দিন শেষে পুজি আক্ষেপ!
আগের দিন ৩ উইকেটে ১২৭ রান নিয়ে যখন খেলা শেষ করলো বাংলাদেশ, তখন সামনে ফলোঅনের চোখ রাঙানি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগে খেলা চার টেস্টে কখনো ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ওদের মাঠে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২৫২ রান। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ৩ উইকটে করা ৪৯৬ রানের বিপরীতে তাই আরেকটা ইনিংস হার ভয় দেখাচ্ছিল। যদিও দ্বিতীয় দিন শেষে তাসকিন আহমেদ বলে গিয়েছিলেন এই ম্যাচে এখনো হারের কথা চিন্তাই করছে না বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনে ইনিংস হারের শঙ্কাকে ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু হার এড়ানোর শঙ্কা যে এড়াতো পারলো না।
অথচ দারুণভাবে দিনটা শেষ করতে পারতো বাংলাদেশ। যে চারটি জুটি বড় না হওয়ার আক্ষেপ সেগুলো বড় হলে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৯৬ রানটাও তো ধরে ফেলা যায়। এভাবে বললে এখন বাড়াবাড়ি লাগতে পারে। তবে ধরে ফেলা না গেলেও বাংলাদেশ অন্তত আরো একশ রানের ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েও তা হেলায় হাত ছাড়া করেছে। ৫ উইকেটে ২৯২ রান করার পর হঠাৎ ঝড়ে মাত্র ২৮ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। আগের দুই দিন হতাশায় পার করার পর একটু খানি যদি কেউ স্বপ্ন তাড়িত হয়ে থাকে, তবে দিন শেষে সেটি পরিণত হয়েছে আরো বেশি হতাশায়।
উইকেটে যে কোন জুজু ছিল এমন বলার তো উপায় নেই। প্রথম দিন শেষে সাব্বির রহমানই বলেছিল, এই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা একহাজার রান করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার সিমিং কন্ডিশনে সচারাচর যে ধরনের সবুজাভ উইকেট হয়, পচেফস্ট্রুমে একবোরেই তার বিপরীত। পুরোপুরি ফ্ল্যাট উইকেট, ব্যাটসম্যানদের জন্য যা আদর্শ। কিন্ত খেলাটা টেস্ট ক্রিকেট বলে সেই আদর্শ ব্যাটিং উইকেটেও ব্যাটসম্যানদের দিতে হয় চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তা দিতে পারলেন কই।
আগের দিন চা বিরতির পর ৪৯ মিনিট ফিল্ডিংয়ে ছিলেন না। তাই পাঁচ নম্বরে নেমে আসতে হয়েছিল ওপেনার তামিমকে। আশা জাগিয়ে যিনি থামলেন ৩৯ রান করে। হাথুরু সিংহের বরাবরের অবহেলার পাত্র মুমিনুল হক দুর্দান্ত খেললেন। একই রকম মুগ্ধতা ছড়ালেন শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের শততম টেস্ট ম্যাচের আগে সাদা পোশাকের দল থেকে বাদ পড়া মাহমুদউল্লাহ। প্রথম জন ৭৭ রান করে মহারাজ আর পরের জন ৬৬ রান করে মরনে মরকেলের শিকার হলেন। এই দুজনের মাঝে ৩০ রানে ফিরে যান সাব্বির। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানদের রানগুলো এমন- এলগার ১৯৯, মারকরাম ৯৭, হাশিম আমলা ১৩৭।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের কাছে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বোলাররা ছিল অসহায়। কিন্তু মহারাজ, রাবাদা, মরকেলরা ঠিকই এই ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটেও সফল। আর তাই ৫জন বোলার উইকেটের দেখা পেলেন। কেশব মহারাজ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিলেন। মরনে মরকেল ও কাগিসো রাবাদা ২টি করে উইকেট পান। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন দুয়ানে অলিভার ও আনদিলে ফেলুকায়ু।
ম্যাচের শুধু শেষ বিকেলের অংশটা মনে করলে সেখানে আবার বাংলাদেশর সাফল্যই। আগের ইনিংসে দুই সফল ব্যাটসম্যান ডিন এলগার ও আইডেন মারকরামকে টাইগার বোলাররা ফেরালেন দ্রুতই। এলগার ১৮ রান করে ফিরেছেন শফিউল ইসলামের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়ে। ১৫ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার মারকরাম। কিন্তু তারপরও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে না পারলে এই টেস্টে এখনো পরাজয় ভালোভাবেই চোখ রাঙাচ্ছে।
টেস্টের বাকী এখনো দুই দিন। হাশিম আমলা ১৭ রান নিয়ে উইকেটে, সঙ্গি বাভুমা অপরাজিত ৩ রানে। ফ্যাফ দু প্লেসে, ডি ককরা নামবেন এরপর। ২৩০ রানের লিড তো ইতিমধ্যে জমা পড়েছেই। তার উপর আরকটা পরীক্ষা তো আছেই। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং। দেখা যাক তৃতীয় দিনে ভালো বোলিংয়ের এই শুরুটা চতুর্থ দিনেও ধরে রেখতে পারে কিনা বাংলাদেশ। তাতে চতুর্থ ইনিংসের প্রশ্ন পত্র কিছুটা হলেও সহজ হবে হয়তো!