দলবদলের ৩৩ দিনেই আ’লীগ সম্পাদক!

 In বিশেষ প্রতিবেদন
বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু (বাম থেকে তৃতীয়) ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন গত অক্টোবরে। তিনি এখন সাধারণ সম্পাদক

দল বদলে পদ মেলে, তাই বলে এত তাড়াতাড়ি? আগে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির নেতা। এ বছরের ১২ অক্টোবর দলবদল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে ফুল দিয়ে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেওয়ার এক মাস তিন দিন পরেই তিনি হয়ে গেলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ৩ নং ভাটেরা ইউনিয়নের নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে এভাবেই। আর দুই বছর আগে বিএনপি থেকে দল পরিবর্তন করা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফিরোজ মিয়া এখন একই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর ৩৩ দিন আগে দলবদলকারী বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু পেয়েছেন সাধারণ সম্পাদকের পদ।টাকার বিনিময়ে এই পদ পদবি বিতরণের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুর বিরুদ্ধে।

এদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিত নেতারা ওই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরইমধ্যে তারা পাল্টা কমিটিও গঠন করেছেন। ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী ইন্তাজ আলীর নেতৃত্বে সেখানকার আওয়ামী লীগের বড় অংশটি এই পাল্টা কমিটি গঠন করেছে।

স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুলাউড়া বিএনপির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীনের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু ও ফিরোজ মিয়া।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, প্রায় ১০ বছর আগে থেকে নানু বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এমনকি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সরকারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়।

বদরুল আলম সিদ্দিকী নানুকে দলীয় পদ দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের তীর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনুর দিকে। বদরুল আলমের ঘনিষ্টজনরা বলছেন, তাকে ন্যূনতম ২ লাখ টাকা দিয়ে এই পদ মিলেছে নানুর।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ১৫০ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১৩৫ জন বদরুল আলম নানুকে ভোট দিয়েছেন। কাউন্সিলররা চেয়েছেন বলেই সে সেক্রেটারি হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সেক্রেটারি বানানো হয়েছে। সেটা আমি বানাইনি। এখানে আমার পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ নেই।’

রেনু বলেন, ‘আমি তো আজকের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি না। ৪৫ বছর বয়স হয়েছে রাজনীতির। আমার বয়স হল ৬৬। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ২৫ বছর।’

অপর নেতা ফিরোজ মিয়া আগে বিএনপির সভাপতি ছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা আমি জানি না। এটা বলতে পারব না।’

তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বদরুল আলম সিদ্দিকী নানুকে আমি কোনো সদস্যপদ দিইনি। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমদ তাকে সদস্য করেছেন। সেই কাগজটাও নানু আমাকে না শুধু পুরো কাউন্সিলে দেখিয়েছেন।

নানু বিগত ৫ জানুয়ারির সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রেনু বলেন, ‘সে কোন জায়গার আন্দোলনে ছিল এরকম ফটো থাকলে দেখাক, এখন তো ডিজিটাল যুগ।’

রাজনীতিতে পরিবেশ পরিস্থিতিতে জামায়াত আর ছাত্র শিবির বাদে পেট্রিয়ট বাংলাদেশের রাজনীতির পক্ষে,মুক্তিযোদ্ধের পক্ষে যারাই থাকবে তাদের তো পরিবর্তন পরিবর্ধন হতেই পারে-বলেন রেনু।

ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী ইন্তাজ আলী বলেন, আমি এখন ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি (পাল্টা কমিটি)। এখন বর্তমানে আওয়ামী লীগের দুইটা অংশ হয়ে গেছে। আমার কমিটি এখনো কেউ অনুমোদন দেয়নি। বর্তমান ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি মো. ফিরোজ মিয়া সাবেক বিএনপি দলীয় এমপি এম এম শাহীনের এমপি থাকার আমলে ভাটেরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। আর বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু একই ইউনিয়নের বিএনপির সেক্রেটারি ছিলেন। বিগতদিনে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে তারা অংশ নেন।

তিনি বলেন, ‘যাদের সভাপতি সেক্রেটারি দিয়ে রেনু সাহেব কমিটি করেছেন তারা তিনবার দল বদল করেছেন এবং এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে প্রভাবখাটিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এদের কিছু টাকা পয়সা হয়েছে। এ হিসেবে গায়ের জোরে প্রভাব খাটানোর জন্য পয়সার জোরে আওয়ামী লীগের লোক হয়েছেন। এরা কোনোদিনই আওয়ামী লীগের লোক ছিল না। গত ১২ অক্টোবর তারা রেনু সাহেবের কাছে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর পর গত ১৫ নভেম্বরের কাউন্সিলে ফিরোজ মিয়াকে সভাপতি ও সেক্রেটারি বদরুল আলম সিদ্দীকি নানুকে সেক্রেটারি বানানো হয়। এ অভিযোগ আমরা জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির কাছে পাঠিয়েছি।’

ভাটেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বর্তমান কমিটির সভাপতি ফিরোজ মিয়া এর আগে বিএনপির সভাপতি ছিলেন কিনা আমি জানি না। তবে আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। একনিষ্ঠভাবে আওয়ামী লীগ করি বলেই দল পদ দিয়েছে।’

কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি রেদোয়ান খান বলেন, ‘ফিরোজ মিয়া আগে বিএনপি করত। পরে চলে গেছে। বদরুল আলম নানুও বিএনপি করত। এখন দলে নেই। আওয়ামী লীগে গেছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি নেছার আহমেদ বলেন, ‘সম্মেলন হওয়ার আগে কমিটি গঠন বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছিলাম। সম্মেলন হওয়ার পর কোনো অভিযোগ পাইনি।’

কেউ দলবদল করলে কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার ব্যাপারে কোনো বিধান আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন কেউ যারা আগে আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো সংগঠনের সদস্য না। তারা ন্যূনতম এক বছরের আগে কোনো পদবি পাবেন না। যদি কেউ পদ পান তাহলে সেটা গঠনতন্ত্র অমান্য হবে।’

Recent Posts

Leave a Comment