ত্রাণ আটকে রোহিঙ্গা হত্যার কৌশলে মিয়ানমার

 In প্রধান খবর, লিড নিউজ

রাখাইনে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে প্রয়োজনীয় খাবার, পানি ও ঔষধ সরবরাহ করতে দিচ্ছে না মিয়ানমার। জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থার ত্রাণ আটকে দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি আন্তর্জাতিক ত্রাণসংস্থাকে আটকে দেওয়া হয়েছে। এতে করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাবার, পানি ও ঔষধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তারা মানবেতর দিন পার করছেন। খবর: দ্য গার্ডিয়ানের।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) গত এক সপ্তাহ ধরে রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে চাইলেও তাদের সেখানে যেতে দিচ্ছে না সরকার।

এর ফলে আড়াই লাখেরও বেশি সাধারণ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন অংশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জাতিসংঘের বাইরেও অন্তত ১৬টি বেসরকারি সংস্থা ও সাহায্যকারী সংগঠন থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সংঘাতপূর্ণ এলাকাতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না সরকার। এসব দাতা সংস্থার মধ্যে আছে অক্সফাম ও সেইভ দ্য চিলড্রেনের মতো প্রতিষ্ঠান।

মিয়ানমারে নতুন করে শুরু হওয়া জাতিগত নিধনে হাজারো রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গত ১০ দিনে অন্তত ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘের বরাতে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু করে এই সপ্তাহ পর্যন্ত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলোতে আশ্রয় নিয়েছে আরও ৩০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা, যারা খাবার ও পানির তীব্র সংকটে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে অবস্থানরত জাতিসংঘ কার্যালয়ের সমন্বয়কের দপ্তর থেকে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য পাঠানো স্থগিত করতে হয়েছে। কারণ দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকার সরেজমিনে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।

এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, জাতিসংঘ সরকারি কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং যতটুকু সম্ভব মানবিক কাজগুলো চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তাক্ত ১০ দিনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে এবং বড় অংশটা বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া অনেককেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অন্তত ৫ জন মারা গেছেন। আর বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তির হাত ও পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

এছাড়া নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৬ হাজার শিশু রয়েছে, যারা স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু সংঘাতের ফলে তারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি, যাদের টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা দরকার। শরণার্থী শিবির ও অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া বেশিরভাগ শিশুই ক্ষুধার্ত ও ট্রমার মধ্যে আছে।

Recent Posts

Leave a Comment