যুবরাজের ছয় ছক্কার সেই ম্যাচ
।। প্রথম বলটা মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে। বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড, ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং। দ্বিতীয় বলেরও একই নিয়তি, এবার ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে। দূরত্ব আরও বেশি, ১১১ গজ। তৃতীয় বলটাও মাঠের সীমানা উড়েই পার হলো, এক্সট্রা কাভার দিয়ে। তিন বলে তিন ছয়! কিছুটা থতমত হয়ে গেলেন ব্রড। খেই হারিয়ে চতুর্থ বলটা দিলেন ফুলটস। আবারও ছয়। ইংল্যান্ড দলের সবাই জড়ো হয়ে গেলেন ব্রডের চারপাশে। কিছুক্ষণের বৈঠক হলো। আবার বল হাতে নিলেন ব্রড। কিন্তু লাভ হলো না কিছুই। পাঁচ নম্বর ছক্কা হলো মিড উইকেটের ওপর দিয়ে, ছয় নম্বরটা মিড অন দিয়ে।
এক ওভারে ছয় ছক্কা! ঘটনাস্থল ডারবানের কিংসমিড স্টেডিয়াম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচ। ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যে যে ম্যাচটা হয়েছিল ২০০৭ সালের ঠিক এই দিনে—১৯ সেপ্টেম্বর।
শুধু এক ওভারে ছয় ছক্কার কারণেই নয়, যুবরাজের অসাধারণ সেই ইনিংসটি আরেকটি কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে ক্রিকেট ইতিহাসে। ওই ম্যাচেই টি-টোয়েন্টি তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সবচেয়ে কম বলে হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন যুবরাজ। মাত্র ১২ বলে ফিফটির সেই রেকর্ড টিকে আছে প্রায় ৯ বছর পরেও।
প্রথম শ্রেণি ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এখনো পর্যন্ত মাত্র চারজন ক্রিকেটার এক ওভারে ছয় ছক্কার এই অসাধারণ কীর্তি গড়তে পেরেছেন। এর মধ্যে ওভারে ছয় ছক্কার প্রথম দুটি কীর্তিই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। বাকি দুটোর একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে আর অপরটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের।
ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ওভারে ছয়টি ছক্কা মারার কৃতিত্ব ক্যারিবীয় কিংবদন্তি স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সের। ১৯৬৮ সালে ইংলিশ কাউন্টিতে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে খেলার সময় সোবার্স এক ওভারে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন গ্ল্যামরগনের ম্যালকম ন্যাশকে। এক ওভারে ছয় ছক্কা মারাও যে সম্ভব, সেটিও ওই প্রথম দেখল ক্রিকেট বিশ্ব!
১৬ বছর পর রঞ্জি ট্রফিতে সেই কীর্তি স্পর্শ করেন মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যান রবি শাস্ত্রী। বরোদার বিপক্ষে এক ম্যাচে ছয়টি ছক্কা মেরে শাস্ত্রী বসলেন সোবার্সের পাশে। সেদিন বারোদার দুর্ভাগা বোলার ছিলেন তিলক রাজ।
ওয়ানডেতে ছয় বলে ছয় ছক্কার একমাত্র কীর্তি হার্শেল গিবসের—২০০৭ বিশ্বকাপে হল্যান্ডের বিপক্ষে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও সে-ই প্রথম দেখল এক ওভারে ছয় ছক্কা। গিবসের তোলা ঝড়টা গিয়েছিল হল্যান্ডের বোলার ড্যান ফন বাঙ্গের ওপর দিয়ে। এরপর ওই বছরই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজের সেই কীর্তি।
মনেই হতে পারে, ব্রডের ওপর কি সেদিন কোনো কারণে রেগে ছিলেন যুবরাজ? আসলে তা নয়। রাগ তাঁর ছিল, তবে সেটা ব্রডের ওপর নয়, ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের ওপরে। এর আগের ওভারেই ফ্লিনটফ স্লেজিং করেছিলেন যুবরাজকে, যেটি নিয়ে দুজনের কথা-কাটাকাটিও হয়েছিল। সেই ঝালটাই পরে যুবরাজ ঝেড়েছেন ব্রডের ওপর!