সংযোগ পেতে উৎকোচ আর হয়রানির শিকার হতে হয় যেখানে
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর বিদ্যুতের সংযোগ প্রত্যাশীদের ভোগান্তি যেন এখন নিত্য সঙ্গী। পাশাপাশি রয়েছে এ সমিতির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। আবেদন থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করে টাকার বিনিময়ে সংযোগ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। নতুন নতুন নিয়ম আর নানা অজুহাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয় পল্লী বিদ্যুতের অলিখিত দালালদের মাধ্যমে। দালাল ব্যতীত কোনো প্রার্থী যদি কোনো সংযোগের জন্য আবেদন করেন, তাহলে সে সংযোগ কখন মিলবে বা আদৌ মিলবে কিনা এমন প্রশ্ন এখন পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ প্রত্যাশীদের।
একাধিক গ্রাহকের এমন অভিযোগের সত্যতা প্রমাণে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ প্রতিনিধি সরজমিন গেলে উঠে আসে পল্লী বিদ্যুতের সীমাহীন দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির চিত্র। নতুন সংযোগের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে যথাযথ কাগজ পত্রাদিসহ অফিসে জমা দিতে গেলেই শুরু হয় গ্রাহক হয়রানি। হয়রানিগুলো হচ্ছে অনেকটা এই রকম : আবেদনের ২ কপি জমা দিতে হবে, কাউন্সিলর দ্বারা স্বাক্ষরিত সত্যায়িত কপি হবে না, দলিলের প্রতি পাতায় সত্যায়ন করতে হবে, পাশের বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের কপি জমা দিতে হবে_ এ রকম নানা অজুহাত। আর এই অজুহাতগুলো দিয়ে থাকেন পল্লী বিদ্যুতের নিচ থেকে উপরের কর্মচারীরা। এ সকল সমস্যাই সমস্যা থাকবে না যদি তাদের দেয়া হয় উৎকোচ। শুধু তাই নয়, ওইসব কর্মচারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আগত গ্রাহকদের কাগজপত্র ঠিক নেই বলে এই টেবিল ওই টেবিল হতে স্বাক্ষর নিতে হবে বলে গ্রাহকদের হয়রানি করে।
দাসদী গ্রামের মৃত ইব্রাহীম কাজীর ছেলে কাজী নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সত্যায়ন করে জমা দিতে গেলে তাকে অফিস থেকে ফেরৎ পাঠানো হয় আবেদনের ২ কপি জমা দেয়ার জন্য। পুনরায় তিনি যখন আবার অফিসে যান তখন তাকে বলা হয় কাউন্সিলর দ্বারা সত্যায়ন করলে হবে না মেয়র দ্বারা সত্যায়ন করতে হবে। তাদের এ সকল অজুহাত টাকার জন্য বুঝতে পেরে তখন ভুক্তভোগী ব্যক্তি সাংবাদিককে জানালে কিছুক্ষণ পরই তার সমস্যা (!) সম্বলিত আবেদন গ্রহণ করা হয়।
আবাসিক সংযোগের জন্য আবেদন জমা দিতে হলে কী কী প্রয়োজন তা পল্লী বিদ্যুতের ওয়েবসাইটে দেখা যায় যে, অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে স্বাক্ষর করে সংযোগ প্রত্যাশী ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত রঙিন ছবি, জমির মালিকানা দলিলের সত্যায়িত কপি ও সংযোগ ভেদে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি প্রয়োজন।
এদিকে দীর্ঘদিন যাবৎ আবেদন জমা দিয়ে থাকলেও অনেক গ্রাহক নানা অজুহাতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে না বলে জানান। অথচ দালালদের মাধ্যমে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে কোনো হয়রানি না হয়েই মিলছে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ। কিভাবে সম্ভব এ বিষয় জানা যায় নাম প্রকাশে পল্লী বিদ্যুতের এক দালালের মাধ্যমে। তিনি জানান, আবেদন জমা নেয়ার পর ইন্সপেক্টর সরজমিনে গিয়ে সংযোগ স্থল থেকে খুঁটির দূরত্ব এবং কত নং ট্রান্সফর্মারের অন্তর্ভুক্ত তার রিপোর্ট জমা দেন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের নিকট। এরপর জুনিয়র ইঞ্জিনিয়র ফাইলটি দেখে গ্রাহককে জামানতের টাকা জমা দেয়ার জন্য অনুমতি দেন। এই তিন টেবিলেই গ্রাহকদেরকে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় বলে দালালচক্র জানান। তিনি আরও বলেন, আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয় ঘুষের বিনিময়ে। ইন্সপেক্টর থেকে ইঞ্জিনিয়র পর্যন্ত প্রত্যেকেই প্রতিটি ফাইল বাবদ টাকা নিয়েই স্বাক্ষর করেন।
পল্লী বিদ্যুতের সংযোগের জন্য সমীক্ষা ফি ১শ’ টাকা, সংযোগ জামানত ফি প্রায় ৬শ’ টাকা ও সদস্য ফি ৫০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও প্রত্যেক গ্রাহককে এই সকল কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে অতিরিক্ত হাজার হাজার টাকা দিতে হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জিএম মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, কাগজপত্রাদি সত্যায়ন করতে হবে মেয়র, পৌর কাউন্সিলর, চেয়ারম্যানের নিকট থেকে। গ্রাহকদের হয়রানি সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি কোনো গ্রাহক হয়রানি হয় তাহলে যেন সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করে। তারপরও আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি