বদলে যাওয়া বাংলা গানের যুবরাজ

 In প্রধান খবর, বিনোদন
সময় বদলেছে। সেই সঙ্গে বদলে গেছেন বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর। সেই ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ থেকে শুরু করে আজকের ‘আগুন’, ‘সাদা আর লাল’ কিংবা ‘কী করে তোকে বুঝাই’- সব গানেই দেখা মেলে ব্যতিক্রমী এক আসিফের। যেন কালক্রমে আরও বেশি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছেন এ গায়ক। বিস্তারিত লিখেছেন আফতাব উদ্দিন ছিদ্দিকী রাগিব

গত ৯ মার্চের কথা। ইউটিউবের একটি ভিডিওতে হঠাৎ চোখ আটকে যায়। নাম ‘আগুন’। অবশ্য কারণটাও সঙ্গত। নামের পাশেই যে ‘আসিফ আকবর’ লেখা ! কৌতূহলে ভিডিওতে ক্লিক করা। ভেসে এল কী-বোর্ডের রিদমিক মিউজিক। তারপর দেখা গেল লুঙ্গি-চশমা ও শাড়ি-চশমা পরিহিত মডেল। তাতে সন্দেহ জাগল- এ কি তামিল ছবির গান? তারপর এলো ক্রেজি আসিফ। কণ্ঠে ‘লোকে বলে তুমিই আগুন, ছাই বানাতে জুড়ি নাই; ভয়ে ভয়ে হাত ধরেছি, আমি কিন্তু পুড়ি নাই’। কথা শুনেই চমকে যেতে হয়! এ আবার কী ধরনের লিরিকস! ভিন্ন কথা-সুর-সঙ্গীত-গায়কী আর নাচ-অভিনয়ে ঠাঁসা তামিল মুভি স্টাইলে বর্ণিল ও বিশাল ক্যানভাসে গায়কের সাবলীল ঝলমলে ও রাজকীয় উপস্থিতি দেখে ধাঁধা জাগল- এ কি আসলেই আসিফের গান? এক কণ্ঠ ছাড়া আর কোনো কিছুই যে ‘আসিফীয়’ নয়! অসাধারণ! সত্যিই বিমোহিত হতে হয়।

এক ‘আগুন’ না নিভতেই চলতি বছরের ২১ আগস্ট জ্বলে উঠল আরেক আগুন ‘সাদা আর লাল’। এবার আসিফ যেন ‘এলভিস প্রিসলি’। স্টোরি বেইজড, ড্রামাটিক এই উৎসবের গানে রংচঙে পোশাক, বড় বড় চুল-জুলফি ও কালো চশমা পরা সত্তর দশকের নায়কের লুকে আসিফকে দেখে সবার ভিমরি খাওয়ার দশা! তাতে লাখ মনে প্রশ্ন জাগে- এ কোন আসিফ? কেবল গায়ক আসিফ নয়, এই ভিডিওতে অভিনেতা ও নৃত্যশিল্পী আসিফের দেখাও মিলল।

তিন দিন পর ‘কী করে তোকে বুঝাই’ গানে মিলল ‘হিরো আসিফের’ দেখা। এই অসম্ভব মেলোডিয়াস গান ও নান্দনিক ভিডিওতে আসিফের গ্ল্যামারাস ও পুরোদস্তুর নায়কোচিত উপস্থিতি বিস্ময় জাগায়- এ আসিফ এতদিন কোথায় ছিল? এ কী ৪৬ বছরের প্রৌঢ় আসিফ, না ২৫ বছরের কোনো তরুণ? বিস্ময়ের সেই ঘোর না কাটতেই জানা গেল, এবার আসছেন ‘মডেল আসিফ’। ১ সেপ্টেম্বর অপেক্ষার প্রহর কাটল। ইউটিউবে প্রকাশ পেল ধ্রুব গুহের সেই বহুল আলোচিত ‘একলা পাখি’ শিরোনামের গান। গানটির প্রথম তিন দিনে ৫ লাখ ভিউ জানিয়ে দিল মডেলিংয়েও আসিফের বাজিমাত!

‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়। সকালে বদলায়। বিকেলে বদলায়। কারণে বদলায়। অকারণে বদলায়।….’ (রক্তাক্ত প্রান্তর, মুনীর চৌধুরী)। সেই বদল যে এতটা চোখ ধাঁধান ও পিলে চমকান হতে পারে তা এই ‘নতুন আসিফ’কে না দেখলে কখনও জানা হতো না।

আসিফ নিঃসন্দেহে দেশীয় সঙ্গীতের রাজপুত্র। আজকের ‘All-rounder Performer’ নয়, মানুষ চিনত এই গায়ক আসিফকে। যে কিনা ২০০১ সালে অভিষেক অ্যালবাম ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ দিয়ে হয়ে যান ইতিহাস। ওই অ্যালবাম এখনও বাংলাদেশের সর্বাধিক বিক্রীত (৬০ লাখ) অডিও অ্যালবাম। এরপর ৩০টি একক অ্যালবাম, ১১৮টি ডুয়েট ও মিক্সড অ্যালবামসহ অসংখ্য গানে সঙ্গীতাঙ্গনে এক দশকের রাজত্ব। বিক্রির বিচারে টানা ছয় বছর (২০০১-২০০৬) শীর্ষ গায়ক। পকেটে দুইটি জাতীয় পুরস্কার। বেসরকারি অসংখ্য পুরস্কার তো রয়েছেই। সেই আসিফই এ ডিজিটাল যুগে কারও কারও চোখে বাতিলের খাতায় চলে গিয়েছিলেন। অভিমানে ২০১০ সালে সঙ্গীত থেকে অবসর নিয়েছিলেন, এমনকি ‘মিউজিক ভিডিও’ নিয়ে তার পর্যাপ্ত এলার্জিও ছিল।

অথচ সময়ের আবর্তনে আসিফের সে কী পালাবদল, কী আমূল পরিবর্তন, গায়ক থেকে আপাদমস্তক পারমফর্মারে রূপান্তর- সত্যি এ অনন্য দৃষ্টান্ত! বলতে দ্বিধা নেই, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’-এর ২৯ বছর বয়সী আসিফের চেয়ে, আজকের ৪৬ বছর বয়সী আসিফ অনেক বেশি আকর্ষণীয়, তরুণ, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত। আজকের দর্শক তো এই আসিফকেই দেখতে চায়।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Recent Posts

Leave a Comment