In জাতীয়
ঈদে যাত্রী বহনে কতটা প্রস্তুত সরকারি সংস্থা
আসন্ন ঈদুল ফিতরে সড়কপথে ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার ঘরমুখো যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) ৪৭৫টি বাস রাস্তায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব বাসে দৈনিক ২৫-২৭ হাজার যাত্রী ঢাকা ছাড়তে পারবেন।

নৌপথে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত প্রতিদিন দুটি জাহাজে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার যাত্রী বহন করতে পারবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

সংস্থা দুটির হিসাবে ঈদে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী যাত্রীদের ২ থেকে ৩ শতাংশ বহনের সক্ষমতা রয়েছে।

এদিকে সড়ক ও মহাসড়কগুলোর অবস্থা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভালো হলেও ঢাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার পথগুলো নানা সমস্যাজর্জরিত। মহাসড়কের কোথাও কোথাও উন্নয়ন কার্র্যক্রম চলছে।

এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অবস্থাও ভালো নয়। এর ফলে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যবেক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন- আসন্ন ঈদে দৈনিক লাখ লাখ মানুষের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে কতটা প্রস্তুত সরকারি সংস্থাগুলো।

সব মিলিয়ে সড়ক ও নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীদের বেসরকারি বাস ও লঞ্চ সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যাত্রীচাপ বেশি থাকায় এবারও টিকিট কালোবাজারি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যানবাহন সংকট, বাস-লঞ্চে ওভারলোডিং, লক্কড়ঝক্কড় বাস ও লঞ্চ সার্ভিসের ভোগান্তির আশঙ্কা করছে পর্যবেক্ষক মহল।

তবে আসন্ন ঈদে ছুটি দীর্ঘ হওয়াতে গতবারের তুলনায় এবার একই দিনে গণপরিবহনের ওপর চাপ কম হবে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অন্য সময়ে ঈদের দুই-তিন দিন আগ থেকে গণপরিবহনে মানুষের স্রোত নামে। এবার ২২ জুন থেকে ৪-৫ দিন ধরে বাড়ি ফিরবেন নগরবাসী।

সরকারি সংস্থার সামর্থ্যরে বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান  বলেন, সংস্থার যে সামর্থ্য আছে, তার সর্বোচ্চ দিয়ে যাত্রীসেবায় নিয়োজিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকা থেকে ৪৭৫টি বাস ছাড়া হবে। এছাড়া আরও ৫০টি বাস বিভিন্ন ডিপোতে রিজার্ভ রাখা হবে। ঢাকার বাইরে আন্তঃজেলায় ৩৭৫টি বাস চলবে। সব মিলিয়ে বিআরটিসির ৯০০ গাড়ি চলাচল করবে।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জন শীল বলেন, যাত্রী পরিবহনে সংস্থার জাহাজের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা সেবার জন্য কাজ করছি। সংস্থার বহরে নতুন নতুন জাহাজ সংযোজনের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ফেরি সার্ভিসের ওপর আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। যাত্রীচাপ বেশি থাকলে মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি এবং আরিচার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরিতে যাত্রী পারাপার করা হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর : ঢাকায় ঢোকা ও বের হওয়ার পথ নানান সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় কয়েকটি মহাসড়কের যানজটে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলার কারণে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এ কারণে সড়কে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে যানজটের তীব্রতা বাড়তে পারে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২০ জেলার যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গগামী গাড়ি চন্দ্রা, কোনাবাড়ী, বাইপাইল, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল এলাকায় যানজটে পড়তে পারে।

কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামসহ ওই অঞ্চলের ১২ জেলার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে মেঘনা ও গোমতী সেতু। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেনের গাড়ি ওই দুই সেতুতে দুই লেনে উঠতে হচ্ছে। এর ফলে সেতুর দুই পাড়েই যানজট দেখা দিচ্ছে। পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের দুটি টার্মিনাল ভাঙনের মুখে থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে ওই ফেরিঘাটে গাড়ি পারাপারে দেরি হচ্ছে। সেখানেও দীর্ঘ গাড়িজট লাগার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

গত বছর ঈদে এ ফেরি পারাপারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ঢাকা জোনের কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন ঈদে চন্দ্রা, বাইপাইল, নবীনগর ও কোনাবাড়ী এলাকায় আইপি ক্যামেরা বসানো হবে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে কী না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে তা নজরদারি করা হবে।

বিআরটিসি : আসন্ন ঈদে ঢাকাসহ সারা দেশে ৯০০ বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে বিআরটিসি। সংস্থাটির ১ হাজার ৫৩৮টি গাড়ির মধ্যে সারা দেশে সচল রয়েছে ৮৬৯টি। এর বাইরে ১১৪টি বাস বেসরকারি পরিবহন ব্যবসায়ীদের কাছে দীর্ঘমেয়াদে লিজ দিয়ে রেখেছে। ভারি মেরামতের জন্য রয়েছে ৩৭৫টি বাস ও ১৮০টি বাস মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে ৪৭৫টি বাস বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছেড়ে যাবে। এসব বাসের আগাম টিকিট আগামী ২০ জুন থেকে বিক্রি শুরু হবে। তারা আরও জানান, ঈদে দুই শতাধিক দ্বিতল বাস ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। এসব বাসে ৭৫ জন যাত্রীর আসন রয়েছে। যদিও এসব বাসে দুই আসনের মধ্যে কম জায়গা, প্লাস্টিকের চেয়ারসহ নানা সমস্যা রয়েছে। তবুও যাত্রীরা বেসরকারি গণপরিবহনের তুলনায় কম ভাড়ায় এসব গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন। বাকি বাসগুলো একতলা। এসব বাসের বাসের কোনোটিতে ৪০টি, আবার কোনোটিতে ৫২টি আসন রয়েছে। এসব বাস আরামদায়ক।

সম্প্রতি ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতিঝিলের পরিবহন ভবনে এ সংস্থাটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, পুরনো দ্বিতল বাস লং রুটে পরিচালনা না করা, রিজার্ভ ও লং রুটের বাসে দৈনিক মজুরিভিত্তিক চালক দিয়ে গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে নন্দনপার্ক, চন্দ্রা মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনালসহ ৭ স্থানে বাস স্ট্যান্ডবাই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই সব এলাকার গার্মেন্ট কর্মীদের জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি : যাত্রী পরিবহনে অব্যাহত লোকসান ও যাত্রী ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় ফেরি সেক্টরের ওপর জোর দিয়েছে এ সংস্থাটি। ঈদে ফেরিঘাটে যানজট মোকাবেলার জন্য আরিচা, শিমুলিয়া, চাঁদপুর, ভোলা ও লাহারহাট সেক্টরে সব মিলিয়ে ৪৮টি ফেরি মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি এবং আরিচার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ১৯টি করে মোট ৩৮টি, চাঁদপুর সেক্টরে ৪টি, লাহারহাট সেক্টরে ৩টি ও ভোলায় ৩টি ফেরি মোতায়েন করবে।

সংস্থাটির বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ সময়ে এ পাঁচ ফেরি সেক্টরে ৫০০-৫৫০টি ট্রিপ দেয় এসব ফেরি। এতে দৈনিক সাত হাজার গাড়ি পারাপার করে। ঘাট ব্যবস্থাপনা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ঈদে তা বেড়ে ৭ হাজার থেকে ৭ হাজার ৫০০ গাড়ি পারাপার করা সম্ভব হবে। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীবাহী জাহাজ বাঙালি ও মধুমতি এবং তিনটি স্টিমার চলাচল করবে। প্রতিদিন দুটি জাহাজ ঢাকা থেকে ট্রিপ দেবে।

রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি : ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ এবং বাস টার্মিনালে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভিজিলেন্স টিম গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ওই টিম গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে দূরপাল্লার যানবাহনের স্বল্পতার সুযোগে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি যেন দূরপাল্লার রুটে চলাচল করতে না পারে সেজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে এ সংস্থাটি।

বিআরটিএর পরিচালক নাজমুল আহসান মজুমদার বলেন, ঈদে বাড়তি যাত্রীর চাপের সুযোগে গণপরিবহন খাতে কোনো বিশৃঙ্খল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। বাসের আগাম টিকিট বিক্রিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় মনিটরিং করা হবে।

Recent Posts

Leave a Comment