চাঁদপুরে ১শ’ ৭০ কিলোমিটারের বিদ্যুৎ যায় কোথায়!

 In চাঁদপুর

 

চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ১শ’ ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা কয়েক হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ ভোগান্তি চরমে উঠেছে। চোখের পলকের মতো বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া, দিনেরাতে মিলে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং, প্রায়ই বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে লাইন বন্ধ থাকা, গাছ পড়ে লাইন বন্ধ থাকা, জাতীয় গ্রীড থেকে ফিডার কাটা, ওভার লোডে লাইন ট্রিপ করা, ৬নং ফিডার এলাকাটি সমিতির দুই দপ্তরের মধ্যে কোন্ দপ্তরের তা নিয়ে টানাটানিসহ এমন নানান সমস্যায় ভোগান্তিতে পল্লী বিদ্যুতের বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রাহকরা। বিশেষ করে ৬নং ফিডারের ১শ’ ৭০ কিলোমিটার এলাকার গ্রাহকদের অসহনীয় লোডশেডিং কোনোভাবেই সহনীয় মাত্রায় আনা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি চাঁদপুর পল্লী সমিতিকে দু’ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যার মধ্যে চাঁদপুর পল্লী সমিতি সদর দপ্তর-১ হাজীগঞ্জের টোরাগড়ে, যেটি আগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তর নামে ছিলো। আর চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সদর দপ্তর-২ হচ্ছে চাঁদপুর শহরতলীর খলিশাডুলীতে।

এদিকে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন বিদ্যুতের মূল স্টেশন রয়েছে সদর উপজেলার কুমারডুগী গ্রামে। এখান থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনকে ৬ ভাগে ভাগ করে ৬টি ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ভাগ হয়ে যাওয়ার সময় ৬নং ফিডার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার দায়িত্ব একে অন্যের উপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ গ্রাহক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বহু গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা হলে হাজীগঞ্জ অফিসে ফোন দিলে বলে চাঁদপুর অফিসকে বলেন, আবার চাঁদপুর অফিসকে ফোন দিলে বলে হাজীগঞ্জ অফিসকে বলেন। ফোনের পরে ঠিকই লোক এসে লাইন মেরামত করে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সাথে এমন আচরণ কেনো বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের তা আমাদের জানা নেই।

৬নং ফিডারে থাকা বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সূত্রে জানা যায়, ওই ফিডারের লোকেরা বিদ্যুৎ নিয়ে সবচে’ বেশি বিপদে রয়েছে। এখানে প্রায় সময় চোখের পলক পড়ার মতো করে বারবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে থাকে। আবার ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে তো ৩ ঘণ্টা দেয়া হচ্ছে না। আবার দেয়া হচ্ছে ঠিক ২০ মিনিট পর নিয়ে যাচ্ছে, আবার দেয়া হচ্ছে তো কয়েক মিনিট পর নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই গত ক’মাস চলছে ৬নং ফিডারের বিদ্যুৎ সরবরাহ।

অনেক গ্রাহক ক্ষোভের সাথে বলেন, এই এলাকায় দিনে রাতে মিলিয়ে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার পরে কুমারডুগীতে থাকা ০১৭৬৯-৪০০৯২৫ নাম্বার ফোন করা হলে অপর প্রান্ত থেকে একেকবার একেক কথা বলা হয়ে থাকে। যেমন অমুক স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, অমুক স্থানে গাছ পড়ে লাইন বন্ধ রয়েছে, জাতীয় গ্রীড থেকে ফিডার কাটার কারণে লাইন বন্ধ রয়েছে, ওভার লোডে লাইন ট্রিপ করেছে। তবে অধিকাংশ সময় ওই ফোনটি রিসিভ করা হয় না বলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চাঁদপুর কণ্ঠের কাছে।

করিম নামে বাকিলা এলাকার এক গ্রাহক প্রশ্ন রেখে বলেন, দিনে অফিস আদালত, কল-কারখানা, বিপণী বিতান খোলা, তাই আমরা দিনে বিদ্যুৎ পাই না, কিন্তু রাতের বিদ্যুৎ যায় কোথায়? রাতে যেখানে মার্কেট, অফিসপাড়া, কল-কারখানা সব বন্ধ থাকে সেখানে গভীর রাতে আমাদের লাইনে লোডশেডিং কিসের?

৬নং ফিডারের বাসিন্দা বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, সীমাহীন লোডশেডিংয়ে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। এ নিয়ে আর নতুন কি বলবো। তবে আশাকরি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আমাদের ফিডারের সমস্যা দূর করে আমাদেরকে সহনীয় পর্যায়ে লোডশেডিং দিবে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কুমারডুগীতে কর্মরত এক প্রকৌশলীর সূত্রে জানা যায়, ৬নং ফিডার অর্থাৎ ১শ’ ৭০ কিলোমিটারের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে করা হয়েছে। যার মোট বিদ্যুৎ দরকার ৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে পৌনে ৫ মেগাওয়াট। কিন্তু ফিডার ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দুর্বল থাকার কারণে আড়াই মেগাওয়াটের বেশি লোড দিলে লাইন ট্রিপ করে। যে কারণে বিদ্যুৎ বারবার যাওয়া-আসা করে। তবে বলাখাল এলাকার সাব-স্টেশনটি চালু হলে ৬নং ফিডারটি ভাগ করার পরে এই এলাকায় লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

তবে ওই প্রকৌশলীর বক্তব্যের বাইরে একটু ভিন্ন কথা বললেন চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সদর দপ্তর-১-এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোঃ ইউসুফ। তিনি বলেন, ৬নং ফিডার বারবার ট্রিপ করার কারণ খুঁজে বের করার জন্যে আজ (মঙ্গলবার) টিম কাজ করবে। এর পরেই বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

Recent Posts

Leave a Comment