স্কুলের রাস্তা নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ

 In চাঁদপুর, চাঁদপুর সদর উপজেলা

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্কুলের নতুন রাস্তা নির্মাণের জন্যে দেয়া বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য। নতুন রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। এ ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১ নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব দামোদরদী গ্রামে। রাস্তা নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ করা ইউপি সদস্য হলেন কাশেম বেপারী। সম্প্রতি এ ঘটনা নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, দামোদরদী মান্নান প্রধানীয়ার বাড়ি থেকে সুলতান হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত এবং মাহবুবের দোকান থেকে দামোদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্যে ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাশেম বেপারীকে। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ কাজ শেষ না করেই বরাদ্দের টাকা উঠিয়ে নেন। যার ফলে বর্তমানে রাস্তাগুলোর কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। এদিকে পূর্ব দামোদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তাটি পুনঃসংস্কার না হওয়ায় যাতায়াত করতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুলের শ’ শ’ শিক্ষার্থী। রাস্তাটি ঠিক না থাকার কারণে বিকল্প রাস্তায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দামোদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আগের রাস্তাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিলো। স্থানীয়রা পরবর্তীতে রাস্তা নির্মাণের জন্যে ১শ’ ৫০ ফুট জমি দান করেন। এ রাস্তাটি পুনঃসংস্কারের জন্যে ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ এলেও রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন না করেই টাকা তুলে নেন প্রকল্পের চেয়ারম্যান কাশেম বেপারী। বর্তমানে এ রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

দামোদরদী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আরিফ বিল্লাহ বলেন, স্কুলের রাস্তা নির্মাণের জন্যে সরকার ইজিসিসি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দিয়েছিলো। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য রাস্তাটির কিছু কাজ করেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছেন। রাস্তা না হওয়ায় আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে রাস্তা নির্মাণের বরাদ্দ আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে অনুরোধ জানাই।

 
পূর্ব দামোদরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাশেম মিয়াজী বলেন, এই একটি রাস্তার সংস্কার কাজ না করার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে কতটা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। রাস্তাটির কাজ সমাপ্ত না করায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে একটি বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। প্রতি সপ্তাতেই এই সাঁকো থেকে দু-তিন জন শিক্ষার্থী নদীতে পড়ে যায়। গত সপ্তাহেও একজন শিক্ষার্থী নদীতে পড়ে গেলে স্থানীয় মানুষজন তাকে উদ্ধার করে। এর আগে দুজন শিক্ষার্থী সাঁকো পার হতে গিয়ে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। আমরা প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। রাস্তাটি নির্মাণ হয়ে গেলে এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পেতাম
ইজিসিসি প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত না হলেও ঠিকই টানানো হয়েছে প্রকল্প সমাপ্তির সাইনবোর্ড। সেখানে কাজ শুরুর তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১৭ এবং কাজ সমাপ্তির তারিখ গত ২১ জুন উল্লেখ করা হয়। অথচ বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ারম্যান ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাশেম বেপারী বলেন, ‘ড্রেজারের অভাবে রাস্তার কাজ শেষ করতে পারি নি। এখন দু-একদিনের মধ্যে বাকি কাজ সমাপ্ত করবো।’ প্রকল্পের মেয়াদ গত ২১ জুন শেষ হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেন কাজ করেন নি, জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেন নি।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Recent Posts

Leave a Comment