সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

 In জাতীয়, লিড নিউজ, শীর্ষ খবর
অস্ট্রেলিয়া : ২৭৭/৯ ও ইংল্যান্ড : ২৪০/৪ , ফল : ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ইংল্যান্ড ৪০ রানে জয়ী

বেন স্টোকসের হার না মানা দুরন্ত শতকই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে বাজিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিদায় ঘণ্টা। ইংল্যান্ডের জয়ে ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে বাংলাদেশ -ক্রিকইনফো
জিতল ইংল্যান্ড, হারল অস্ট্রেলিয়া। আর উৎসব করল বাংলাদেশ! আগেরদিন কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ে নিজেদের কাজটা সেরে রেখেছিলেন মাশরাফিরা। কাল এজবাস্টনে বৃষ্টিভেজা ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৪০ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় সমীকরণটা মিলিয়ে দিল ইংল্যান্ড। স্বাগতিকদের সঙ্গী হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে চলে গেল বাংলাদেশ। গত তিন বছরে খোলনলচে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরবগাথায় যুক্ত হল আরেকটি নতুন অধ্যায়। আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে এই প্রথম শেষ চারে পা রাখল বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর এই অর্জন হয়ে থাকবে ইতিহাসের বাঁকবদলের আরেকটি মোড়। ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফিরেই গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্টকে বিদায় করে সেমিফাইনালে উঠে সবাইকে চমকে দিল বাংলাদেশ। গত বিশ্বকাপে যাদের বিদায় করে শেষ আট নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ, এবার সেই ইংল্যান্ডের জয়েই নিশ্চিত হল আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে নিজেদের সর্বোচ্চ সাফল্য। আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা ইংল্যান্ড টানা তিন জয়ে হয়েছে গ্রুপসেরা। তিন ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। আগামী বৃহস্পতিবার এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এখনও ঠিক হয়নি।

এ-গ্রুপের শেষ ম্যাচে সমীকরণটা এমন ছিল যে, ইংল্যান্ড জিতলে বা ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত মাশরাফিদের। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু বাঁচা-মরার ম্যাচে ইংল্যান্ডের সঙ্গে পেরে উঠল না অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে দারুণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ২৭৭ রানে বেঁধে ফেলে ইংল্যান্ড। পরে স্টার্ক ও হ্যাজলউডের তোপের মুখে মাত্র ৩৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়লেও পথ হারায়নি স্বাগতিকরা। আগেরদিন কিউইদের বিপক্ষে শুরুর বিপর্যয় সামলে ২২৪ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে বাংলাদেশের মহাকাব্যিক জয়ের যে অবদান রেখেছিলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেটি করলেন ইয়ন মরগ্যান ও বেন স্টোকস। চতুর্থ উইকেটে ১৫৭ বলে ১৫৯ রানের জুটি গড়ে এ দু’জনই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ৮১ বলে ৮৭ করে মরগ্যান রানআউটে কাটা পড়লেও স্টোকস তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে শতক। ৩৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ইংলিশরা যখন ব্যাটিং বিপর্যয়ে, তখন প্রথমদফা বৃষ্টিতে আধাঘণ্টা বন্ধ ছিল খেলা। আবার যখন বৃষ্টি আসে ৪০.২ ওভারে চার উইকেটে ইংল্যান্ডের স্কোর ২৪০। ইংল্যান্ডের তখন দরকার ৫৮ বলে ৩৮ রান। পরে আর খেলা সম্ভব না হওয়ায় বৃষ্টি-আইনে ৪০ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে। ম্যাচসেরা স্টোকস ১০৯ বলে ১০২ ও জস বাটলার ২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। মেঘলা দিনে ইংলিশদের ঝলমলে ব্যাটিং উৎসবের উপলক্ষ এনে দেয় বাংলাদেশকে।

বাঁচা-মরার শেষ ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া শুরুটা দারুণ করেছিল। অ্যারন ফিঞ্চ (৬৮) ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের (৫৬) ফিফটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ যখন পুরোপুরি অস্ট্রেলিয়ার হাতে তখনই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। মার্ক উড ও আদিল রশিদের যৌথ আক্রমণে মাত্র ১৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে কার্যত একাই দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেন ট্রাভিস হেড। তার অপরাজিত ৭১ রানের সুবাদেই শেষ পর্যন্ত নয় উইকেটে ২৭৭ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে অস্ট্রেলিয়া। শেষ উইকেটে জস হ্যাজলউডকে নিয়ে ২০ বলে ৩৩ রান যোগ করেন হেড। তার ৬৪ বলের ইনিংসে রয়েছে পাঁচটি চার ও দুটি ছয়ের মার। শেষদিকে হেড দাঁড়িয়ে না গেলে ২৫৪ রানে নয় উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিতভাবেই অলআউট হতো। ইংল্যান্ডের পক্ষে সমান চারটি করে উইকেট নিয়েছেন পেসার মার্ক উড ও স্পিনার আদিল রশিদ।

অস্ট্রেলিয়ার ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে অষ্টম ওভারে। ২৫ বলে ২১ করে উডের প্রথম শিকারে পরিণত হন ওয়ার্নার। দ্বিতীয় উইকেটে ৯৬ রানের জুটি গড়ে সেই ধাক্কাটা ভালোভাবেই সামাল দিয়েছিলেন ফিঞ্চ ও স্মিথ। ২৩তম ওভারে ৬৪ বলে ৬৮ করে ফিঞ্চ বিদায় নেয়ার পরও চালকের আসনে ছিল অস্ট্রেলিয়া। হেনরিকসকে (১৭) বেশিক্ষণ টিকতে দেননি রশিদ। ৩৩তম ওভারে উডের দ্বিতীয় শিকার হয়ে স্মিথ ফেরার পরও অস্ট্রেলিয়ার রান তোলার গতি কমেনি। পঞ্চম উইকেটে হেড ও ম্যাক্সওয়েল ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলকে কক্ষপথেই রেখেছিলেন। কিন্তু ৪৩তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলের বিদায়ের পরই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। এ সময় ১৫ রানে পাঁচ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ছয় রানে যার তিনটি নেন রশিদ। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে রাখা হেড অলআউটের লজ্জা থেকে বাঁচিয়ে দেন দলকে। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তিন ম্যাচে পাওয়া দুই পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হল স্মিথদের।

Recent Posts

Leave a Comment