শহরে ডান্ডি নেশায় আসক্ত পথশিশু

 In চাঁদপুর

কবির হোসেন মিজি:

চাঁদপুরেও নেশা হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়েছে আঠা বা গাম। বিশেষ করে ছিন্নমূল শিশু ও কিশোররা এতে আসক্ত হচ্ছে বেশি। মূলত অল্প টাকায় আঠা বা জুতার গাম কিনতে পারায় সহজে ব্যবহার করতে পারছে এ নেশাজাতীয় দ্রব্য। বিশেষ করে পথ বা ছিন্নমূলত শিশুদের মাঝে এর ব্যবহার সবচে বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এতে শহরে শহরে চুরি ছিনতাইসহ নানা অপ্রতিকর ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মূলত বেশ কয়েক বছর ধরেই চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে এই আইকা গামের ড্যান্ডি নেশা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায়ই দেখা যায় চাঁদপুর রেলওয়ে কোট স্টেশনে অবস্থানরত এবং অন্যান্য স্থানের টোকাই ও ভিক্ষুক এবং ছিন্নমুল পথ শিশু, কিশোর কিশোরীরা শহরের বিভিন্ন হার্ডওয়ারের দোকান থেকে জুতা ফরমিকায় লাগানো আইকা গাম ক্রয় করে তা পলিথিনে ঢুকিয়ে নাক, নাক ও মুখ দিয়ে সেই গামের গ্যাস টেনে নেশা হিসেবে ব্যবহার করছে।

বিশেষ করে কালী বাড়ি কোর্ট স্টেশন, রেলওয়ে বড় স্টেশন এবং ছায়াবাণী মোড়ের বিভিন্নস্থানে ঝোঁপ ঝাড়ে কিংবা গাছের ডালে বসে তারা এই মাদকে আসক্ত হচ্ছে। এদের বয়স ১০/১২ বছর থেকে শুরু করে ১৫/১৬ বছর বয়সী। আইকা ঘামের এই মাদকের জন্য কোন কোন কিশোরী কিশোরী আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছে বলে জানা গেছে। কেউ কেউ এ নেশার জন্য নিজের পরিবার পরিজন ছেড়ে নিজ জেলা থেকেও পালিয়ে এসেছেন চাঁদপুরে।

তারা চাঁদপুর শহরের কুমিল্লা রোডের একটি ও বড়স্টেশন এলাকার কয়েকটি হার্ডওয়ার দোকান থেকে এইসব গাম ক্রয় করে বলে জানা গেছে। যেখানে এক কৌটা গামের দাম ষাট টাকা। সেখানে ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা টোকাইদের কাছে তা বিক্রয় করে ৯০ থেকে ১শ ২০ টাকা পর্যন্ত। এক্ষেত্রে ওই গাম বিক্রেতাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

সম্প্রতি চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে পলিথিন দিয়ে আইকা গামের নেশায় আসক্ত হওয়ার সময় চাঁদপুর জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক সূফী খায়রুল আলম খোকন বেশ কয়েকবার বেশ কয়েকজনকে আটক করেছেন। ওই সময় ছোট এক কিশোরী যার বয়স ১২/১৩) বছর হবে। সে জানায় তার বাড়ী মুন্সিগঞ্জ মুক্তার পুর, সে আগে ঢাকার সদর ঘাটে থাকাবস্তায় এই নেশায় আসক্ত হয়। ৩/৪ বার তার বাবা মা তাকে ধরে নিয়ে বাড়ীতে শিকল দিয়ে আটকিয়ে রাখতো, ডান্ডির নেশার টানে সে সেই শিকল খুলে পালিয়ে যেতো, এবার সে কয়েক মাস আগে চাঁদপুরে এসে যমুনা রোডে একটি রুম ভাড়া নিয়ে ওই এলাকার আরেকটি কিশোরী মিলে বোতল খূড়িয়ে যা পায় তা দিয়ে গাম কিনে নেশায় আসক্ত হন। সে জানায়, আমি দিনে ৪/৫ বার নেশা না করলে আমি থাকতে পারি না। এই গ্রুপের দলনায়কের বয়স ১৭/১৮ বছর হবে আর সবার বয়স ১২ থেকে ১৫ বৎসরের মধ্যে। এভাবেই তারা দলের সদস্য বাড়িয়ে আইকা গামের ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত হন। ৮ নভেম্বর চাঁদপুর শহরের এসবি খাল থেকে মোঃ ইউসুফ বেপারী ওরফে খোকা (২৫) নামে এক ছিন্নমুল যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ। সেও এই ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। তাই চাঁদপুর শহরের এসব ছিন্নমুল পথ শিশু, কিশোর, কিশোরীদের ড্যান্ডি নেশার প্রতি খুবই জরুরী ভিত্তিতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। নয়তো দিন দিনই এর প্রবনতা আরো বেড়ে যাবে, নষ্ট হবে এইসব ছিন্নমুল কিশোরী কিশোরী, অকালে ঝরে যাবে কতনা প্রাণ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) স্নিগ্ধা সরকার জানান, আমরা ইতিমধ্যে চাঁদপুর শহরে কিশোর গ্যাং রোধ করতে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। একই সাথে গাঁজা, ইয়াবা সহ যেসব মাদক গুলো বেশি ছড়াছড়ি সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। আজকের পর থেকে কোন শিশু কিশোর রাস্তায় বিনা কারনে ঘুরাঘুরি এবং যেখানে সেখানে বেপরোয়া ভাবে অবস্থান করতে পারবে না। এই বিষয়েও আমরা কাজ শুরু করেছি। তিনি জানান, আজকের একটি মৃত্যুর ঘটনায় আমরা এই আইকা গামের ডান্ডি নেশার কথা জানতে পেরেছি তাই আমরা আজ থেকে এই বিষয়টির উপরেও গুরুত্ব সহকারে কাজ করবো।

Recent Posts

Leave a Comment