বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চাই

 In বিশেষ প্রতিবেদন

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
রাজশাহীর মিশন হাসপাতালে জন্ম নেওয়া সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হওয়া সেই ছোট্ট মেয়েটা প্রায়ই দেখতো তাঁর বাবা মুখ গুঁজে বই পড়ছেন। যার অতি শৈশব কাটে  বর্তমানে বহুল আলোচিত আলোকিত মানুষ পালান সরকারের সেই আড়ানী গ্রামে।  বাবার অবসর মানেই কোনো না কোনো বই পড়া। বাবার দেখাদেখি একসময় সেও পড়তে শুরু করলো বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই, বিজ্ঞানের বই পড়তে ভালোবাসতো। কদিন পর দেখা গেলো বই-ই তখন তার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা। …পড়াশোনা শেষ করে সেই ছোট্ট মেয়েটি একদিন চাকুরী নিলো বইয়ের রাজ্যে। বলছিলাম চাঁদপুর সরকারি কলেজের গ্রন্থাগারিক তৃপ্তি সাহার কথা। তাঁর বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চন্দ্র কান্ত সাহার অনুপ্রেরণাই স্কুল-কলেজ জীবন শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগে। সেখান থেকে পাস করে ১৯৯৫ সালে যোগদান করেন আলীগঞ্জের প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে, লাইব্রেরিয়ান হিসেবে। সেখান থেকে যোগ দেন ফেনী সরকারি কলেজের সহাকারী লাইব্রেরিয়ান হিসেবে। ১৯৯৭ সালে তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজে আসেন। ২০০৬ সালের দিকে সহকারী লাইব্রেরিয়ান থেকে পদোন্নতি পেয়ে তিনি লাইব্রেরিয়ান হন। তিনি জাতীয় শিক্ষা একাডেমী ময়মনসিংহ এবং ন্যাশানাল একাডেমী ফর এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট,মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন,ধানমন্ডি, ঢাকাতে অধিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার  মধ্যে তিনিই একমাত্র গেজেটেড লাইব্রেরিয়ান পোস্টে কাজ করছেন। এবং তিনটি জেলাতে  ডি জি মনোনিত বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করছেন।
নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তৃপ্তি সাহা বলেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজ নিঃসন্দেহে ভালো মানের একটি কলেজ। এত বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী সমৃদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে খুব কমই আছে। কলেজ লাইব্রেরিতে যে বিপুল বইয়ের সমাহার (প্রায় ২৬০০০) তা বই পিপাসু যে কারোই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। আর এখানে বই পড়ার উপযুক্ত পরিবেশও রয়েছে। ফলে আমরা বিপুল পরিমাণ বই পড়–য়া শিক্ষার্থী সৃষ্টি করতে পারছি।’
গ্রন্থাগারিক পেশা সম্পর্কে তৃপ্তি সাহা বলেন, ‘এ পেশায় মানুষজন আগ্রহী হচ্ছে না। কারণ এটি একটি ব্লক পোস্ট। গ্রন্থাগারিক হওয়ার পরে এর কোনো প্রমোশন নেই। মানুষ এ পেশাটাকে এখনও অবহেলার চোখে দেখে। যেহেতু এ কাজে সামজিক মর্যাদা নেই, তাই মানুষ গ্রন্থাগারিক হতে চায় না। তাছাড়া মানুষের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ দিনদিন কমছে।’কিন্তু তৃপ্তি সাহা মনে করেন যে, এই তরুণ সমাজ, এই যুব সমাজকে শক্তিতে পরিনত করতে  একটি উপযুক্ত গ্রন্থাগার অত্যন্ত প্রয়োজন ,প্রয়োজন উপযুক্ত গ্রন্থাগারিকের। যার মধ্যে শুধু জ্ঞানের ভার নয়, থাকবে মানবীয় গুণাবলী, সেবা করার মনোভাব। কারণ সময় ভালো কাটানোর জন্য, দুঃখকে জয় করার জন্য, হতাশাকে আশার আলোতে ভরিয়ে তুলতে পারে এই বই। তাই শুধু তরুণ,যুবক নয় –বৃদ্ধ বয়সেও এই ব্ই পারে সজীব,সুন্দর পরিপুর্ণ জীবন দিতে।
তিনি বলেন, বই আমার স্বপ্ন, বই নিয়েই আমার সাধনা। আমি সবসময়ই বইয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য কাজ করি। বই  যে মানুষের ভালো বন্ধু তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চাই।’
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সমাজে নারীদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন হলেও আমুল পরিবর্তন হয়নি। নারীও মানুষ। তাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে নারীদের দৃঢ় মনোবল   থাকতে হবে। সময় সুযোগ সুবিধা পেলে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের নিয়ে আমি কাজ করতে চাই, তাদের সচেতন করতে চাই। তাদের এগিয়ে নিতে চাই সময়ের সাথে। এছাড়া সামাজিক উন্নয়নমূলক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও নিজেকে ধরে রাখতে চাই।
অবসর সময়ে তৃপ্তি সাহা প্রিয় বইগুলো বারবার পড়েন। লেখালেখি করাও তার অন্যতম শখ। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় তার বেশ কিছু নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সময় পেলে দেখেন সিনেমা, নাটকও। তাঁর শখ বাগান করা, বাগানে ফুল ফুটানো, গান শুনা। রান্না করতে এবং খাওয়াতে তিনি ভালোবাসেন।

Recent Posts

Leave a Comment