১৪ দলের তালিকায় সিইসিসহ ৪ জন পরিকল্পিত না কাকতালীয়

 In জাতীয়

আওয়ামী লীগ কি শরিকদের দিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে? নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পর এ প্রশ্নটিই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন রাজনৈতিক মহলে। কারণ ৫ সদস্যের ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) চারজনই মনোনীত হয়েছেন সার্চ কমিটির কাছে জমা দেয়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের তালিকা থেকে। অবশ্য এর মধ্যে একজন কমিশনারের নাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তালিকায়ও ছিল। আর বিএনপির দেয়া তালিকা থেকে এসেছে বাকি একজনের নাম।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারি দল পরিকল্পিতভাবে তার মিত্রদের কাজে লাগিয়েছে নাকি এটা কাকতালীয় ঘটনা?

জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- কমিশন গঠনের বিষয়টিতে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। কয়েকজনের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে মনোনীত হয়েছেন তারা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা। তারা বলছেন, এটা তাদের সুচিন্তিত কর্মকৌশলের অংশ। অবশ্য সিইসির নাম প্রস্তাব করে আলোচনায় আসা গণতন্ত্রী পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাম জমা দেয়ার আগে ১৪ দলের শরিকদের কারও কারও সঙ্গে এ বিষয়ে ফোনে তাদের কথাবার্তা হয়েছে।

নতুন সিইসি কেএম নুরুল হুদার নাম ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সাম্যবাদী দলের জমা দেয়া তালিকায় ছিল বলে জানা গেছে। এছাড়া দুই কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীর নাম ছিল তরীকত ফেডারেশনের তালিকায়। গণতন্ত্রী পার্টির তালিকায় ছিল কবিতা খানম ও শাহাদৎ চৌধুরীর নাম। জাসদ (ইনু), সাম্যবাদী দল ও জাতীয় পার্টির (জেপি) তালিকায়ও ছিল রফিকুল ইসলামের নাম। এছাড়া কবিতা খানমের নাম ছিল আওয়ামী লীগ, সাম্যবাদী দল এবং ন্যাপের জমা দেয়া তালিকায়।

জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। অথচ, ১৪ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু) ও ন্যাপের তালিকা থেকে এসেছে অভিন্ন নাম।

১৪ দলের শরিকদের দেয়া তালিকা থেকে এসেছে সিইসিসহ চারজনের নাম, বিষয়টি পরিকল্পিত না কাকতালীয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, এটা প্রশ্নের উদ্রেক করে। কারণ ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়।’ একই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কয়েকজনের ব্যক্তিগত বিবেচনা ও পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে তাদের (প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনার) মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে।

মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চার নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে আপত্তি না জানালেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সম্পর্কে বিস্তর অভিযোগ এনেছে। জনতার মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথাও বলছে তারা। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির কাজ শুরুর পর বিএনপি তার মিত্র ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কয়েকটি (২-৩) নাম অভিন্ন রেখে তালিকা জমা দেয়া এবং শেষ পর্যন্ত এভাবেই সার্চ কমিটির কাছে তালিকা জমা দেয়া হয়। তবে সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে মাত্র একজনের নাম ছিল বিএনপিসহ তার মিত্রদের তালিকায়।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দল। এ দলটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া আওয়ামী লীগের বিগত সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সার্চ কমিটির কাছে জমা দেয়া তাদের তালিকা থেকে তিনজন নিয়োগ পেয়েছেন। এটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে পরিকল্পনা করে জমা দিয়েছিলেন কিনা? উত্তরে তিনি বলেন, ‘না না আওয়ামী লীগ তাদের কোনো নাম দেয়নি। কাকতালীয় হতে পারে। পরে অবশ্য বলেন, এটা বিশাল সুচিন্তিত কর্ম কৌশলের অংশ।’

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, কাকতালীয় হলে হতে পারে। তবে এ তালিকা তৈরির জন্য তারা অনেক কাজ করেন। তিনি বলেন, তালিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। সিইসি কেএম নুরুল হুদা ছাড়াও দুই কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীর নাম তাদের তালিকায় ছিল।

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের ‘ফর্মাল’ কোনো মিটিং হয়নি। তবে একটা কমন নীতি অনুসরণ করেছি। যারা সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তাদের আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। আর তালিকা জমা দেয়ার আগে ফোনে ১৪ দলের শরিক কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, কে কার নাম দিচ্ছে এসব নিয়ে।

Recent Posts

Leave a Comment