সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের যোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান

 In জাতীয়

সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থায়নের যোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার সৌদি আরবের রাজধানীতে কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে চাই।’

একই সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটি সকলের জন্য বিজয়-বিজয় পরিস্থিতি তৈরি করবে।’

অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের বাদশা ও দু’টি বড় মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিশ্বের শান্তির জন্য কেবল বড় হুমকিই নয়, এটি উন্নয়ন ও মানব সভ্যতার জন্যও হুমকি। যেকোনো দেশ, ধর্ম ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সকল প্রকার চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সর্বদাই যেকোনো ধরনের একক বা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও উৎসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

ইসলামকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম, বিশ্বাস বা মৌলিক পরিচয় নেই, তারা যেকোনো ধর্ম থেকে আসুক না কেন।’

ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কখনো সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না এবং আমরা যেকোনো ধরনের চরমপন্থা ও সহিংসতায় ধর্মকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার্য মনে করি না।

শেখ হাসিনা বলেন, ইরাক ও সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অভিযান এবং সদস্য সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনা অনুসরণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য একটি পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বানও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা আশঙ্কা করে বলেন, বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকটের কারণে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। কারণ, শরণার্থী সংকট সন্ত্রাস ও সহিংসতার একটি সম্ভাবনাময় উৎসে পরিণত হতে পারে।

তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা তিন বছরের শিশু আয়লানের লাশের ছবি অথবা আলেপ্পোতে ওমরানের রক্তাক্ত মরদেহ প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। একজন মা হিসেবে আমাকেও এ ছবি কঠিনভাবে নাড়া দিয়েছে।

শরণার্থীদের বেদনা আমি বুঝি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমিও শরণার্থী ছিলাম।

এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের বন্দিত্ব এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের শাহাদাত বরণের পর প্রবাস জীবনের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৬ বছর আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে শরণার্থী ছিলাম। তাই শরণার্থীদের বেদনার বাস্তবতা আমি বুঝতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি ও বঞ্চনা নতুন প্রজন্মের মনে অন্যায়-অবিচারের প্রতি ঘৃণার মনোভাবের সৃষ্টি হয়। তাই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুত এবং অস্ত্রসহ যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা দেশে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে মোকাবিলা করছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কার্যকরভাবে দেশে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদীদের মোকাবিলা করছি। বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব গোষ্ঠী কোনো কোনো মহল থেকে সমর্থন পেয়ে আসছিল। পাশাপাশি সরকার এদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সমাজের সকল শ্রেণি বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ছাত্র এবং দেশব্যাপী মসজিদগুলোর ইমামদের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি বাদশা সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা রিয়াদে ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার জন্যও বাদশা সালমানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পেরে সন্তুষ্ট। বাসস।

Recent Posts

Leave a Comment