টাকা নেওয়ার মানুষ নেই

 In বিশেষ প্রতিবেদন, ব্যবসা বাণিজ্য

টাকা নেওয়ার মানুষ নেই

ব্যাংকগুলোর কাছে টাকা নেই! তারল্য সংকটে ভল্ট ফাঁকা! ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য টাকা পাচ্ছেন না! ৩/৪ বছর আগেও এমন অসংখ্য অভিযোগ উঠত। এসব অভিযোগ থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। অভাব দূর হয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকের ভল্ট উপচে পড়ছে টাকা। উদ্বৃত্ত এ টাকাই এখন ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কী সেই সমস্যা তা জানতে পরিবর্তন ডটকমের ৩ পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হল :

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ভল্টে বর্তমানে ২ লাখ ৪৭ হাজার কোটি নগদ টাকা রয়েছে। এরমধ্যে তাৎক্ষণিক নগদ প্রয়োজন মেটাতে ও প্রতিদিনের লেনদেন সচল রাখতে ব্যাংকগুলোর প্রয়োজন ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ভল্টে পড়ে আছে অলস টাকা হিসেবে। গত ৭ বছরে এ অলস অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকা। অথচ বিনিয়োগের জন্য টাকা নেওয়ার মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাংক।

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে এতদিন তারল্য সংকট ছিল। এখন হচ্ছে তারল্য উদ্বৃত্ত সংকট। এই সংকট আগে বাংলাদেশে খুব কমই হয়েছে। আসলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সঠিকভাবে টাকা বিনিয়োগ হয় না বলেই। এদেশে ঋণ দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াতেই গলদ আছে। সবাই শুধু বড় বড় গ্রাহক খুঁজে। ছোটদের কাছে কেউ যায় না। ঋণও দেয় না।’

আবুল বারাকাত বলেন, ‘এদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণ দেওয়ার পুরো সিস্টেমটাই করাপ্টেড। যে ঋণ বিতরণ হয় তার ৮০ শতাংশই ৫ শতাংশ মানুষের হাতে। বাকি ২০ শতাংশ ৯৫ শতাংশ মানুষের মাঝে বিতরণ হয়। ব্যাংকগুলো সব সময় ঋণ দেওয়ার জন্য বড় গ্রাহক খুঁজে। তারা ৫০০ কোটি টাকার গ্রাহক ১ জন খুঁজে। এটা ঠিক না। এখানে ঝুঁকিও বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘এটা না করে ১ কোটি টাকার ৫০০ জন গ্রাহককে ঋণ দেওয়া উচিত। এটা করা হলে দেশের শিল্পায়ন ও বাস্তবিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হবে। ঝুঁকিও কমবে। কারণ ছোট গ্রাহকরা কখনো ব্যাংকের টাকা মারে না। এ যাবতকালে ব্যাংকের যত ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে বড় গ্রাহকরা করেছে। সুতরাং ব্যাংকের অলস টাকা বিনিয়োগের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে।’

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ব্যাংকে অলস টাকা পড়ে আছে। অথচ বিনিয়োগ করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি নেই। বর্তমান সরকারের বাইরের দলগুলোর সমর্থনকারীরা (দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ধারার বাইরে আছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরোধীদের বিনিয়োগের তো প্রশ্নই আসে না। বরং যে সকল ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল অনেকেই গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা ও অসহযোগিতার কারণে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তাদের টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে। মূলত এটাই দেশের ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত ও বিনিয়োগ খরার মূল কারণ।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা এ বিষয়ে বলেন, ‘অলস টাকা বিনিয়োগের জন্য সম্প্রতি আমরা ব্যাংকগুলোকে ডেকেছি। তাদের বলেছি, দেখে ভালো খাতে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও এসএমই খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করার জন্য। এসব খাতে বিনিয়োগ হলে অলস টাকার পরিমাণ কমে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে টাকা বিতরণের জন্য আমরা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দিয়েছি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টাকা বিতরণে কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে তাদেরকে কোনো তহবিলের অর্থ দেওয়া হবে না। ঋণ বিতরণে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো প্রণোদনার কোনো অর্থ পাবে না।’

Recent Posts

Leave a Comment