আইনের চর্চা বেগবান করার আহ্বান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির

 In আইন আদালত, প্রধান খবর

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেছেন, আইনজীবীরা আইনের চর্চাকে গভীরভাবে অনুসরণ করে নিজেকে বিকশিত করবেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার কিছুটা ভাটা পড়েছে। তাই আইনের চর্চা আরও বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান হলে বিজয়া পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিজয়া পুনর্মিলনী পরিষদ।

আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, ‘বিদ্যা চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে আইনজীবী সমিতির ভূমিকা অপরিসীম। নবীন আইনজীবীদের মেধার প্রকাশ ও বিকাশে সুপ্রিম কোর্ট বারের সিনিয়র আইনজীবীরা আরও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মীয় সকল উৎসব আয়োজনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার দৃঢ়তম হয়।’

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের মহান সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সম্পর্কে স্পষ্ঠভাবে বিধৃত আছে- (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে। (২) কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনো ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাহাকে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজ জীবনে একই ভূখণ্ডে, একই বলয়ে বসবাস করতে হলে নানান ধর্ম-গৌত্র-বর্ণ-সম্প্রদায় সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকের সঙ্গে বসবাস করতে হয়। একটি বাগানে নানান জাতের ফুল থাকে, তেমনি একটি রাজ্যে বা রাষ্ট্রে নানান জাতের মানুষ থাকবে। সুতরাং নানান জাতের সঙ্গে সহাবস্থান, ঐক্য, সংহতির মাধ্যমে একত্রে বসবাস করে মানবজাতির ধর্ম ও সমাজের উন্নয়ন করতে সকলকে বদ্ধ পরিকর হতে হবে।’

বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, ‘ধর্ম ব্যক্তি বিশেষের জন্য স্বতন্ত্র নয়, ধর্ম কোনো রকম বৈষম্য সৃষ্টি করে না। ধর্মের গ্রহণ বর্জন এবং ধর্মের আবেদন সকলের জন্য সমান। এমনকি ধর্মের অধিকারও সকলের জন্য সমান। ধর্ম জাত-পাত চিনবে না। জাত-পাত বিচারও করবে না। ধর্ম নারী পুরুষ বিভাজন করবে না, করে না। ধর্ম কোনো সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়িকতার মধ্যে আবদ্ধ হতে চায় না। সূর্য যেমন সকলের জন্য সমান, তেমনি ধর্মও। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়, বিশুদ্ধ বায়ু যেমন স্বাস্থের পক্ষে হিতকর, তেমনি স্বধর্মও সকলের জন্য মঙ্গলপ্রদ।’

তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে মহামারি এইডস যেমন কোনো ধর্ম-বর্ণ বিচার করে না, তেমনি ধর্ম জাত-পাত বিচার করে না। সুতরাং হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রিস্টান- ধর্মের ক্ষেত্রে কোনো বিচার্য বিষয় নয়। ধর্মের স্বভাব ধর্মই। ধর্ম নিজ আভায় সার্বজনীন বাণীতে উদ্ভাসিত। জ্ঞানের বহ্নি শিখায় প্রজ্জলিত হয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ অসম্প্রাদিয়কতায় অন্ধকার কুপমণ্ডকতা আর অকল্যাণকর সকল বাধা পেরিয়ে একটি উন্নত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।’

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার সমাজ রাষ্ট্র উৎসব সবার। এ মর্মবাণী অনুধাবন করতে পারলে বিশ্বের মানুষ সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্ধুদ হবে। হিংসা দ্বেষ ভেদাভেদ ভুলে শান্তির পৃথিবী গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত হবে। সকল সংকীর্ণতা স্বার্থপরতা কুপমণ্ডকতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সমাজ দেশকে গড়ে তুলব দেশকে বিশ্বসভায় গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করব- এ হোক দেশবাসীর দৃঢ় অঙ্গীকার।’

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। আমাদের দেশ অসাম্প্রদায়িক। এটা সব সময়ই আমাদের মনে রাখতে হবে এবং ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘ধর্মীয় শাসন আমাদের বিবেককে জাগ্রত করে। ধর্মের যারা প্রবক্তা তারা ভালো কথা বলেছেন। কিন্তু, আমাদের খারাপ চেতনা থাকায় ধর্ম প্রতিষ্ঠা পায় না। তাই চেষ্টা করবেন, যেন আমরা হিংস্রতা থেকে দূরে থাকতে পারি, সব ধর্মের ভালো দিকটা তুলে ধরতে পারি। আর যেন মনের ক্ষুদ্রতাকে জয় করতে শিখি।’

হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার বলেন, ‘দুর্গাপূজা শুধু আনন্দ নয়, উচ্ছ্বাসের অনুষ্ঠান নয়। এর মধ্যে একটি বার্তা আছে। সেটা হলো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয়। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিজয়া পুনর্মিলনী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট অমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। আর ধর্মীয় আলোচনা করেন শ্রীমৎ স্বামী ধ্রুবেশনান্দ মহারাজ।

Recent Posts

Leave a Comment