১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চায় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়
প্রতিবেদকঃ
রাজস্ব খাতে ১২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ৩৯টি ক্রীড়া ফেডারেশনের জন্য আগামী অর্থবছরের জন্য এ টাকা চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনস্থ ৪৯টি ক্রীড়া ফেডারেশনের কাছে এক বছরের বাজেট চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। দু’দফা তাগাদা দেয়ার জন্য ৩৯টি ক্রীড়া ফেডারেশন তাদের বাজেট জমা দেয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বিলিয়ার্ড অ্যান্ড স্নুকার, মার্শাল আর্ট, ঘুড়ি, আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্ডো, ব্যুত্থান, ইয়োগা, সার্ফিং, ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি বাজেট পাঠায়নি।
মন্ত্রণালয় ৩৯টি ক্রীড়া সংস্থার পাঠানো বাজেট হিসাব করে আগামী অর্থবছরের জন্য ১২০ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। বাজেট বরাদ্দ পেতে যুব ও ক্রীড়া সচিব আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের সভা বসছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
পাঁচ বছরের বাজেট চেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে যেন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ক্রীড়া ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। কামান চাইলে পিস্তল পাওয়া যায়, এই মন্ত্রণায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিলেন তারা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চেয়েছে ২০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের চাওয়া ১১৯ কোটি টাকা। বাফুফের পরে রয়েছে হকি ফেডারেশন। তারা এক অর্থবছরে চেয়েছে ছয় কোটি টাকা।
হ্যান্ডবল পৌনে ছয় কোটি, রাগবি পৌনে পাঁচ কোটি, খোখো সাড়ে তিন কোটি, আরচারি, টেবিল টেনিস ও কারাতে তিন কোটি করে, সফটবল ও বেসবল এক কোটি ৬২ লাখ, দাবা, কুস্তি দেড় কোটি, শুটিং, টেনিস ও রোলার স্কেটিং সোয়া কোটি করে, গলফ এক কোটি ১০ লাখ, সাইক্লিং, উশু, জুডো, জিমন্যাস্টিক্স ও ফেন্সিং এক কোটি করে, অ্যাথলেটিক্স ৮০ লাখ, শরীরগঠন ও মাউন্টেনিং ৭০ লাখ করে, তায়কোয়ান্ডো ৬৬ লাখ, ব্যাডমিন্টন ৬৫ লাখ, বক্সিং ৫০ লাখ এবং স্কোয়াশ ৪০ লাখ টাকার বাজেট জমা দিয়েছে।
বিওএ পৌনে সাত কোটি টাকা চেয়েছে এক অর্থবছরে। তবে ফেডারেশনগুলোর বাইরে ৭২টি জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে বাজেট চায়নি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। অথচ তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় তৈরি করে থাকে এসব সংস্থাই।
দেশের ফুটবল রসাতলে গেলেও ২০ কোটি টাকা চেয়েছে বাফুফে। জেলা লীগের জন্য বাফুফে চেয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। অথচ বছরের পর বছর ধরে জেলা লিগ হচ্ছে না। এরকম ভৌতিকভাবে অনেক ফেডারেশন বাজেট পাঠিয়ে দিয়েই খালাস।
বাংলাদেশে রাগবির প্রচলন না থাকলেও ফেডারেশন খুলে বসানো হয়েছে। তারা চেয়েছে পৌনে পাঁচ কোটি টাকা। খোখো ফেডারেশন বছরে নামকাওয়াস্তে দু’একটি টুর্নামেন্ট করলেও তারা চায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। বছরের অধিকাংশ সময়ে শুয়ে-বসে কাটালেও কারাতের জন্য চাওয়া হয়েছে তিন কোটি টাকা।
সবচেয়ে হাস্যকর কাণ্ডটি করেছে সফটবল ও বেসবল অ্যাসোসিয়েশন। এই সংস্থার কর্মকর্তাদের দেখাই মেলে না। খেলা তো দূরের কথা। তাদের দাবি এক কোটি ৬২ লাখ টাকা।
ফেডারেশনের জমা দেয়া ক্রীড়া বাজেট পেয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন কোমর কষে মাঠে নেমে পড়েছেন। যাচাই-বাছাই না করেই ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে বসে আছেন তারা।
সেই সঙ্গে দেশব্যাপী মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে প্রত্যেক বছর ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ১৪ কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে চাইছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থ মন্ত্রণালয় ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয় ক্রীড়া খাতে।
সেই টাকা পেয়ে বিভিন্ন স্থানে ক্রীড়া স্থাপনা নির্মাণে তৎপরতা শুরু হয়। বরাদ্দের মাত্র ১৫ কোটি টাকা প্রশিক্ষণ খাতে দেয়া হয়েছিল। সেই ১৫ কোটি টাকাও খরচ করতে পারেনি ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো।
প্রায় দেড় কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়েছিল। যেখানে ৪৯টি ফেডারেশন ১৫ কোটি টাকা খরচ করতে পারে না, সেখানে ১২০ কোটি টাকা খরচ করে ক্রীড়া কর্মকাণ্ড পরিচালনার সক্ষমতা ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের রয়েছে কিনা, এ নিয়েও সংশয় রয়েছে।