জন্মও একসাথে, মৃত্যুও একসাথে
জানা যায়, বাখরপাড়া গ্রামের হাজী বাড়ির আনিসুর রহমানের সংসারে ঠিক দেড় বছর আগে যমজ দু’ সন্তানের জন্ম হয়। ভাগ্যবান এ পরিবারের যমজ সন্তানের মধ্যে একজন ছেলে আর একজন মেয়ে সন্তান জন্মায়। নাম রাখা হয় মুস্তাফিজুর রহমান ও মরিয়ম আক্তার মুনতাহা। দু জনের বয়স ১৮ মাস হলেও পৃথিবীতে আসার ব্যবধান ভাই-বোনের মধ্যে মাত্র আধা ঘন্টা। বাবা-মায়ের কোলজুড়ে থাকা সেই যমজ দু ভাই-বোন বড় হতে থাকে।
গেলো ক’দিন আগে তাদের ১৮ মাস মানে দেড় বছর পূর্ণ হয়। কে জানতো তারা দু’ভাই-বোন মাত্র ১৮ মাস হায়াত নিয়ে এ পৃথিবীতে এসেছে? নিয়তি তাদের বাঁচতে দিলো না। গতকাল সোমবার সকালে মায়ের কাছে থেকেই নাস্তা খাওয়া শেষের মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মুস্তাফিজ আর মরিয়ম। আর তখন থেকেই ওই পরিবারের ইতিহাসে নেমে আসে এক কালো অধ্যায় যা ওই পরিবারকে যুগ-যুগান্তর শোকাতুর ইতিহাস হিসেবে মনে রাখতে হবে।
সরজমিনে গতকাল সোমবার সকালে হাজী বাড়িতে গেলে দেখা যায় পুরো বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। আর ঘরের উত্তর পাশে রান্না ঘরের সামনে দেখা যায় নিহত শিশু দুটির মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। বাবার হাউ-মাউ কান্না ঘরের ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছিলো। আর ঘরের পশ্চিম পাশে বাড়ির উঠানে দুটি পাটির উপর শিশু দুটির লাশ চাদর দিয়ে ঢেঁকে রাখা হয়েছে। যে কোনো পাষাণ ব্যক্তি এ হৃদয় বিদারক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে তার চোখে একবারের জন্যে হলেও পানি চলে এসেছে।
শিশুদের দাদা হাজী আঃ রব জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বউ মা (নিহত শিশুদের মা) নাতি-নাতনিকে নিজের হাতে নাস্তা খাইয়ে উঠানের দিকে খেলতে পাঠায়। এর মধ্যে কোনো এক ফাঁকে ঘরের কাছের পুকুরের পাকা ঘাটে দিয়ে পানিতে পড়ে যায় দু’ ভাই-বোন। কাজের ফাঁকে কি কারণে যেনো পুকুরের দিকে আমার নজর চলে গেলে দেখি নাতিটা পানিতে ভাসছে। চিৎকার দিয়ে পানিতে নামার আগে একটু দূরে দেখি নাতনির লাশ ভাসছে। এ কথা বলে আঃ রব কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
শিশু দুটির মৃত্যুর বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানিতে ডুবে যাওয়া শিশু দুটির দাফন করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।