জামায়াত চায় ১০০ আসন!

 In জাতীয়, দেশের ভেতর

 

২০ দলীয় জোটে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলন সংগ্রামের দর কষাকষি শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির কাছে নিজেদের জন্য একশ’ আসনের ‘বায়না ধরেছে’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যদিও এখনো ঠিক নেই- দলটির নেতারা নিজ দলের হয়ে আদৌ নির্বাচন করতে পারবেন কিনা। তারপরও বিএনপির সঙ্গে আগে ভাগেই একটা ফয়সালা চুকিয়ে রাখতে মরিয়া দলটি। বিএনপি ও ২০ দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জামায়াতের আসন চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

জামায়াতের দেখাদেখি ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিকরাও অন্তত আরো ৪০টি আসনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে কী হয় না হয়, সেই ভরসা-ই না থেকে জোট শরীকরা আগেভাগেই আসনের একটা ফয়সালা চায়। এ তথ্যও জোটের একাধিক শরীক নেতা পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর বয়স্ক নেতাদের বেশ কয়েকজনের ফাঁসি হয়েছে। নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে দলটি। জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব বিএনপির নীতি নির্ধারকদের কাছে তাদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, গত এক দশকে তুলনামূলকভাবে তাদের (জামায়াত) নেতাকর্মী বেশি গুম-খুন ও কারাবরণের স্বীকার হয়েছেন। এছাড়া ফাঁসিতে ঝুলেছেন তাদেরই বেশি নেতা। আর আন্দোলন-সংগ্রাম যতটুকু হয়েছে তাতে জামায়াত শিবিরের অবদান কম নয়।

যদিও জোটভুক্ত অন্য শরীক দল ও বিএনপির একটি বড় অংশ মনে করে জামায়াত বয়স্ক নেতাদের হারিয়ে আগের আর সেই জামায়াতে ইসলামী নেই। বরং জামায়াতের অস্তিত্বই প্রশ্নের সম্মুখীন। এ সময়ে আসন নিয়ে দরকষাকষির বিষয়টিকে তারা সন্দেহের চোখে দেখছে।

জানা যায়, জামায়াত ছাড়া ২০ দলীয় জোটের ছোট বড় অন্য শরীকরাও নিজ নিজ দলের অন্তত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা চেয়ারম্যান, মহাসচিব পর্যাযের নেতৃত্বের সংসদীয় আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চান।

এখন পর্যন্ত চার খণ্ডে ভাগ হওয়া জাতীয় পার্টির একটি অংশ প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ছিল। এই অংশটিও কমপক্ষে তাদের চার নেতার মনোনয়ন নিশ্চিতের জবান নিতে চান। তারাও মনে করেন, তাদের দলে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অন্তত চার থেকে পাঁচজন যোগ্য নেতা রয়েছেন।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন  বলেন, ‘চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমাদের বলেছেন নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

তারমতে, নিজেদের এলাকায় নেতাকে চেনেনা এমন দলের নেতা মনোনয়ন চাইলেই তো হবে না। কোন এলাকায় কোন নেতা কেমন জনপ্রিয় বা কি কাজ করছেন তা বেগম জিয়া জানেন। তার ভাষায়, ‘খালাতো বোনের বিয়েতে কি আর ঘটক লাগে?’

জানতে চাইলে ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম টেলিফোনে  বলেন, ‘চাইলে তো কতজন কত কিছুই চাইতে পারে। নির্বাচনেরই ঠিক নাই। মনোনয়ন বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত সময় মতো বিএনপির হাইকমান্ড নিবেন।’

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা না হলেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে এখনই এসব বিষয়ে দলীয় ফোরামে বিস্তারিত আলোচনার সময় আসেনি।’

নাম প্রকাশে না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য  বলেন, ‘জামায়াত ১০০ আসন চেয়েছে, তার মানে এই নয় তাদেরকে ১০০ আসন দেওয়া হবে। আর এ মুহূর্তে এর চাইতে বড় বিষয় দেশে আদৌ কি জাতীয় নির্বাচন হবে?’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে ভয় পায় বলে সরকার রাস্তায় নামতে দেয় না। প্রতিদিন সারাদেশ থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের নামে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব কীসের আলামত?’

‘সরকার আগে নির্বাচনের সময় ঠিক করুক, পরে আসন নিয়ে আমরা বসব। আশা করি এসব নিয়ে আমাদের মাঝে কোনো সমস্যা হবে না। সময় হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে’ যোগ করেন স্থায়ী কমিটির ওই শীর্ষ নেতা।

জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

Recent Posts

Leave a Comment