এক বছরেও মেলেনি ৫ ভুয়া হিসাবের তথ্য

 In বিশেষ প্রতিবেদন, ব্যবসা বাণিজ্য
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ ডলার চুরির ঘটনার পর এক বছর চলে গেল। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুইফট কোড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে’ অর্থ লোপাটের ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ২৯ ফেব্রুয়ারি ইনকোয়ারের এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে।

তবে এর আগেই রিজার্ভ চুরির পুরো নীলকশনা করা হয়েছিল। তদন্ত সংস্থার ফরেনসিক রিপোর্টের তথ্য বলছে, গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার পুরোপুরি হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজিরবিহীন রিজার্র্ভ চুরির ঘটনা জানার পরও ৪০ দিন গোপন রাখা হয়েছিল। গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত বছর ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়।

মানি লন্ডারিং, চুরি ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা এ মামলায় আসামিরা ‘অজ্ঞাতনামা’। এ অবস্থায় মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। পুলিশ সদর দফতর, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এ তদন্ত কাজে সিআইডিকে সহায়তা করছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল ও মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকেও এ মামলার তদন্তে সহযোগিতা নেয় সিআইডি।

মামলার তদন্তভার নেয়ার পর ১০ মাস ২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে তদন্তের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সেই প্রশ্ন ছিল সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ও রিজার্ভ চুরি মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা শাহ আলমের কাছে। বৃহস্পতিবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ মামলায় কাউকে সরাসরি আসামি করা হয়নি। কিন্তু কেউ না কেউ তো এর সঙ্গে জড়িত। তাদের খুঁজে বের করা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা তদন্তভার পাওয়ার পর হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করি।

তদন্তকালে দেশ-বিদেশের অনেক তদন্ত সংস্থার সাহায্য নেয়া হয়। তদন্তের এ পর্যায়ে আমরা শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তদন্তকালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬০টির মতো কম্পিউটার জব্দ করেছি।

তবে কম্পিউটারের ডিভাইস থেকে ইমেজ সংগ্রহ করার পর সেগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে দেয়া হয়েছে। কম্পিউটারের ডিভাইস থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইমেজ নেয়ার পর ইন্টারপোল ও এফবিআইয়ের এক্সপার্ট নিয়ে এ বিষয়ে আমরা কাজ করি। এ পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ এসেছে। তদন্তকালে ইন্টারপোল ছাড়াও আমরা একাধিক দেশের সাহায্য নিয়েছি। শাহ আলম বলেন, তদন্তকালে দেখা গেছে- ৫টি ভুয়া হিসাবে অর্থ গেছে।

এসব ভুয়া হিসাবের তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। হিসাবধারীদের তথ্য বের করার কাজটা বাকি আছে। যেসব ভুয়া হিসাবে অর্থ গেছে, সেগুলোর কাগজপত্র চেয়েছি। কারণ ওইসব ভুয়া হিসাবের কপি আমাদের এভিডেন্স। আমরা এরই মধ্যে জেনেছি ভুয়া হিসাবে অর্থ গেছে। আমরা ওইসব ভুয়া হিসাবধারীর ‘কেওয়াইসি’র নমুনা ও হিসাব বিবরণী চেয়েছি। এর জন্য যথাযথ চ্যানেলে যোগাযোগ করে আসছি। তিনি বলেন, ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে ভুয়া ওই হিসাবগুলো খোলা হয়েছে। এই হিসাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঢুকল, সেগুলো তুলে নেয়া হল অথচ ফিলিপাইনের ব্যাংকিং সিস্টেমে কোনো ফিল্টারিং হল না। এটা মেনে নেয়া যায় না। এ জন্য আমরা ভুয়া হিসাবধারীর বিষয়ে তথ্য পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রসঙ্গে শাহ আলম আরও বলেন, চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে আমরা ১৫ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করেছি। এ পর্যন্ত তদন্তে দেশী-বিদেশী প্রায় পুরো চক্রকে শনাক্ত করেছি। আমরা তাদের যে কোনো সময় গ্রেফতারও করতে পারি। কারণ গ্রেফতার করার মতো অবস্থা এখন আছে। তাহলে গ্রেফতার করছেন না কেন- এমন প্রশ্নে শাহ আলম বলেন, আমরা বসে নেই। তবে সমস্যা যেটা, সেটা হল- এর জন্য আরও কিছু ফিডব্যাক আমরা নিতে পারি; কারা সুবিধাভোগী তা নিশ্চিত হতে। আমরা যাদের শনাক্ত করে ফেলেছি, তারা কাজটা করেছে আমরা জানি। তবে কারা ‘বেনিফিডেট’ হয়েছে এর লিংক পেতে একটু সময় নিচ্ছি। কারণ, আসামিদের পাশাপাশি ওই লিংকটাও আমরা আদালতের সামনে তুলে ধরতে চাই। পুরো চক্র শনাক্ত হয়ে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছেন না কেন জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, চার্জশিট দিতে হলে শুধু ‘ইনটেলিজেন্স’ হলেই হবে না। পর্যাপ্ত এভিডেন্সও লাগবে। আমরা এখন এভিডেন্স সংগ্রহ করছি। শাহ আলম বলেন, চীনের ২৩ জুয়াড়ি সামান্য কমিশনের বিনিময়ে কারও না কারও হয়ে টাকা পাচারের কাজ করেছে। এই জুয়াড়িদের পাসপোর্ট নম্বর, তাদের নাম-ঠিকানা আমরা পেয়েছি। এই লেভেল পর্যন্ত গেলে আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ। যদি টেকনিক্যাল অর্থেও বলি তাতেও বলা যায়, তদন্ত শেষ। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহভাজন পুরো চক্র শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক তদন্ত শেষ করতে আরও অন্তত তিন মাস সময় লাগবে বলে আমি মনে করি। এর চেয়ে কম নয়। বরং আরও একটু বেশিও লাগতে পারে। শাহ আলম বলেন, জুয়াড়িরা কাদের জন্য কাজ করেছে সেটি শনাক্ত করা জরুরি। এ জন্য আমরা ফিলিপাইন, চীন ও শ্রীলংকার সহযোগিতা চেয়েছি। জুয়াড়িদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার লিংক আমাদের দরকার। সেটা নিয়ে কাজ করছি।

Recent Posts

Leave a Comment