সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে যা দেখেছি

 In দেশের বাইরে

 

শিলিগুড়ি থেকে টাটা সুমো জিপে চড়ে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে যখন পৌঁছলাম রাত তখন দশটা, বিকাল চারটায় জিপে উঠেছি। মোট দশজন যাত্রী নিয়ে উঠতে শুরু করল ওপরের দিকে। পাহাড়ের দু’পাশে অসংখ্য পারিজাত লাল আলো ছড়াচ্ছে। আর বেগুনি কি ফুল যেন পাহাড়কে øিগ্ধতায় ভরে রেখেছে। কিছু ফুল আবার কৃষ্ণচূড়ার মতো তবে রং বেগুনি। আমি নাম দিলাম বেগুনি কৃষ্ণচূড়া। অসংখ্য রডোডেনড্রন ফুল গাছ। ফুল ফুটে লাল হয়ে আছে। পথের বাঁকে বাঁকে বাজার।
নেপাল, চীন আর ভুটান ঘিরে রেখেছে যে রাজ্যটিকে তার নাম সিকিম সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫৪৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ভারত বর্ষের দার্জিলিং জেলার ঠিক উত্তরে কাঞ্চন জংঘার কোলে ছোট্ট এই রাজ্যটির অবস্থান। সিকিমের পেলিং থেকে হিমালয় শৃঙ্গকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে দেখা যায়। পেলিংয়ে লোকজন কম বলে খুব পরিষ্কার ও নিরিবিলি। সিকিমীয় ভাষায় সিকিম অর্থ হল নতুন জায়গা আর লেপচারা বলেন স্বর্গ। এখানে প্রধানত নেপালি, ভুটিয়া, লেপচারা বাস করে।

১৯৭৫ সালে সিকিম ভারতের ২২তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। শীতকালে ০.৪৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তাপমাত্রা নেমে আসে। আর তখন সাঙ্গু লেকের পানি নিরেট বরফ হয়ে যায়। লোকজন চমড়ি গাই-এর পিঠে চড়ে লেকের জমাট বরফের ওপর দিয়ে চলাচল করে। আর শীত শেষে গ্রীষ্মে নানা জাতের, নানা বর্ণের ফুলে ভরে যায় পাহাড় আর বনভূমি।

শিলিগুড়ি থেকে টাটা সুমো জিপে চড়ে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে যখন পৌঁছলাম রাত তখন দশটা, বিকাল চারটায় জিপে উঠেছি। মোট দশ জন যাত্রী নিয়ে উঠতে শুরু করল উপরের দিকে। পাহাড়ের দু’পাশে অসংখ্য পারিজাত লাল আলো ছড়াচ্ছে। আর বেগুনি কি ফুল যেন পাহাড়কে øিগ্ধতায় ভরে রেখেছে। কিছু ফুল আবার কৃষ্ণচূড়ার মতো তবে রং বেগুনি। আমি নাম দিলাম বেগুনি কৃষ্ণচূড়া। অসংখ্য রডোডেনড্রন ফুল গাছ। ফুল ফুটে লাল হয়ে আছে। পথের বাঁকে বাঁকে বাজার। অর্থাৎ কয়েকটা কপি আর গোটাকয় গাজর কিছু বীন নিয়ে বসে আছে কোনো পসারী। এমনি সব দেখতে দেখতে চলেছি। হঠাৎ করেই সন্ধ্যা এসে ঘিরে ধরল চারিদিক। আর পাহাড়ে সন্ধ্যা মানেই গাঢ় রাত্রি। একটু গিয়েই জিপ থেমে গেল। সামনে বিশাল লাইন। ঔৎসুক্য কি হল জানতে। পাহাড়ি বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই এই বিপত্তি। ওকে না সরানো পর্যন্ত বসে থাকতে হবে। বেশ ভয় ভয় করতে লাগল। তবে প্রতিটি গাড়িই ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কারও মধ্যে কোনো অসহিষ্ণুতা নেই। বেশ দ্রুতই পরিস্থিতি আয়ত্তে এলো।

শুরু হল ফের যাত্রা। যাচ্ছি আর যাচ্ছি পথ যেন আর ফুরায় না। এর মধ্যে পাহাড়ি বৃষ্টি। এপ্রিলের ২য় সপ্তাহ, ঢাকাতে প্রচুর গরম শিলিগুড়িও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও দার্জিলিংয়ে বেশ ঠাণ্ডা ছিল।

রাত্রি যখন দশটা তখন আমাদের জিপ এসে থামল গ্যাংটক বাসস্টপে। তখন আবার বৃষ্টি পড়ছে। মাঝে বৃষ্টি থেমেছিল। জিপ থেকে বের হতেই ঠাণ্ডা যেন চারদিক থেকে কামড়ে ধরল। এতক্ষণ বুঝিনি বাইরে কি প্রচণ্ড শীত। ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল। দাঁতে দাঁতে বাড়ি লাগার অবস্থা। ওখানেই স্যুটকেস খুলে তাড়াতাড়ি গরম কাপড় গায়ে জড়ালাম। তারপর হোটেল হাংরি জ্যাকে উঠলাম।

পরদিন সাঙ্গু লেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা। তখন সকাল ৮টা বাজে কনডাকটেড ট্যুরের জিপে উঠলাম। মোট দশজন বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ। জিপ চলছে। পথের দু’ধারে গাছপালা। পাইন, ফার আর ঝাউ। এদিকে সিলভার ফার বেশ দেখা যাচ্ছে। কোথাও ছোট ছোট দোকান পাট। শীতের কোনো দেখা নেই। মনে হচ্ছে কাল রাতে হঠাৎই শীত এসেছিল আবার চলে গেছে। এক জায়গায় অনেক দোকান, কিছুটা বাজারের মতো। ওখানে দাঁড়িয়ে মোমো আর চা খেলাম একটা টুপি কিনলাম, আবার চলছে জিপ। দু’পাশে পাহাড়। লাল টালির ঘর। হঠাৎ যেন পাহাড়ের রং বদলে গেল। সাদা ফোম দিয়ে কে যেন পাহাড় ঢেকে দিয়েছে। ভাবলাম কোনো কেমিক্যাল দিয়ে পাহাড় সাদা করেছে নাকি? কারণ একটু আগেই সেনাবাহিনীর ক্যাম্প দেখেছি তো। আর একটু সামনে বাড়তেই দেখি দু’ধারের পাহাড় বরফে সাদা তাতে সূর্যের আলো ঝলমল করছে। কিছু ছেলেমেয়ে স্কি করছে বরফের মধ্যে। ড্রাইভার জানাল মাত্র দশদিন হল এ রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। দশদিন আগেও বরফে রাস্তা বন্ধ ছিল। বরফঢাকা পাহাড় দেখে আমার হৃৎপিণ্ড বন্ধ হওয়ার অবস্থা।

গ্যাংটক থেকে ৩৮ কিমি. দূরে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩৭৮০ মিটার উচ্চতায় সাঙ্গু লেকে পৌঁছলাম অবশেষে। সাঙ্গু লেকের চার ধারে বরফ আর বরফ মাঝখানে পানি টল টল করছে। লেকের ওপারে বরফে ঢাকা পাহাড়ে যেতে হলে গামবুট, লং কোট লাগবে। আর ইয়াক বা চমড়ি গাই লাগবে। এখানে এ সবই ভাড়া পাওয়া যায়। দেখলাম আমি যে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যথারীতি শীতবস্ত্র ভাড়া করে একটা চমড়ি গাইয়ের পিঠে চড়লাম। কিন্তু সে কি বুঝল কে জানে। শুধু পানির দিকেই যেতে চায়। তারপরও গেলাম বরফ ভ্রমণে। এখানে গ্রীষ্মকালে প্রচুর নীল আর হলুদ পপি ফোটে। এখন বরফে ঢাকা পুরো এলাকা।

Recent Posts

Leave a Comment