এমন হারে আনন্দ আছে; আছে উচ্ছ্বাস! :
কাদের পলাশ:
এমন খেলা দেখে হৃদয়ে পাথর চাপা না পড়ার কারণ নেই। বুক ধরপড় করতে হবেই। হার্টবিট বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ হেরেছে। শুধুই কি হেরেছে? প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ হারেনি। দিনদিন যেভাবে সামর্থের প্রমাণ দিচ্ছে বাংলার দামাল ছেলেরা; এতোদিনে বাঘের গর্জন আঁচ করতে পেরেছে ক্রিকেট দুনিয়া। সুসময় খুবই নাগালের কাছে। সুতরাং হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এ ম্যাচটি হারলেও জিতেছে ক্রিকেট। ক্রিকেট যে অনিন্দ্য সুন্দর আরো একবার প্রামণ করলো। ক্রিকেট যে কতটা টানটান উত্তেজনার পুনরায় দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। এমন খেলা শেষ কবে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব? নিখাদ বিনোদনের এতো চমৎকার মঞ্চ তৈরি হয় কয়টা ম্যাচে? তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচেটিতে আনন্দের এক ফোঁটাও কমতি ছিলো না।
বাঙালী আবেগী জাতি বলে খুব বেশি দুঃখবোধ কাজ করছে মনে। এক ওভারে বাইশ রান দেয়ায় রুবেলের প্রতি ক্ষোভ বাড়ে। কিন্তু এ রুবেলই গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার জন্যে সবচে বড় ভূমিকা পালন করেছে। রুবেলের মতো এতো অভিজ্ঞ খেলোয়ারের কাছে বাংলার ক্রিকেট প্রেমিরা এমন খরুচে ওভার আশা করেনি। বল দেখে মনে হয়েছে রুবেল উইকেট পেতে বল করছে। অথচ ওই ওভারটিতে বেশি সংখ্যক ডট বল দিতে পারলে জেতার পথ অনেকটাই প্রসস্থ হতো। এভাবে হারতে হতো না। বিজয় নিশ্চত ধরা দিতো। তা হয়নি তাতে কী হয়েছে? ভবিষ্যতে হয়ে যাবে নিশ্চয়।
কারো কারো মতে; শেষ ওভার করানো জন্যে একটা ভালো ওভার রাখলে কী হতো? আসলে যা হবার তাই হতো। না হলে গত ম্যাচে পেরেরাকে কত সিরিয়াস মুহূর্তে ছক্কা মেরে জয়োল্লাস করি আমরা। তবে ভাগ্যকে কোনো ভাবেই অস্বীকার করা যায় না। মানতে হয়; মানতে হবেই। এভাবে মাথা উচু করে হারার মাঝে আনন্দ আছে; উচ্ছ্বাস আছে। তবে এভাবে হারতে থাকলে ‘চোকার’ উপাদীতে ভাগ বসাতে হতে পারে। এমন শঙ্কাও মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এমন হারে বুক উচু করে সবুজ গালিছা বিচানো মাঠ দাবড়ে বেড়ানো যায়। কষ্ট হয় হোক; কিন্তু দুঃখবোধ লালন না করাই শ্রেয়। কারণ বিজয় অপেক্ষমান… ধরা দেবেই।
তীরে এসে তরী ডুবানোর অভ্যেস অনেক আগেই আয়ত্ত্ব করেছ বাংলাদেশ। কিন্তু তীরের সন্নিকটে যে নৌকা এসে পৌঁছায়। সে নৌকা একদিন নিরাপদে পাড়ে ভিড়বেই। নিশ্চয় বিজয় নিশান পাড়ে পতপত করে উড়বেই। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ম্যাচে ছন্দে ফিরেছে সাব্বির রহমান। ৫০ বলে অনবদ্ধ ৭৬রান! আসলে বড় প্লেয়ার বড় ম্যাচেই খেলা দেখায়। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ চমৎকার বল করেছে। মোস্তাফিজের শেষ ওভারের প্রতিটি বলে বিনোদিত হয়েছে সবাই। অপরপক্ষে ভারতের সর্মথকরা কষ্ট পেয়েছে। শেষ বলের আগের বলটিতে যখন সৌম্য উইকেট পেলো গোটা জাতি আনন্দে আটখানা হলো। হতাশ হয়েছে বিপরীত পক্ষ। শেষ বলে বিপরীত পক্ষ আনন্দ পেয়েছে জয় প্রত্যাশী লাল সবুজের পতাকার বুকে তখন চাপা কষ্ট। মানতে হয়। মেনে যায়। সর্বপরি ক্রিকেট বাঙালীর আবেগ। এ আবেগের চর্চা হয় ঘরে ঘরে। টাইগার্স সামনে বীরদর্পে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেমনি সোনালী দিন গেছে; তেমনি বিবর্ণ দিন কয়েকগুণ বেশি গেছে। সামনে সোনালী দিনের সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে বাংলা বাঘেরা; এমনটাই প্রত্যাশা।
কাদের পলাশ, চীফ ইডিটর, চাঁদনিউজটোয়েন্টিফোর.কম