলভ্য নয়। দ্বিতীয়ত, বিভাগোত্তর কালে বাংলাদেশের কবিতার যে স্বতন্ত্র ধারাটি আপন বিভায় মূর্ত হয়ে উঠেছে শামসুর রাহমানই হলেন তার প্রধান স্থপতি।

এমন নয় যে তাঁর কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। সমকালে তো বটেই, পরবর্তী ষাটের দশকেও শক্তিশালী এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় কবিদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে। কবি হিসেবে মজ্জাগতভাবেই শামসুর রাহমান ছিলেন অনেকটাই গজদন্তমিনারবাসী। রাজনীতি ও কোলাহল থেকে সযত্নে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি। ষাটের ও সত্তরের কবিরা যখন বিপ্লব ও রাজনীতির কবিতা লিখে জনতার মন জয় করে নিচ্ছেন, রাজনৈতিক নেতাদের মতো তুমুল হাততালি কুড়োচ্ছেন দেশজুড়ে তখনো শামসুর রাহমানের নির্জনতার ধ্যান ভাঙেনি।

তার পরও আমরা যখন রাজনৈতিক বা বিপ্লবী কবিতার সন্ধানে হৃদয়ে কান পাতি, বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করি যে সেখানেও শামসুর রাহমানের একচ্ছত্র অধিষ্ঠান। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রায় সমান্তরাল হয়ে মাইলফলকের মতো দাঁড়িয়ে আছে তাঁর কবিতা। আমি এখানে তাৎক্ষণিকভাবে তার একটি তালিকাও তুলে ধরতে পারি। কিন্তু তা অনাবশ্যক এ কারণে যে যারা বলছেন পাঠকচিত্তে শামসুর রাহমানের আবেদন ক্ষয়ে যাচ্ছে তারা যেকোনো কবিতাপ্রিয় পাঠককে জিজ্ঞেস করলেই তালিকাটি পেয়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।

এ কথা বলার উদ্দেশ্য এটা নয় যে জনপ্রিয় কবিতা মানেই ভালো কবিতা। বরং যে-বিষয়টি আমার কাছে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে তা হলো, সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শামসুর রাহমানের কবিতা কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জনচিত্তে স্থান করে নিয়েছে। জনপ্রিয় কবি বলতে যা বোঝায় তিনি কখনোই তা ছিলেন না। তা সত্ত্বেও নজরুল-লালনকে মানুষ যেভাবে গ্রহণ করেছে, শামসুর রাহমানও তার ব্যতিক্রম নন। অতএব, বিচারকমণ্ডলীর রায় যাই হোক, কবি শামসুর রাহমান বেঁচে থাকবেন স্বমহিমায়।

আমার উদ্বেগ অবশ্য অন্যত্র। খাঁ খাঁ রোদ্দুর যখন পেট্রোল বোমার মতো আমাকে পোড়াতে থাকে, একটু ছায়ার সন্ধানে আমি উপরের দিকে তাকাই। দেখি, সেখানে কিছুই নেই। তখনই সতত দুর্ভোগতাড়িত এই বিষণ্ন বদ্বীপের দুর্বিনীত অন্ধকারে তারার মতো বাজে তাঁর শূন্যতা।

Recent Posts

Leave a Comment