আম কাহিনী

 In খোলা কলাম
লিয়াকত হোসেন খোকন    |
আমাদের দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বলা হয় ‘আমের নগরী’। আমের ঐতিহ্য আছে বটে, তবে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী আমে নানারকম মেডিসিন-ফরমালিন ব্যবহার করে একে তরতাজা করে রাখে। এছাড়া কার্বাইডে পাকানো হয় আম, যা খেলে নানারকম জটিল রোগ দেখা দেয় মানবদেহে। আম সবাই খেতে চায়- মেডিসিন দেয়া, কী দেয়া না এটা কেউ ভাবেন না। আম শুধুই গিলছি আমরা। আম যে খেতেই হবে। তবুও বাজারে মেডিসিন দেয়া ভেজাল আমের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অভিযান চোখে পড়ে না। বিভিন্ন স্থানে লেখা থাকে- ‘এখানে ফরমালিনমুক্ত আম পাওয়া যায়’। কিন্তু কতটা ভেজালমুক্ত তা কেইবা জানে!
যেহেতু ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান নেই- এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা মেডিসিন দেয়া আম বিক্রি করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমের অতীত ছিল বড়ই সমৃদ্ধ। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আমের সম্পর্ক অনেকটা আমে-দুধে মাখামাখির মতো। যদিও আম মৈথিলি শব্দ। আমের নাম কৃষ্ণের শতনামকেও ছাড়িয়ে যাবে। বাল্মীকি আমকে ‘চুত’ বলেছেন, কালিদাস ‘আম্র’ আর বাৎসায়ন বলেছেন ‘সহকার’। সংস্কৃত ভাষায় আমকে আম্র, বাংলায় আম, তামিলে মানকে এবং ইংরেজিতে ম্যাঙ্গো বলা হয়। বাংলার প্রাচীন গ্রন্থ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে এই আম আমবু, ভারতচন্দে আম, ঈশ্বর গুপ্ত’য় আঁব, মাইকেলে রসাল নামে অভিহিত হয়েছে।
সম্রাট বাবর আমের প্রতি দুর্বল ছিলেন। বিহারের দ্বারভাঙার কাছে ‘লাখবাগ’ বাগানে তিনি এক লাখ আম গাছ লাগিয়েছিলেন। আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে নানা প্রজাতির আমের উল্লেখ আছে। মুর্শিদাবাদের নবাবদেরও আম্প্রপ্রীতির পরিচয় মেলে। ‘কোহীতুর’ মুর্শিদাবাদের এক দুর্লভ প্রজাতির আম। ওখানে এখন এ আম যৎসামান্য ফলে। কিন্তু স্বাদ লা-জবাব। লালবাগে একদা একজনের বাগানে ছিল জগৎবিখ্যাত আম ‘আলফানসো’। ফজলি নামে এক ব্যক্তির উঠানে এক আমের গাছ ছিল, যা মালদার কালেক্টর আবিষ্কার করেন। পরে তিনি এই আম খেয়ে মুগ্ধ হয়ে এর নাম দেন ‘ফজলি’। কথিত আছে, ল্যাংড়া ফকিরের আস্তানায় এক ধরনের আম ফলতো বলে এর নাম হয় ল্যাংড়া আম। সিপাহি বিদ্রোহের আগে ডেভিস সাহেব কলমের সাহায্যে ‘বোম্বাই’ আমের উদ্ভাবন করেন। মিথিলার জমিদার কৃষ্ণদাস ঠাকুরের বাগানের বিখ্যাত আম ‘কিষানভোগ’। এছাড়া নানা আমের মধ্যে গোলাপখাস, গোপালভোগ, গঙ্গাসাগর, হিমসাগর ইত্যাদিও বেশ সুস্বাদু। কিন্তু বর্তমানে আমের এত সংকর প্রজাতি যে কোনটা আসল কোনটা নকল, কোনটা মিঠা, কোনটা টক- বোঝা বড় দায়।
লিয়াকত হোসেন খোকন : প্রাবন্ধিক, মিরপুর, ঢাকা
Recent Posts

Leave a Comment