বেদানার গুণাগুণ
ফলের দোকানে রূপের যাদুতে সবার প্রথমেই আপনার চোখ টানবে বেদানা। শুধু রূপের লালিমা নয়, সুমিষ্ট স্বাদে তার জুড়ি মেলা ভার।
সেই সঙ্গে আছে নানা উপকারি উদ্ভিজ্জ পদার্থের সংমিশ্রণ। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই ফলটি বহু রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। আজ বেদানার এমন ছটি গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হল, যা বাস্তবিকই অবাক করার মতো।
১. বেদানা বহু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যোপাদানে সমৃদ্ধ:
এক কাপ (১৭৪ গ্রাম) বেদানায় থাকে প্রায় ৭ গ্রাম ফাইবার, ৩ গ্রাম প্রোটিন, ভিটামিন সি থাকে ৩০% আর ভিটামিন কে রয়েছে ৩৬%, আছে ১৬% আর ডি এ ফোলেট। এছাড়াও ছোট্ট ফলটায় উপস্থিত ১২% আর ডি এ পটাশিয়াম নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। প্রসঙ্গত, আর ডি এ হল দেহের প্রয়োজনীয় মোট পুষ্টির পরিমাণ। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে যে বেদানার রস ছাড়াও বেদানার বীজও পুষ্টি গুণে ভরপুর। এক কাপ বেদানার বীজে প্রায় ১৪৪ ক্যালরি মজুত থাকে। এছাড়াও বেদানায় বহু ওষধি গুণ সম্পন্ন উদ্ভিজ্জ পদার্থও আছে।
২. বেদানার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধি:
পুনিক্যালাজিন হল একটি অসাধারণ শক্তি সম্পন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। বেদানার রসে এবং খোসায় প্রচুর পরিমাণে এটি পাওয়া যায়। রেড ওয়াইন বা গ্রিন টি-এর থেকে প্রায় তিন গুণ বেশী পরিমাণে এই পুনিক্যালাজিন বেদানার রসে উপস্থিত থাকে। এছাড়াও বাজার চলতি বেদানার রস এবং বেদানার গুঁড়োতে মূলত এর খোসা ব্যবহার করা হয়, যেখানেও পুনিক্যালাজিন এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে।
৩. পুনিসিক অ্যাসিড রয়েছে প্রচুর পরিমাণে:
বেদানার বীজের তেলে মজুত রয়েছে পুনিসিক অ্যাসিড। বিজ্ঞানের ভাষায় পুনিসিক অ্যাসিড হল একটি কনজুগেটেড লিনোলেয়িক অ্যাসিড এবং এটি নানা জৈব গুণসমৃদ্ধ। শুধু তাই নয়, এটি হল একটি উপকারি স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাটি অ্যাসিড হওয়ায় এই উপাদানটি রক্তে মজুত অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে। ফলে কমে আসে হৃদরোগের সমস্যাও।
৪. প্রদাহজনিত সমস্যা কমায়:
বেদানা নানা ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা নিবারণে সিদ্ধহস্ত। শুধু তাই নয়, পরিপাক তন্ত্রের প্রদাহ এমনকি কোলোন ক্যান্সার প্রতিরোধেও এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, আমাদের শরীরে প্রদাহজনিত সমস্যার মূল কারণ হল সি আর পি এবং ইন্টারলিউকিন-৬। পরীক্ষায় দেখা গেছে ২৫০ মিলিলিটার বেদানার রস প্রতিদিন টানা ১২ সপ্তাহ পান করলে শরীরে প্রদাহজনিত সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায় এবং ইন্টারলিউকিন-৬ এর ক্ষতি করার ক্ষমতা প্রায় ৩২-৩০% কমে যায়।
৫. বেদানা প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সার রোধ করে:
বর্তমানে বহু পুরুষই প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে বেদানার রস ক্যান্সারের কোষের বিভাজনে বাধা দেয়। এমনকি ক্যান্সারের কোষ বিনষ্ট করতেও পারে। তাই তো প্রতিদিন ২৩৭ মিলিলিটার বেদানার রস খেলে বা বেদানার রস থেকে তৈরি পিওএমএক্স ক্যাপসুল সেবন করলে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে আসে। আজকের বিশ্বে নারীদের স্তন ক্যান্সার একটি বিরাট সমস্যা। পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সার ঠেকানোর পাশাপাশি নারীদের স্তন ক্যান্সার রোধেও বেদানা বেশ কার্যকরী।
৬. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে:
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের একটি অন্যতম কারণ হল উচ্চ রক্তচাপ। সমীক্ষায় জানা গেছে টানা দু’সপ্তাহ, দিনে ১৫০ মিলিলিটার করে বেদানার রস খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে। ফলে হাঠাৎ কোনও অঘটন ঘটার সম্ভাবন কমে।
৭. জীবাণুঘটিত নানা রোগের ওষুধ বেদানার রস:
মুখের ভিতর ঘা, দাঁতের সমস্যা, মাড়ি ফোলা এগুলি সবই আমাদের কাছে খুব পরিচিত সমস্যা। এই সব রোগের পিছনে মূলত ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস অনেকাংশে দায়ি থাকে। বেদানার রসের ওষধি গুণ এই সব জীবাণুদের মেরে ফেলে এমন রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে দারুন কাজে আসে। এছাড়াও বেদানার রস স্মৃতি শক্তি ধরে রাখতে এবং স্নায়ুজনিত নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।