চাঁদপুরে ইলিশ নেই
চাঁদপুর প্রতিনিধি ‘বহু আশা নিয়া নদীতে যাই, তয় মাছ পাইনা, আর এভাবে চললে ক্যামনে চালামু সংসার, ক্যামনেইবা দিমু ধার-দেনা, ক্যানইবা এমন হইলো, আল্লাহ কি আমাগো দিগে মুখ ফিরা চাইতো না। আর অ্যামনেই চলতে থাকলে পোলাপাইন লইয়া না খাইয়া মরতে অইবো’- নদীতে ইলিশ না পেয়ে নিদারুণ কষ্টের কথা আক্ষেপের স্বরে প্রকাশ করলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার বহরিয়া এলাকার জেলে করিম মোল্লা। তার মত হাজার হাজার জেলে অভয়াশ্রম মৌসুমের দেনার বোঝা কাঁধে নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় অভয়াশ্রম শেষ হলেও এখনো দেখা মিলছে না ইলিশের। জেলেরা মাছ শিকারে গিয়ে শূণ্য হাতে ফিরছে। ফলে ইলিশ শূণ্য ইলিশের রাজধানী চাঁদপুর। পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ না পাওয়ায় জেলে পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে হাহাকার। ফলে অভয়াশ্রমের ধার- দেনা শোধ করার পথও খুঁজে পাচ্ছে না তারা। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা দাদন দিয়ে দিশেহারা মৎস্য ব্যবসায়ীরা। দেশের ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সরকার গত ১ মার্চ থেকে ৩০এপ্রিল
পর্যন্ত দু’মাস চাঁদপুরের মতলব ষাটনল থেকে হাইমচরের চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু অভয়াশ্রম মৌসুমে কতিপয় অসাধু জেলে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নির্বিচারে চালায় জাটকা নিধন। একারনে ইলিশের ভরা মৌসুমেও চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন সদর উপজেলার পুরান বাজার, শ্রীরামদী, রঘনাথপুর, লক্ষীপুর ও হরিনা ফেরিঘাট এলাকার ক্ষুদিরাম, মন্নান, রফিক, হাসান, অলিসহ হাজার হাজার জেলে। এছাড়াও শহরের বড় স্টেশন এলাকার জেলে নৌকার মালিক শরিফ হোসেন, ছোবহান চোকদার, স্বপন বর্মন ও গিয়াসউদ্দিন শেখের অভিযোগ অভয়াশ্রম চলাকালে প্রচুর জাটকা নিধন হয়েছে। তাই এখন নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা মৎস্য ও
বনিক সমিতির সেক্রেটারি ইদ্রিস আলী গাজী জানান, ব্যাপক হারে জাটকা নিধন, বিভিন্ন শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ মিশে পানি দূষন ও ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে পলি জমে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় ইলিশের পরিভ্রমন বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান জানান, নদীতে পানি ও ¯্রােতের পরিমান কম হওয়ায় এবছর এখনো চাঁদপুরে ইলিশের দেখা মিলছে না। যদিও সাগরে কিছু মাছ এখনো ধরা পড়ছে। তবে চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় ভরা বর্ষায় ইলিশ পাওয়া যাবে।