আল আমিন একাডেমীতে ফরমপূরণে শর্ত মাতা ন্যাড়া!
বিশেষ প্রতিনিধি
চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে আল আমিন একাডেমীতে একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মাথা ন্যাড়া করার শর্তে ফরমপূরণ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলছে না। শুধু পরীক্ষার ফরমপূরণ হয় এই আশায়। যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় প্রিয় সন্তান। অবশ্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রাইভেট না পড়ায় তাদের ইচ্ছে করে ফেল করানো হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক জামাল হোসেন ন্যাড়া করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও অধ্যক্ষ বলছেন বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
জানা যায়, ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রায় চারশ শিক্ষার্থীর মধ্যে টেস্ট পরীক্ষায় ৯১জন কৃতকার্য হয়। বাকী প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। পরে তাদের অকৃতকার্য বিষয়ে পুনরায় পরীক্ষা নিলেও ফলাফল ঘোষণা করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলাফল না ঘোষণা করে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ফরম পূরণ করা হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ আবুল বাসার নামের এক অভিভাবকের। এমন ভূরিভূরি অভিযোগ রয়েছে প্রাইভেট না পড়াতে অনেক শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। এমনকি ফরমপূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কৌশলও বলছেন কেউ কেউ। অপর দিকে ইংরেজী শিক্ষক জামাল স্যারের নির্দেশে ১৯জন শিক্ষার্থী মাথা ন্যাড়া করতে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এমন শর্ত দেয়ায় প্রধান শিক্ষক অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আবদুল গাফফার এর সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু তিনি এ সিদ্ধান্তকে চুড়ান্ত ও কার্যকর করার নির্দেশ দেন। শিক্ষার্থী বিষণœ মনে একপ্রকার চাপের মুখে বাধ্য হয় তাদের মাথা ন্যাড়া করতে। অনেক অভিভাক হাসি মুখে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা মেনে নিলেও হৃদয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। কারণ যদি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না দেয়া হয় তবে জীবন থেকে বিথাই চলে যাবে একবছর। এ চিন্তায় এমন অমানবিক শর্ত মেনে নেয় তারা। যদিও এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি দেয়ার আগেই জামাল স্যার ও অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী অভিভাবকদের এক প্রকার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। যেন বিষয়টি কোনো গণমাধ্যম কর্মীকে না বলা হয়। যার প্রমাণ স্বরূপ কয়েকজন অভিভাবক বিষয়টি বক্তব্য দিতে রাজি হয়েও পরে এ প্রতিবেদকের সাথে আর যোগাযোগ রক্ষা করেনি। তবে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থী লজ্জ্বায় মাথায় টুপি অথবা ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছে রেখেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঘুরে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের রুমের সামনে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভিড়। এসময় কয়েকজন অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ এবং আবল তাবল বকতে দেখা যায়। কারণ এ বিদ্যাপীঠের পড়া লেখার মান অনেক ভালো সত্ত্বেও কেন শিক্ষার্থীরা ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে অকৃতকার্য হবে? এমনটাই প্রশ্ন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী ছয় সাত বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ফরমপূরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগও করেছে কেউ কেউ। অবশ্য আবার কাউকে কাউকে বাদ দেয়াও হয়েছে। এক্ষেত্রে অধ্যক্ষ ও শ্রেণী শিক্ষক একচোখা বিচার করেছেন বলে দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই (গোপন ভিডিও সংরক্ষণ আছে)।
শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন, ফাহিম ও মাহিব হাসান জানান, আমরা স্যারদের সকল শর্ত মানার পরেও আমাদের গার্ডিয়ান ও আমাদের হয়রানী করা হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ৭বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষাথীরও ফরম পূরণ করা হয়েছে। অথচ ন্যাড়া করার ব্যাপারে যদি সাংবাদিকদের বলি তাহলেও স্কুল থেকে বহিস্কার করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
ন্যাড়া করার ব্যাপারে শিক্ষক পি এম এম জামাল হোসেন জানান, আমি এমন নির্দেশ দেই নি। তারা নিজেরাই চুল কেটেছে।
আল আমিন একাডেমীর অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ আবদুল গাফফার (ইনচার্জ) জানান, এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমি বিষয়টি দেখছি। আর কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান অধ্যক্ষ।