মানুষ কিভাবে এতো দরদ দিয়ে লিখতে পারে…!

 In খোলা কলাম, শিল্প-সাহিত্য

 

(হুমায়ুন আহমেদ। সহজ ভাষায় যিনি আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনকে হাসি কান্নায় তুলে ধরেছেন তার সাহিত্যে। তার লিখা বই পড়ে আমরা  অনুভব করেছি জোসনার আলো। বৃষ্টিতে ভেজার অন্য রকম আনন্দ তিনি আমাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন। একই বই পড়ে কখনো পাঠক হেসেছে, কখনো কেঁদেছে। চলচিত্র ও নাটক নির্মাতা হিসাবেও তিনি ছিলেন সবার জনপ্রিয়। কোথাও কেউ নেই, অয়ময় কিংবা আগুনের পরশমণি আজো বাঙ্গালি দর্শকের মনে স্থান ধরে রেখেছে। সেই কিংবদন্তি হুমায়ুন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে মুক্তকথায় অনেকেই লিখেছেন প্রিয় লেখককে নিয়ে তাদের অনুভূতি)

দৈনিক মানবকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার তাসকিনা ইয়াসমিন বলেন, লেখক হুমায়ন আহমেদের অনেক যোগ্যতা যা আমার মতো ক্ষুদ্র পাঠকের পক্ষে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তার অনেক লেখা পড়েছি, দেখেছি তার বানানো সিনেমা। তার অনেক যোগ্যতার ভীড়ে লেখক পরিচয়টাই বেশি ভাল লাগে। ভাল লাগে তার ঝরঝরে ভাষায় লেখা বই। তবে, সব বই পড়ে যে ভাল লেগেছে এটা বলতে পারি না। একটা বই পড়ে ( এখন নাম মনে না থাকায় দু:খিত) মিসির আলীর অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়েছিল। সেই বইটা পুরো পড়ে শেষ করে মাত্র একটা লাইন ভাল লেগেছিল। আর মনে হয়েছিল এই লাইনটার জন্যই বইটি সুন্দর। আর তার ঐ একটা লাইন বোঝার জন্যই পুরো বইটা পড়তাম। তিনি ছিলেন বাস্তববাদী, তিনি বাস্তব সত্যি কথাটা স্পষ্ট করে লিখতেন। তার হিমুর সঙ্গে আমার অনেক মিল আছে, যদিও আমি একজন নারী। মেয়ের জন্য বাবার রংফর্সাকারি ক্রিম কেনা, ঔষধের দোকানে গিয়ে টাকা না থাকায় না কিনেই বাবার ফেরত আসা – এগুলো আমাদের নিত্যদিনের বাস্তব ঘটনা আমার নিজের জীবনেরই অভিজ্ঞতা। তিনি ছিলেন আমার লেখক- আমাদের মতো মানুষদের লেখক।  তবে, তার কাঠ পেন্সিলে ছেলের টয়লেটের পানি কাপে করে এনে দিয়ে বাবাকে খেতে দেবার বিষয়টি পড়ে খুবই খারাপ লেগেছিল- এমন লাইন তার কাছ থেকে আশা করিনি। যদিও জানি তিনি আমার আশার দিকে তাকিয়ে থেকে কোন লেখা লেখেন নি!

এখন হুমায়নকে খুব মিস করি। ধন্যবাদ শাওন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, চ্যানেল আইকে যারা তাকে হারিয়ে যেতে দেন নি। তিনি কোনদিনই হারিয়ে যাবেন না – যতদিন বাংলাদেশ এবং বাঙালি সমাজ থাকবে হুমায়ন ততদিন বেঁচে থাকবেন।

বাংলাদেশ পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে কর্মরত খাইরুল রবিন বলেন, ” কোথাও কেউ নেই ” নাটকে বাকের ভাইয়ের যেদিন ফাঁসি দেওয়া হচ্ছিল সেদিন মনের অজান্তে অঝোরে কেঁদেছিলাম…..মানুষ কিভাবে এতো দরদ দিয়ে লিখতে পারে হুমায়ুন আহমেদের লেখা না পড়লে বিশ্বাসই করা যায় না……

আইনজীবী পারভেজ জাহেদী বলেন, হুমায়ুন আহমেদের প্রায় সব চরিত্রই নিজের সাথে মিলে যায়। মনে হয় এটা আমার নিজের কথা।

ডাকসার বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত মাসুদ পারভেজ বলেন,  আমি উনার একজন একনিষ্ট ভক্ত। ওনার প্রথম নাটকের কথা আমার মনে আছে “কোথাও কেউ নেই” মধ্যবিত্ত সমাজের সুখ-দুঃখ নিয়ে অতি চমৎকার সুন্দর নাটক তৈরি করেছিলেন। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত এমন কোন নাটক হয়নি যার জন্য রাস্তায় মিছিল হয়েছে। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি যেন না হয় এই কারনে। এরপর আগের একটি ছবি “শঙ্খনীল কারাগার” দেখেছি। অয়োময়, আজ রবিবার ছিল অসাধারন এক নাটক। মধ্যবিত্ত সমাজটাকে তার লেখনির মধ্যে সুন্দর ভাবে প্রকাশ করতেন। তার গল্প- উপন্যাসগুলো এত সুন্দর -সাবলীল ছিল যে এক বসাতেই শেষ করা যেত||| এত সুন্দর ও সহজ ভাষায় উনি লিখতেন যাতে করে ওনার গল্পের গভীরে সকলে প্রবেশ করতে পারতেন|| আগুনের পরশমনি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, আমার আছে জল, নন্দিন নরকে তার অসাধারন ছবি||| সত্যিকার অর্থে এই নন্দিন সাহিত্যিক ছিলেন অসাধারন। মিসির আলি ও হিমু ছিল তার অসাধারন এক অনবদ্য চরিত্র। পুর্ণিমা-জল জোসনা, শ্রাবণধারা তার ছিল অতি প্রিয় || এরকম দক্ষ, গুণি সাহিত্যিকের জন্ম হবে কিনা জানিনা তবে আমাদের মত ভক্ত তাকে মিস করবো আজীবন।

সোয়েব মাহমুদ লেখেন, উনি ম্যাজিশিয়ান।

শিশির বিশ্বাস লেখেন, নুহাশ পল্লীতে গেলে মনে হয় প্রত্যেকটা গাছ, লতাপাতা, পুকুর এর সাথে জড়িয়ে আছে সবার প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ।

ইত্তেহাদ ফেরদৌস সজীব লেখেন, নয়ন তোমারে দেখিতে পায় না …..রয়েছো নয়নে নয়নে…………. হুমায়ুন আহমেদে সারাজীবন নয়নে নয়নে থাকবেন

Recent Posts

Leave a Comment