পথশিশুদের ব্যাংকে জমা ২৬লাখ টাকা!

 In জাতীয়, প্রধান খবর

দেশের পথশিশুদেরও রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে লেনদেন করছে ৪ হাজার ৩৬৫ পথশিশু। এক টাকা/দুই টাকা করেই তারা ২৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকারও বেশি অর্থ জমিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে। দেশের ১৩টি এনজিও এই পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব দেখভাল করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ছয় মাসে নতুন করে ৬৪০ জন পথশিশু ব্যাংকের সেবা নিয়েছে। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমন ৩ হাজার ৭২৫ জন শিশু ব্যাংকে লেনদেন করতো। আর চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৬৫ জন পথশিশু ব্যাংকে লেনদেন করেছে।

গত ছয় মাসে ২ লাখেরও বেশি পরিমাণ অর্থ জমিয়েছে পথশিশুরা। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই পথশিশুরা ২৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জমিয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে ব্যাংকে জমানো তাদের টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকারও বেশি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ১০ টাকার বিনিময়ে পথশিশুদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তার ওই নির্দেশনার পর মাত্র আড়াই বছরের কম সময়ে সাড়ে চার হাজার পথশিশুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৬ লাখ টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ জমা হয়।

এ প্রসঙ্গে ড. আতিউর রহমান  বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাংকিং খাতে পথ শিশুদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’  তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ‘পথশিশুরা’ও ফেলনা নয়। তারাও আমাদের মতোই মানুষ। অথচ তারা জীবনে কখনও ব্যাংকিং সেবা পেতো না। এমনকি এই পথশিশুরা কখনও ব্যাংকে ঢুকতে পারতো না।’’ তিনি বলেন, ‘যখন দেখি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এই পথশিশুরা শীতে কষ্ট পাচ্ছে, গরমেও মানবেতর জীবনযাপন করছে, তখন ব্যথিত হই।’

ড. আতিউর রহমান উল্লেখ করেন, ‘ব্যাংক মানুষের সেবা দেয়, অথচ দীর্ঘদিন এই গরিব অসহায় মানুষরা ছিল ব্যাংকিং সেবার বাইরে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। অধিকাংশ পথশিশুর কোনও অভিভাবক না থাকায়, এনজিও প্রতিনিধিরা তাদের অভিভাবক হয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন। দেশের ১৩টি এনজিও শিশুদের জন্য এ কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় তথ্য মতে, পথশিশুদের সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটি ৩০ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ২১ জন পথশিশুর হিসাব খুলেছে। রূপালী ব্যাংকে তাদের জমা হয়েছে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ৬৮৫ জন পথশিশুর হিসাব খুলে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকে পথ শিশুরা ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা জমা করেছে। ৫৪৬ জন পথশিশুর হিসাব খুলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি পূবালী ব্যাংক। এই ব্যাংকে তাদের জমার পরিমাণ ৩ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা  বলেন, ‘‘এটা বলতে ভালো লাগছে, যে ‘পথশিশু’ ও কর্মজীবী শিশু-কিশোররাও এখন ব্যাংকে টাকা রাখে। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহতী উদ্যোগের ফলে।’’ তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ‘পথশিশুদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা তৈরি, তাদের কষ্টে উপার্জিত অর্থের সুরক্ষা, পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা রোধসহ কয়েকটি কারণে ব্যাংকগুলোকে পথশিশুদের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’’

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে যে ১৩টি এনজিও পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব দেখভাল করছে, সেগুলো হলো—মাসাস, সাফ, উদ্দীপন, অপরাজেয় বাংলাদেশ,  ব্র্যাক, নারী মৈত্রী, সিপিডি, প্রদীপন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, এএসডি, শক্তি বিদ্যালয়, ইবিসিআর প্রকল্প ও পরিবর্তন।

২০১৪ সালে প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংক পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে আরও ৭টি ব্যাংক এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো—সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।

Recent Posts

Leave a Comment