মানুষগুলোকে একত্রিত করতে পারছি না : সন্‌জীদা খাতুন

 In শিল্প-সাহিত্য

গত ৪ এপ্রিল পঁচাশি ছুঁলেন তিনি। শরীরে বয়সের ছাপ। আগের মতো দৌড়-ঝাঁপ করে সংগঠনের কাজ করতে পারেন না। সে নিয়ে খেদের অন্ত নেই। তবে মনে এখনো তারুণ্যের প্রাণোচ্ছলতা। তিনি সন্‌জীদা খাতুন। বাংলাদেশে শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত এক নাম।

বাঙালিত্ব ও সংস্কৃতি সাধনায় মৌন সাধক সন্‌জীদা খাতুন কথা বলেছেন ছায়ানটের বর্ষবরণ আয়োজনের ৫০ বছরের পথ হাঁটা নিয়ে। বলেছেন হতাশা আছে, তবে থেমে থাকতে রাজি নই। পার্থ সনজয়ের বরাত দিয়ে চলুন জেনে নিই সন্‌জীদা খাতুনের কথা।

অভিযাত্রা ৫০, পেছন ফিরে দেখা

বটমূলে বর্ষবরণ ৫০ বছরে পা রাখছে। কিন্তু আমরা প্রথম বর্ষবরণ শুরু করেছিলাম ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কুলের সঙ্গে সরু একটা জায়গায়, একটা অপূর্ব সুন্দর কৃষ্ণচূড়া গাছ, তার নিচে এবং সেটা ছিল আসলে ওই স্কুলের বর্ষপূর্তি। ছেলেমেয়েরা পাস করেছে, আমরা তাদের পুরস্কার দিতাম। ৬৩ সাল থেকে স্কুলের শুরু। ৬৪ তে আমরা প্রথম অনুষ্ঠান করি। কিছু নববর্ষের গানও ছিল। তারপর ৬৫ তে পড়ে গেল ঈদ উল আজহা। সে বছর কিছুই হলো না। তার পরের বছরও করলাম। কিন্তু সেবার বকুনি খেলাম। আমাদের এক বন্ধু বলল, ‘এসব কী হচ্ছে শুনি। এখানে আমরা স্কুলের প্রোগ্রাম দেখতে কি আসি! আমরা তো আসি নববর্ষের জন্য। নববর্ষে একটা বাণী থাকবে। নববর্ষে তোমাদের একটা বার্তা আমাদের কাছে আসবে। সেগুলো না করে এগুলো কী করছ? আর এটুকুন জায়গায় সেটা হয়?’

তখন আমাদের টনক নড়ল এবং বুঝলাম, বাস্তবিক পহেলা বৈশাখ, নববর্ষ-বাঙালির জীবনে এত বড় একটা ব্যাপার। সেটাকে যদি আমরা যথাযথভাবে সবার সামনে তুলে না ধরি এবং মানুষ যদি সেটা উপলব্ধি না করে, বাঙালিত্বের যে গৌরববোধ আমাদের ভেতরে আছে, তাহলে মুশকিল। কারণ, তখন তো আমরা সবাই জানি, আমাদের পাকিস্তানি মুসলমান বানানোর চেষ্টা হয়েছিল, সেই চেষ্টাতেই সবাই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু আমরা তো সেটা মানব না। আমরা তো বাঙালি। আগে বাঙালি, তারপর মুসলমান না হিন্দু না খ্রিস্টান-সেটা পরের কথা।

এইভাবে আমরা শুরু করলাম ৬৭ সালে। ড. নওয়াজেশ আহমেদ রমনায় জায়গাটা দেখিয়ে আমাদের বললেন, এখানটায় করলে ভালো হবে। বন্ধু মানুষ, তিনি সেটা দেখিয়ে দেওয়ার পর আমরা শুরু করলাম পহেলা বৈশাখ উদযাপন। সেই ৬৭ সাল থেকে ধরলে ৫০ বছরই হচ্ছে। আমরা বলছি বটমূলে বর্ষবরণের ৫০।

অশ্বত্থ না হয়ে কেন বটমূল

গাছটা বটগাছ নয়। অশ্বত্থ গাছ। যদি বলি অশ্বত্থ তলায় অনুষ্ঠান করছি, তাহলে শুনতে মনে হয় গ্রামের হাট। যদি বলি বটতলায় তাতেও সেই একই অবস্থা হয়। এই জন্য আমরা এ কথা না বলে আমরা বটমূল বলেছিলাম। বটমূল বলবার একটা যুক্তিও খাঁড়া করেছিলাম। সেটা হচ্ছে, অভিধান খুললে দেখা যাবে, পঞ্চবটী, পঞ্চ বটের সমাহারই তো। সেই সমাহারটা বট, অশ্বত্থ, বিল্ব, আমলকি ও অশোকের। যদি পঞ্চবটীতে অশ্বত্থ থাকে, তবে এটাকে বটমূল বললে দোষটা কোথায়?

অনুষ্ঠান ঘিরে পান্তা-ইলিশের বিড়ম্বনা

বটমূলের কাছ ঘেষে আমাদের অনুষ্ঠান এবং দর্শকদের প্রায় ঠেলে অনেক দোকান বসত। সেই দোকানগুলোতে পান্তা ইলিশ খাওয়ানো হতো। বিক্রি করা হতো। এই ব্যবসাটা করতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ব্যবসাটা আমাদের ঘাড়ে দোষ হিসেবে এসেছে। আমরা নাকি গ্রামের মানুষকে বিদ্রূপ করতে এসব করি। আমরা এটা করিওনি এবং এই বিদ্রূপ করবার কোনো বাসনাও আমাদের নেই। আমরা সেটা করব না। কারণ গ্রামের মানুষের নববর্ষ কিংবা হালখাতার নববর্ষ আর শহরের এই নববর্ষের একটা পার্থক্য আছে। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা যে পয়লা বৈশাখ করছি, এটা বাঙালি জাতির জাগরণের ব্যাপার। আমরা সেটাকে বড় করে তুলে ধরেছি। আমাদের স্বাধীকার চেতনাকে আমরা মানুষের কাছে জানিয়েছি। এগুলো কিন্তু ছোট কথা নয় এবং এগুলোর সঙ্গে হালখাতা এবং গ্রামের যে মেলা হয় নববর্ষ উপলক্ষে তার সঙ্গে কোনো মিল নেই। এটা একেবারেই নতুন একটা বিষয়। যারা বোঝে না, তারাই বিদ্রূপ করে। অনেকেই লিখেছে, পোস্ট এডিটরিয়াল ছেপেছে, এরা সব ঢং করে। এই কথাগুলো আমাদের শুনতে হয়েছে। কিন্তু এসব কথায় আমরা কান দেইনি এবং যেটা বুঝেছি, ভেতরে দোকান বসলে দর্শকদের অসুবিধা হচ্ছে। দোকান বসলে ওখানে যে বাজারটা তৈরি হচ্ছে, সেই বাজার আমাদের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করছে। সেজন্য আমরা যেটা করেছিলাম, সরকারের কাছে গিয়ে বলেছিলাম যে, ভেতরের দোকান বসার অনুমতি কিছুতেই দেওয়া যাবে না। সরকার মেনে নিয়েছিল এবং তারপর বাইরে চলে গেল দোকান। বাইরে চলে গেল পান্তা ইলিশ। আর একটা প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে অনুষ্ঠান করত। তারা ভেতরে নিজেদের জায়গা করে সেখানে পান্তা ইলিশ করত। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল না। পান্তা ইলিশ নববর্ষে খায়, এই কথা আমরা কখনো শুনিনি।

মাটিটা খুব একটা তৈরি করতে পারিনি!

আমি জানি, যতটা হওয়ার কথা তা হয়নি। আমি আগেও বলেছিলাম, বাঙালিত্ব কাকে বলে, সেটা বেশির ভাগ মানুষই জানে না এবং বাঙালিত্ব বুঝবার চেষ্টাও কারো নেই। এজন্যই গালে পতাকা এঁকে, বাউলের একতারা এঁকে হুল্লোর করে তারা মনে করে, পহেলা বৈশাখের আনন্দ করছি, বাঙালি হচ্ছি। ওর সঙ্গেই বাঙালিত্বের যোগ কোথায়? আসলে বাঙালিত্বের ধারণাটা আমাদের নেই। আমি খুব দুঃখের সঙ্গে বলব, রাষ্ট্রীয়ভাবেও নেই, আমাদের নিজেদের ভেতরও সবার নেই। তবে আমি মনে করি, আমরা হতাশ হব না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের করতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে গঠনমূলক কাজ করা। সংস্কৃতি চর্চায় মানুষের মনের উৎকর্ষ সাধন আমাদের উদ্দেশ্য এবং আমরা মনে করি, মনের উৎকর্ষ সাধন হলে মানুষ কাউকে বধ করতে আসবে না। মনটা যদি তৈরি থাকে এবং মনের সঙ্গে সংস্কৃতির সংযোগ হয়, তাহলে মানুষ বদলে যায়।

মাটিটা তৈরি হয়নি। কারণ, মানুষ একটু হুজুগ প্রিয়। কিন্তু বাঙালিত্ব কাকে বলে, সেটা কখনো ভেবে দেখে না। আমি জানি, অনেকে গর্ব করে বলবে, ফিউশন মিউজিক, ওটা তো আমরাই করেছি। কিন্তু ফিউশন মিউজিকে আমরা যাব কেন? আগে আমাদের বাঙালি হতে হবে। তারপরই না আমার ফিউশন। আমাদের জানতে হবে, আমাদের সংস্কৃতিটা কী? বাইরের সংস্কৃতিটা কী? তখন আমি দুটোর মধ্যে যদি কোন মিল করতে চাই, সেটা আমি দেখব। কিন্তু আগে আমাকে বাঙালি হতে হবে। এই কথাটা আমি বলেছি। যেমনটা বলেছেন গুরু সদয় দত্ত। রবীন্দ্রনাথও বারবার বলেছেন। এবং এটাই আদর্শ ধরে আমরা এগুতে চাই।

তবে ইদানীং যেটা বুঝি, কেবল বলে, কেবল গান গেয়ে কিছু হয় না। ২০০১ সালে যখন বোমা বিস্ফোরণ হলো তখন আমরা বুঝেছিলাম, শিক্ষার প্রয়োজন আছে। আমাদের দেশটা শিক্ষা বঞ্চিত। এবং সব কাজে যদি রাষ্ট্রের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি তাহলে আমরা ব্যর্থ হবো। এগুলো আমাদের নিজেদের দায়িত্ব বটেই এবং সেই শিক্ষার কতটুকু আমরা করতে পারি? একটা দুইটা স্কুল করতে পারি। কিন্তু শহরের মধ্যে স্কুল করে গ্রামের কোনো উপকার করতে পারছি না! এজন্য আজকাল মনে হয়, ছোট ছোট দলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কথাবার্তা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মানবতা, ধর্মের নামে আমরা যে অন্যায়গুলো করছি সেই সব কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাক। আমাদের সাধ্য নেই যে, আমরা সবাইকে লেখাপড়া শেখাব। সেটা আমরা পারব না। কিন্তু সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে কাজ করার অনেক সুবিধা আছে। সাধারণ মানুষের কাছে সংগীতের কিন্তু একটা অন্যমূল্য আছে।এটা আমরা জানি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এক ভদ্রলোক ছিলেন। তার নাম মোহাম্মদ শাহ আলম বাঙালি। তিনি সবসময় দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গান তৈরি করতেন। গানগুলো গাইতেন রেডিওতে।

আমাদের কয়েকজন বুদ্ধিজীবী একবার রাঙ্গুনিয়াতে গিয়ে মঞ্চে বক্তৃতা করল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা, অর্থনৈতিক নানা নিয়ম কানুনের কথা। সেই বক্তৃতার সময় অসংখ্য মানুষ সামনে বসে ছিল। কিন্তু তাদের চোখে আলো নেই। সবাই চুপ করে আছে। কিন্তু কিছুই শুনছে না। চোখে আলো জ্বলছে না। সেই সময় ওদের বক্তৃতা শেষে মোহাম্মদ শাহ বাঙালি দাঁড়ালেন এবং কী ক্ষমতা তার, যা কিছু বলা হয়েছে মঞ্চে বক্তৃতায়, সেগুলো তিনি গান গেয়ে বুঝিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল, তারা বুঝল, কী বলা হয়েছে এতক্ষণ। এই যে সুরের সম্মোহন, সেটাই আসল। আর একটি কথা। আমাদের ভাষায় কথা বললে গ্রামের মানুষ বোঝে না। আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি। সেই জন্য রাঙ্গুনিয়ার বাঙালি যখন এইসব তত্ত্ব তুলে ধরল, তখন কিন্তু তারা সব বুঝতে পারে। এজন্য বলি, আমরা যদি ঐভাবে কিছু করতে পারতাম।

নজরুলের একটা গান আছে ‘ক্ষমা করো হযরত’, কবিতা আছে, গানও আছে। ‘তুমি আমাদের পথ দেখিয়েছিলে, আমরা সে পথে চলিনি, আমরা অন্যায় করেছি। তুমি বিধর্মীকে সেবা দিয়ে তার মনকে আকর্ষণ করেছ। আমরা বিধর্মীর কথা ভাবি না। আমরা ছুটি মন্দির ভাঙতে। এই যে আমাদের মানসিকতা, এই শিক্ষা কিন্তু তুমি দিয়ে যাওনি। ক্ষমা করো হযরত। এজন্য এখন বুঝি তোমার রহমত আমাদের ওপর বর্ষিত হচ্ছে না।’

রবীন্দ্রনাথ নয়, নজরুলের এসব কথা তুলে ধরা দরকার গ্রামে গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের অনেক ভালো ভালো কথা আছে। কিন্তু মানুষ নেবে কোনগুলো?

আমরা তো একথা জানি, এখনো শহরের বাইরে, মফস্বল যাকে বলা হয়, সেখানে ছেলেমেয়েরা বলে, নজরুল গরিব ছিল, রবীন্দ্রনাথের টাকা ছিল। নজরুলের কবিতাগুলো রবীন্দ্রনাথ কিনে নিতেন এবং নিজের নামে ছাপতেন। এটাও শুনেছি, লালনের গানগুলো গরুর গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে নিজের নামে ছেপেছেন।

এখন লালনকে তো মুসলমান ধরে নিয়েই বলছে, নজরুলকে তো মুসলমান ধরে নিয়েই বলছে। এই যে একটা মুসলমান বাতিক আমাদের ভেতরে আছে, মানুষ বাতিকটা নেই। এটা কিন্তু সর্বনাশ করছে এবং সেজন্য আমাদের একটু কৌশল করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ বলবার দরকার নেই। নজরুল বলব, লালন বলব। লালনও তো বলেছেন, ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’। এই যে কথাগুলো মানুষ শোনে কিন্তু। এগুলো যদি আমরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারি তাহলে মনে হয়, খানিকটা কাজ এগুবে। এই যে পিছিয়ে পড়ে আছি, তার কারণ, আমরা কেবল শহরে পড়ে আছি।

কেবল শহরে বসে গান গাইলে হবে না

আমরা তো টেলিভিশনের জন্য এটা করিনি। আমরা করেছি আমাদের জন্য। আমাদের অন্তরের তাগিদে আমরা করেছি। এবং সেই তাগিদ নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আমাদের অন্য কিছু ভেবে লাভ নেই। আমাদের গঠনমূলক কাজ করতে হবে। সেই গঠনমূলক কাজের প্রকৃতিও একটু বদলাতে হবে। কেবল শহরে বসে গান গাইলে হবে না।

আমরা চেষ্টা করছি, পাঠচক্র করে একটু লেখাপড়া করাতে মানুষকে। রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদেও হচ্ছে সেটা। ছায়ানটেও আছে এবং সেখান থেকে আমরা যদি পারি কিছু ছোট ছোট দল তৈরি করে বাইরে যেতে। আমাদের তরুণ তরুণীরা যাবে। তাহলে হয়তো একটু ভালো কাজ হবে। কারণ, সংস্কৃতির বাহন মানুষের মনকে অনেক বেশি স্পর্শ করে। সেদিকটায় আমাদের এখন যাওয়া উচিত বলে অনুভব করি। কিন্তু জানি না এতে কতটা সফল হব। কারণ, দীর্ঘকাল ধরে দেখে আসছি রাজনীতি যারা করে, যারা মানুষের জন্য হায় জনগণ, হায় জনগণ করে তারা আত্ম উন্নয়ন ছাড়া কিছুই ভাবে না। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখন থেকেই দেখেছি, অত্যন্ত প্রগতিশীল কাজ যারা করে, তারা চকচকে জুতো পরে, জামা প্যান্ট সব ধোলাই করা, চমৎকার। কিন্তু গ্রাম থেকে যে ছেলেটি এসেছে, তাকে কাছে টানে না। নাক কুঁচকে তার দিকে তাকায়। এটা চিরকাল দেখে আসছি। আমরা মানুষকে আপন করতে জানি না। দরিদ্র আর সাধারণ মানুষকে কাছে টানতে জানি না এবং এই করতে গিয়ে মানুষকে ঠেলে দিচ্ছি। এদিকেও সচেতন হওয়া দরকার। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। আমি ৫২-এর পর ইউনিভার্সিটিতে ঢুকলাম। সে সময় যারা ইসলামী রাজনীতি করত, ইসলামী ছাত্রসংঘ করত, তারা সাধারণ ছাত্রদের টিউশনি দিত, থাকার ব্যবস্থা করে দিত এবং এই করেই আজ তারা সর্বত্র ছড়িয়েছে।এই জিনিসটা কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না। এটা মস্ত বড় ব্যাপার কিন্তু। আমরা নিজেদের বড় শিক্ষিত, সংস্কৃতিমনা মনে করি। কিন্তু তুমি আমি শিক্ষিত বা সংস্কৃতিমনা হলেই কি দেশ জাগবে? দেশ কি আলোকিত হবে?

আলো আমার আলো…

আমি এ কথা বলব না যে, দেশে মানুষ নেই। মানুষ আছে। কিন্তু সেই মানুষগুলোকে আমরা একত্রিত করতে পারছি না। আমরা কীভাবে এগোব সেটা ঠিক করতে পারছি না।

২০০১ সালের পর প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে আমরা বক্তব্য দিয়েছি এবং পুরো অনুষ্ঠানের মধ্যে একটা বক্তব্য থেকেছে। এটা সচেতনভাবেই করেছি। পাকিস্তানি আমলে যা না বলে কিছু করতে পেরেছি, এ আমলে বলে সেটা কতটুকু হয়েছে আমি সন্দিগ্ধ। আমি আশাবাদী নই, তা নয়। আমি বলব, কাজ কর। কাজ করে সত্যিকারের পথটা ধরে চল। না হলে কিছুই হবে না। শুধু ফ্যাশন হবে!

Recent Posts

Leave a Comment