লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়েও সহজ হার!

 In খেলাধুলা, লিড নিউজ

ক্রীড়া ডেস্কঃ

\এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকাতে বাংলাদেশ দলটাকে কিছুটা লড়াকু দেখালো। কিন্তু লড়াকু বোলিং প্রতিপক্ষের শক্ত ব্যাটিংকে আটকাতে পারলো না শেষে। আর লড়াকু ব্যাটিং হঠাৎ ধসে পড়ে করলো সর্বনাশ। আর তাতেই বৃহস্পতিবার ব্লমফন্টেইনে টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হারলো ২০ রানে। দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো স্বাগতিকরা। পরের ম্যাচ রোববার।

টেস্ট আর ওয়ানডেতে অসহায় ভাবে হোয়াইটওয়াশ হওয়া দলে দুজন ছিলেন ভিন্ন অধিনায়ক। এই প্রথম তিন অধিনায়ক তত্বে শুরু করা বাংলাদেশে টি-টুয়েন্টিতে নতুন করে নেতৃত্ব শুরু করলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু অভিজ্ঞতার কাছে বড় বেশি মার খেয়ে গেলো বাংলাদেশ। ম্যাচ টেম্পারেমেন্ট বলতে কি বোঝায়, সেটা শিখলো প্রোটিয়াদের কাছ থেকে।

টস জিতে আগে ব্যাট করে পাহাড় সংগ্রহের সম্ভাবনা জাগিয়েও প্রোটিয়ারা ৪ উইকেটে করে ১৯৫ রান। ওটাও বাংলাদেশের জন্য হিমালয় পার হয়ে জেতার অবস্থা। রেকর্ড গড়তে হয়। কিন্তু জবাবে ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরুর পর ঠিক ১০০ তে পৌঁছানোর আগে একে একে ভবনের মূল স্তম্ভ সব খসে পড়লো। লড়াই করতে চাওয়া টাইগাররা ওখানেই পরাজিত। সহজে পরাজিত ৩ উইকেট ৯ রানের ব্যবধানে পড়ে যাওয়ায়। তারপর আরেকটি।

আর তাতে শেষে ১ বলে ২৩ রান লাগে জিততে! তবু অল আউট না হয়ে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে থামা টাইগারদের। ১৭৫ রানে। সব আশা তার আগে শেষ ১০১ রানের ওই সময়টাতে। সৌম্য সরকারের প্রথমবারের মতো সফরে জ্বলে ওঠার পরও।

আপনি যদি ম্যাচটা দেখে থাকেন ভালো, না দেখে থাকলেও সমস্যা নেই। সাকিবের নেতৃত্বে টস হারা বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে শুরুতে তেমন উজ্জীবিত লাগলো না। মার খেলো। তারপর রুখে দাঁড়ালো। বিশেষ করে মেহেদী হাসান মিরাজের শুরুর ওভারে ১ উইকেট এবং ফেরার পরের আরেক শিকারে। আর রুবেল হোসেনের মার খেয়ে পরে ফেরার গল্পটা তো প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসনে অনেকটা লাগাম দিয়েছে।

প্রথম দুই ওভার সাকিব ও মেহেদীর। মেহেদী শেষ বলে তুলে নেন হাশিম আমলাকে (৩)। সাকিব হঠাৎ পেস অ্যাটাক আনেন। চার পেসারকে এরপর ৫ ওভার দেন। নবই পিটুনি খান। ৭ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ১ উইকেটেই ৭৭ রানে। এবি ডি ভিলিয়ার্স মেরে চলেছেন। কুইন্টন ডি কক থামার পাত্র নন। আবার সাকিব ও মিরাজ ফেরেন। পরিণতিতে এবি ডি ভিলিয়ার্স ২৭ বলে ৪৯ ও অধিনায়ক জেপি ডুমিনি ১৩ রানে মাঠ ছেড়েছেন।

এরপর ফিরে আগ্রাসী বোলিং করেছেন রুবেল। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ৪৪ বলে ৫৯ রান করা ওপেনার ডি ককের উইকেটটা। কিন্তু ৪ উইকেটে ১৩৩ রান থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০ এর কাছাকাছি যায় আর উইকেট না পড়ায়। ডেভিড মিলার ও ফারহান বেহারডিন অপরাজিত থেকে ছোটোখাটো পাহাড়ের চাপে ফেলেন বাংলাদেশকে।

রুবেল তার স্পেলটা দারুণ করেছেন ফিরে। তবে শেষে মিলার (আপরাজিত ২৫) ও ফারহানের (অপরাজিত ৩৬) ৬২ রানের জুটিটা ভাঙা যায়নি। ডেথ ওভার বোলিংও ভালো হয়নি তেমন। মোস্তাফিজুর রহমান নেই। মাশরাফি বিন মুর্তজা অবসরে। সাকিবও শেষ ওভারের দায়িত্ব নেওয়ার সাহস করেননি। মিরাজ ৪ ওভারে ৩১ রানে ২ উইকেট পেলেন। রুবেল ৪ ওভারে ৩৪ রানে ১ উইকেট শিকার করেছেন। সাকিব ৩ ওভারে ২৮ রানে ১ উইকেট পেলেন। তাসকিন ২ ওভারে ২১, শফিউল ২ ওভারে ৩৩, সাইফ উদ্দিন ২ ওভারে ২০ রান দিয়েছেন। মাঝে মাহমুদউল্লাহ এসে ৩ ওভারে হিসেবে কম ২৩ রান দিয়েছেন। এসব দেখে তাসকিন বা শফিউলের বদলে নাসির হোসেন থাকলেই ভালো হতো বুঝতে বাধ্য।

বোলিংয়ে ভালো-মন্দ মিলিয়ে কিছু একটা হলো। কিন্তু লড়াইয়ের ইচ্ছেটা দেখা গেলো। টার্গেট বড়। তবু ছুটলেন সৌম্য সরকার। সম্ভবত সফরে এখন পর্যন্ত তার সেরা ইনিংসটাই খেললেন। ৩১ বলে ৪৭ রান। ৫ চার ও ২ ছক্কায়। তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে ইমরুল কায়েসের সাথে (১০) ওপেনিং পার্টনারশিপটা ৪৩ রানের। তখন কেটেছে মাত্র ৩.৫ ওভার।

নতুন অধিনায়ক সাকিব সবাইকে চমকে তিনে চলে আসেন। অপয়া তেরো পর্যন্ত টেকেন। তাও ঠিক ছিলো। কিন্তু সর্বনাশ ৯২ থেকে ১০১ রানে। ২ উইকেটে ৯২ থেকে ৫ উইকেটে ১০১! একে একে ফেরার মিছিল করে ড্রেসিং রুমে ঢোকেন সৌম্য, মুশফিকুর রহীম (৮ বলে ১৩), মাহমুদউল্লাহ (৪ বলে ৩)। ফেহলুকোয়ায়ো ও হেনড্রিকস পেয়ে বসেছিলেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। সাব্বির রহমান এর মাঝে দুটি ছক্কা মেরে জেগে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। ১৯ রান করে ফেরেন।

মজার ব্যাপার হলো বাংলাদেশের ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানটা নবীন অল রাউন্ডার সাইফ উদ্দিনের। ৭ নম্বরে নেমে ২৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ রানে অপরাজিত। কিন্তু যখন সাব্বিরকে হারিয়ে ৬ উইকেটে ১৩৭ রান বাংলাদেশের, তখনো দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের চেয়ে এগিয়ে। শুধু উইকেট পড়েছে বাড়তি ৪টি! এই অবস্থায় সাইফ জেতাতে চাওয়ার মতো ব্যাটিং করতে পারেননি, সেটা তার অভিজ্ঞতার অভাব।

আসলে শুধু সাইফের না, পুরো দলের এমন পরিস্থিতিতে অসম লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার অভাবটাতেই বারবার হাতে নিয়েও ম্যাচটা ছেড়েছে বাংলাদেশ।

Recent Posts

Leave a Comment