এ দেশে বিচারের নামে নানা অবিচার হয়: খালেদা জিয়া
বাংলাদেশে বিচারের নামে অবিচার হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন বিএনপি নেত্রী।
খালেদা জিয়া বলেন, এ মামলার রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে, বিচারকগণ স্বাধীনভাবে বিবেকশাসিত হয়ে আইনসম্মতভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম কিনা? আমাদের দেশের ইতিহাসে বিভিন্ন অধ্যায় বিচারের নামে অধিকার হরণের নমুনা দেখেছি। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকেও দুর্নীতির অভিযোগে কারাভোগ করতে হয়েছে।
মরহুম মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, অলি আহাদের মতো জাতীয় নেতাদেরও কারাভোগ করতে হয়েছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কবিতা রচনা করায় রাষ্ট্রদ্রোহী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা শওকত আলী, সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ ও জহরলাল নেহরুর মতো নেতাদেরও আদালতের রায়ে কারাভোগ করতে হয়।
তিনি বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো মানুষকেও বিচারিক সাজা দেয়া হয়। তথাকথিতও সেসব রায়ের পেছনে যুক্তি, অজুহাত ও আইন দেখানো হয়। হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও সক্রেটিসের মতো মহামানবদেরও বিচারের নামে সাজা দেওয়া হয়। এসব বিচারকে কি বিশ্ববাসী ন্যায়বিচার বলে মেনে নিয়েছে?
খালেদা জিয়া আরও বলেন, ইতিহাস এসব রায়ে কী দেখেছে? অপরাধী হিসেবে তাদের সাজা দেয়া হয়। কিন্তু ইতিহাস তাদের দিয়েছে গৌরব, মহিমা। ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয়, আবার কেউ নেয় না। যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, মানুষ তাদের সম্মানিত করে। আর যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের ঠাঁই হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। তারা মানুষের ধিক্কারে পরিণত হন।
আদালতে শহীদ জিয়ার পরিবারের সঙ্গে বৈরী আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, আমার ও শহীদ জিয়াউর রহমানের পরিবারের ওপর শেখ হাসিনা যে বৈরী আচরণ করেছেন, তার জন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। প্রতিহিংসার আচরণ আমি করব না। আমি আহ্বান জানিয়েছি, গণতন্ত্রের স্বার্থে সুন্দর একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলার। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে আমাদের কাছ থেকে আরও কিছু শিখতে পারে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছান তিনি।
এ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাক্ষীদের পুনরায় জেরার দিন ধার্য রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, দুর্নীতির এ দুই মামলায় চলতি বছরের ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। ১৯ অক্টোবর এ দুই মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
ওই দিন তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। এর পর দুই দফায় তিনি বক্তব্য দেন।