পরাজয় প্রস্তুতি, ভোট কারচুপির অগ্রিম অভিযোগে ট্রাম্প!

 In দেশের বাইরে

 

পরাজয় প্রস্তুতি, ভোট কারচুপির অগ্রিম অভিযোগে ট্রাম্প!

নভেম্বরের ৮ তারিখ নির্বাচন। নানা বিতর্কের পর এবার পাতানো নির্বাচন ষড়যন্ত্রের নতুন তত্ত্ব নিয়ে মাঠ কাঁপাতে চান রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ মেইন এর একটি জনসভায় ট্রাম্প এই অভিযোগ তুলে বলছেন, এ ধরনের প্রচেষ্টা সফল হবে এবং তা ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলছেন তার কর্মী সমর্থকদের। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে পরাজয় আঁচ করতে পেরে নিজের অযোগ্যতা ঢাকতেই আগে থেকে অভিযোগ জানিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।

গণতন্ত্র আর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্বজুড়েই প্রশংসিত। গত ৪৪টি নির্বাচন হয়েছে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা আর কারচুপির বড় অভিযোগ ছাড়াই। এবারও সেই ধারা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টার মধ্যেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প একাই বলে যাচ্ছেন, হিলারি একটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে যেতে চাইছেন এবং নির্বাচনকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে সকল আয়োজন সম্পন্ন বলে গলাবাজি করছেন।

‘সরকারি ব্যবস্থা যদি সঠিক পথে থাকত তাহলে হিলারির এখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ থাকত না, তাকে জেলে যেতে হতো। দায়িত্বে থাকাকালীন হিলারির নানা অপকর্মের এত তথ্য দিচ্ছে উইকিলিকস, তবু গণমাধ্যম সেগুলো নিয়ে কথা বলছে না। বলছে, ট্রাম্প ২০ বছর আগে বা ৩৫ বছর আগে কি করেছে সেটা নিয়ে। একটা পাতানো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সব যন্ত্র হিলারির জন্য কাজ করছে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। এটাকে ঠেকিয়ে দিতে হবে বন্ধুরা’ – রোববার উত্তরের মেইন রাজ্যে একটি জনসভায় বলছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বেশ কয়েকদিন ধরে অনেক অপ্রচলিত ভাষায় কথা বলে, নিজের মন মেজাজ আর অস্থিরতা প্রকাশ করেছেন ঢালাওভাবে। এমনকি মঙ্গলবারের শেষ প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের আগে হিলারির ড্রাগ টেস্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কেন এই অসংযত কথাবার্তা বলে চলেছেন ট্রাম্প তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন খোদ রিপাবলিকান বিশ্লেষক আর ট্রাম্প ঘনিষ্ঠজনরাও। সাবেক হাউস স্পিকার নিট গ্রিনরিচ বলছেন, তার কথাবার্তা একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মতো শোনাচ্ছে না।

‘সমস্যা হচ্ছে ট্রাম্প যখন স্ক্রিপ্ট দেখে ইস্যুভিত্তিক বিষয়ে কথা বলেন তখন তিনি ভালো কথা বলেন। কিন্তু যখন জনসভায় কথা বলেন, সেগুলো ভালো কথা, তবে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মতো কথা নয় এগুলো’-বলছিলেন গ্রিনরিচ, যাকে এক সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও বিবেচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এতসব অভিযোগ, অনুযোগের মধ্যেও নির্বাচনে কারচুপির প্রসঙ্গ বার বার সামনে এনে দ্রুত আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন ট্রাম্প। আর এসব নিয়ে নানা বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন ট্রাম্পের উপদেষ্টামণ্ডলী আর কাছের মানুষজন।

নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি বলেছেন, নির্বাচনে কারচুপি বলতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট কারচুপি নিয়ে সন্দেহ করছেন না ট্রাম্প। বরং গণমাধ্যম যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে ট্রাম্পকে পরাজিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই তারা আগাচ্ছে, সেটার প্রভাব নিয়েই চিন্তিত ট্রাম্প। নিউজ টুডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের অবস্থান ব্যাখ্যা করছিলেন, যখন উপস্থাপক ট্রাম্পের একজন কট্টর সমর্থকের করা উক্তি নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করছিলেন জুলিয়ানিকে।

‘হিলারি যদি কারচুপি করে ওভাল অফিসে যায়, তাহলে সেটা তারা প্রতিহত করবেন। একটি ক্যু সৃষ্টি করবেন এবং হিলালিকে জেলে নিয়েই ছাড়া হবে অথবা তাকে গুলি করা হবে’- একটি ভিডিওচিত্র জুলিয়ানিকে দেখিয়ে উপস্থাপক তার জবাব চাইছিলেন। কার‌ণ, ট্রাম্পের এসব নেতিবাচক প্রচারণায় নির্বাচনের দিন অথবা নির্বাচন পরবর্তী সম্ভাব্য সহিংসতা বা রক্তপাত ঘটে কিনা সেটা নিয়েই উদ্বিগ্ন অনেকেই।

সিএনএনসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সব দিক দিয়েই বুঝতে পেরেছেন যে তিনি নিশ্চিত হারতে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, ব্যক্তি জীবনে দেশের অন্তত ৪৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন অফিসে বা প্রভাবশালী পুরুষের মাধ্যমে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন তাদেরই প্রতিচ্ছবি-এমন আলোচনা তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ট্রাম্পবিরোধী যৌন হয়রানির অভিযোগের মাধ্যমে। আর ভুক্তভোগী এসব নারী ভোটার কিংবা স্বতন্ত্র ভোটারদের তার দিকে ঝুঁকে পড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই আপাতত। তাই পরাজয় পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলায় পাতানো নির্বাচনের অভিযোগ শুনিয়ে রাখছেন আগে ভাগেই।

Recent Posts

Leave a Comment