চাঁদপুরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে আতঙ্কিত মানুষ
চাঁদপুর চাঁদপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিনই অবনতি ঘটছে। বিশেষ করে চাঁদপুর শহরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন শহরবাসী। সন্ধ্যা বেলায় জনারণ্যে ডাকাতি, একের পর এক চুরি, অস্ত্রধারীদের মহড়া, পুলিশের হাত থেকে আসামি ছিনতাই, একের পর এক খুনের ঘটনা, আটকদের তদবির বাণিজ্য পুরো জেলাবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। অপরদিকে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকাও তেমন আশানুরূপ নয়। রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের তদবিরে আসা পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা পূরণ এবং প্রটোকলেই অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে অভিযোগ সুধিজনদের। জেলার প্রায় ২৬ লাখ মানুষের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে একজন এসপি (পুলিশ সুপার), দু’জন এডিশনাল এসপি, ৪ জন এএসপি, ২৪ জন ইন্সপেক্টর, ৯০ জন সাব-ইন্সপেক্টরসহ সব মিলিয়ে ১ হাজার ১শ’ ২৬ জন পুলিশ সদস্যের পদ। এরমধ্যে আবার নৌ-পুলিশের জন্য ৭৫ জনকে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উল্লেখিত পদের বিপরীতে বদলি,
মৃত্যু, অবসর, অসুস্থতা, ছুটিজনিত কারণে শতাধিক পুলিশের পদ বরাবরই শূণ্য থাকছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়মিত কাজে নিয়োজিত। এরমধ্যে আবার বিচার বিভাগ, উর্ধ্বতন প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দেহরক্ষী, হাউজগার্ড, ওর্ডারলি, জেলখানা ও বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি থেকে কোর্টে পাঠানো আসামিদের নিরাপত্তা, প্রতি থানা-ফাঁড়ির জন্য সেন্ট্রি ডিউটি, ডাক ডিউটি, মুন্সীর কাজ করার জন্য প্রায় দেড়শ’ পুলিশকে নিয়োজিত থাকতে হয়। এর বাইরে প্রায় ৫০০ পুলিশকে পুলিশ লাইনে রিজার্ভও রয়েছে। এসব বাদ দিলে প্রকৃতপক্ষে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে সর্বোচ্চ ২শ’ ৫০ জন। ফলে জেলা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে। মানুষ এখন পুলিশ ও প্রশাসনের উপর বিরক্ত। তারা বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হলেও পুলিশের কাছে যেতে চায় না। কারণ পুলিশের কাছে যেয়ে প্রতিকারের বদলে মিলে হয়রানী ও দুর্ব্যবহার। জানা গেছে, চাঁদপুর জেলায় গত পাঁচ মাসে একাধিক বিভিন্ন জঘন্য অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এর অধিকাংশেরই কোন কুল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। যেমন জানুয়ারির শুরু থেকে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চাঁদপুরে অন্তত ৫ জনকে পেট্রোল বোমা মেরে পুড়িয়ে মারা হয়। একটি মামলায়ও অভিযোগপত্র দাখিল, প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা যায়নি। এরপর এখন শুরু হয়েছে গণহারে চুরি এবং ডাকাতি। গত ১৯ মে দিবাগত রাতে শাহরাস্তি উপজেলার আয়নাতলী গ্রামের মৃত সৈয়দ আহম্মেদ শেখের পুত্র শেখ মাহবুব আলমের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় নগদ ২০ হাজার টাকাসহ ১ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এছাড়া একই গ্রামের মো. ছফিউল্যা পাটওয়ারীর ঘরে সিঁধ কেটে ডাকাত দল নগদ ৮শ’ টাকা ও ১টি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। গত ১৭ মে গভীর রাতে ফরিদগঞ্জ উপজেলার হাজি বাড়ির হারুনুর রশিদের বাড়িতে ডাকাত দল পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাত পা ও মুখ বেঁধে ৬ ভরি সোনা, নগদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ২টি দামি মোবাইল, ২টি লাইট লুট করে নিয়ে যায়। ওই রাতেই ডাকাতরা প্রবাসী সৈয়দ আহমদের ঘরে প্রবেশ করে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ৩ ভরি সোনা ও ২টি টর্চ লাইট নিয়ে যায়। এছাড়া এসব ঘটনার ১০/১৫ দিন আগে ওই এলাকার মুন্সী বাড়ির এ কে এম আশ্রাফ রহমান হিরণ ও বেপারী বাড়ির রিপন মিয়ার ঘরে প্রবেশ করে ডাকাতরা টাকা-পয়সা, স্বর্ণলঙ্কাসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। গত ১৯ মে মধ্যরাতে কচুয়া উপজেলার চাংপুর গ্রামেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাত দল দু’টি ঘর থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় ৩৫ লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয় বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি করেছে। ডাকাতদের হামলায় গৃহকর্তা দেলোয়ার হোসেন মেম্বার (৫০), তার ছেলে কাউছার (২৫) ও মেয়ে জেসমিন আক্তার (২৩) গুরুতর আহত হয়। সর্বশেষ গত ১৭ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চাঁদপুর শহরের ছৈয়াল বাড়ি রোডের ‘নূরজাহান ভিলা’য় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায়ও সশস্ত্র ডাকাতদল
১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ৬ ভরির মত সোনার অলঙ্কার নিয়ে যায়। এছাড়াও গত ২/৩ দিন আগে চাঁদপুর শহরের ডায়াবেটিক হাসপাতাল সংলগ্ন ‘জি এম টাওয়ার’ এ দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। চোর ওই টাওয়ারের গুদামের তালা ভেঙে প্রায় ২ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। গত ১৯ মে রাতে একযোগে চাঁদপুর শহরের পাঁচটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। একই দিন রাত সাড়ে ৮টায় শহরের স্ট্র্যান্ড রোড এলাকায় স্কুল ছাত্রী বোনকে বখাটে কর্তৃক ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করায় ভাইকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দূর্বৃত্তরা। গত মার্চ মাসের শেষদিকে সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামে একসাথে ৩ খুনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বুধবার রাতে শহরের আলিম পাড়াস্থ রাণী মহলের নিচতলার ভাড়াটিয়া নজরুল ইসলামের ঘরে চুরি হয়। চোরের দল ঘরে থাকা ১০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ২৫ হাজার টাকাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যায়। চাঁদপুরের সর্বত্র একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। আর এতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আশংকা করা হচ্ছে মানুষের রুদ্ররোষ শেষ পর্যন্ত না আরো বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। এসব বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এনায়েতউদ্দিন বলেন, তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানুষকে সেবা দিতে। আসলে ইতিপূর্বে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার ধকল কাটিয়ে উঠতে পুলিশের সময় লাগছে।