লক্কর ঝক্কর লিফট সরকারি হাসপাতালে

 In জাতীয়, শীর্ষ খবর

 

লক্কর ঝক্কর লিফট সরকারি হাসপাতালে

রাজধানী ঢাকায় বহুতল ভবনের বাসা, অফিস, শপিং মল কিংবা হাসপাতালে উঠানামা করার একমাত্র ভরসা লিফট। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি, নিম্নমানের লিফট যন্ত্র স্থাপনসহ নানা কারণে প্রায়ই ঘটছে লিফট দুর্ঘটনা। চলতি বছর এ রকম অনেক ঘটনায় বেড়েছে হতাহতের সংখ্যা। যা নগরবাসীকে অনেকটা শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।

বাসাবাড়ি, অফিসের পাশাপাশি দেশের সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ লিফট লক্কর ঝক্কর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফটের দূরবস্থার কথা স্বীকার করেছে স্বয়ং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চলতি বছর রাজধানীর ‍উত্তরায় আলাউদ্দিন টাওয়ারের লিফটের রশি ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত হন। ওই ঘটনায় উদ্ভুত অগ্নিকাণ্ডে আহত হন অর্ধশতাধিক। এছাড়া চলতি মাসে সচিবালয়ে দীর্ঘ সময় লিফটে আটকে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম। তারপরও সরকারি ভবন এমনকি সরকারি হাসপাতালের লিফটের দূরবস্থা নিরসনে সরকারের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ১৫টি লিফট রয়েছে। নতুন বিল্ডিংয়ে ৭টি, সার্জারি বিভাগে ৩টি (১টি নষ্ট), নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে ১টি, কেবিন ব্লকে ২টি (১টি নষ্ট) এবং বার্ন ইউনিটে ২টি। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩১টি লিফট রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫টি লিফট নতুন। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা দেয় এই দুই হাসপাতাল। সেখানের রোগী ও চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওঠানামা করেন লিফটে!

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিন ব্লকের লিফটের দরজা খুলতে অনেক সময় নেয়। এছাড়া ঠিকমতো বাটনগুলো কাজও করে না। একই চিত্র জরুরি বিভাগ থেকে সার্জারি বিভাগে যাওয়ার একটি লিফটের। মূলত: ওই লিফটের সাহায্যে রোগী ওঠা-নামানোর কাজ করা হয়। খুব ধীরগতিতে চলা লিফটিটির দরজা খুলতেও অনেক সময় লেগে যায়। শোনা গেছে, মাঝে মধ্যে সার্জারি বিভাগের লিফটের দরজা খোলার জন্য অপারেটরদের সাহায্য নিতে হয়!

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সি-ব্লকের লিফটের নিচের অংশ ফাঁকা (লিফট ও ফ্লোরের সংযোগস্থান)। এছাড়া অধিকাংশ লিফট ঝাঁকুনি দেয়। কোনো লিফটের ভেতরে এসি নেই।  অনেক লিফটের জরুরি কলের বাটনের স্থান ফাঁকা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটের সার্বিক অবস্থার কথা হাসপাতালের উপ-পরিচালক খাজা আবদুল গফুরকে জানালে তিনি  বলেন, ‘লক্কর ঝক্কর লিফট ঢাকা মেডিকেলে একটি। তবে সার্জারি বিভাগে যেতে যে দুটি লিফট রয়েছে তার একটি লক্কর ঝক্কর। আর কেবিন ব্লকের একটি লিফট ব্যবহার হয় না। এছাড়া লক্কর ঝক্কর ওই দুটি লিফট প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চলছে। আর নিউরোলজি বিভাগে একটি লিফট বসানো হবে।’

চলতি মাসে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম প্রায় আধা ঘণ্টা লিফটে আটকে থাকেন। এমনভাবে কোনো রোগী লিফটে আটকে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। তাই লক্কর ঝক্কর লিফটের বিষয়ে কিছু ভাবছেন কি? জানতে চাইলে আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা ভাবছি। তবে আমাদের সব লিফট লক্কর ঝক্কর নয়। নতুন ভবন ও বার্ন ইউনিটের লিফটগুলো নতুন।’

একই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. শাহিদ আকতার বলেন, ‘লিফটে সমস্যা হলেও অধিক সময় আমাদের লিফট বন্ধ থাকে না। যদি কখনও সমস্যা হয় তা সর্বোচ্চ দুই চার পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। লিফটের ওপরে আমাদের অপারেটর থাকে। এমন সমস্যা মাঝে মধ্যে হয়। আর তা দুই তিন মিনিটের মধ্যে সমাধান হয়ে যায়।’

এই হাসপাতালের ৩১টি লিফটের মধ্যে মাত্র ৫টি নতুন জানালে তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৪ ঘণ্টা লিফট চলতে থাকে। এই কারণে লিফট পুরনো মনে হয়। কিন্তু লিফটগুলো বেশি পুরনো নয়, সর্বোচ্চ ১০ বছর হবে। লিফট ও ফ্লোরের ফাঁকা অংশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ চলছে তাই ফাঁকা। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফট সরবরাহকারী বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, অধিকাংশ সময় লিফট দুর্ঘটনার কারণ সার্ভিসিংয়ের অভাব। প্রতি মাসে লিফট সার্ভিসিং করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হয় না। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক জটিলতার কারণে ঠিকমতো লিফট সার্ভিসিং করানো হয় না।

Recent Posts

Leave a Comment