ব্যাটিং স্বর্গকে নরক বানিয়ে বড় লজ্জায় টাইগাররা

 In খেলাধুলা, প্রধান খবর, লিড নিউজ

যেটা ছিল রানের স্বর্গস্থান সেটাই হয়ে গেলো বধ্যভূমি! দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষে এই কথা না বলে উপায় আছে? প্রথম দিনে ৯০ ওভারে অর্জন মাত্র ৩ উইকেট। শনিবার ৩০ ওভারে ১ উইকেট। ১২০ ওভারে ৪ উইকেট। আর তার মধ্যে প্রোটিয়াদের চারটি সেঞ্চুরি। ওই ৪ উইকেটেই মোট চার সেশনের সামান্য বেশি খেলে ৫৭৩ রানে ইনিংস ঘোষণা স্বাগতিকদের। তাহলে ব্লমফন্টেইনের ম্যানগাউং পার্ক ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গভূমি নয়? তাই যদি হয় তাহলে তো ৪৯ রানে ৪ আর ৬৫ রানে ৬ উইকেট পড়ার কথা নয় প্রতিপক্ষেরও! কিন্তু যেই না শনিবার দ্বিতীয় সেশনে ব্যাট করতে নামলো সাথে সাথে যেন এটাই হয়ে উঠলো ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি! কি অদ্ভুত বৈপরিত্য!

তাই বলে এটা ভাববেন না যে ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ভারনন ফিল্যান্ডারদের ছাড়া খেলতে নেমে আগুন ঝরাচ্ছিলেন প্রোটিয়া বোলাররা। নির্দিষ্ট এক পরিকল্পনায় বাউন্স আর গতি বৈচিত্র্যে কিভাবে ব্যাটসম্যানদের উইকেট টপাটপ তুলে নিতে হয় তাই যেন কাগিসো রাবাদার নেতৃত্বে টাইগার বোলারদের দেখাচ্ছিলেন প্রোটিয়ারা। আউটের যেসব ধরণ, তাতে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা আসলে মনেপ্রাণে টিকে থাকার চেষ্টাটা করছিলেন তো?
তার আগে ম্যাচের চিত্রটা পরিষ্কার করে দেখা যাক। ৪২.৫ ওভারে প্রথম ইনিংসে অল আউট বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৪২৬ রানে পিছিয়ে থেকে এদিনই শেষটায় ফ্লাডলাইটের আলোয় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা। সেখানে ১.২ ওভারের পর আর আলো মেলে না। এখনো ৪১৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়ে সংগ্রহ ৭ রান। ইমরুল ৬ ও সৌম্য ১ রানে অপরাজিত। ইনিংস পরাজয়ের চোখ রাঙানি সামনে।

আনলাকি থার্টিন যখন দলের রান তখন সৌম্য সরকার হলেন রাবাদার শিকার। কিভাবে? বাউন্সে বারবার পেছাতে পেছাতে নিজের লেগ স্টাম্প ভুলে বসলেন। সেই সুযোগটা নিপুণ ভাবে নিয়ে সৌম্যর শরীরের বাইরে থেকে লেগ স্টাম্প উড়িয়েছেন রাবাদা। ওটা সপ্তম ওভার। দলের রান ১৩। সৌম্যর ৯ রান ২৪ বলে। এরপর ৫২ রানে আরো ৫ উইকেট নেই! চা বিরতির আগে মোট গেলো ৪টি। বিরতি থেকে ফিরেই আরো দুটি। লিটন দাস তারপর লড়লেন।

ইনজুরির কারণে তামিম ইকবাল খেলতে পারছেন না। কিন্তু বাইরে ছটফট করতে করতে আগেই বলে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এই উইকেটে টিকে থেকে খেলে যাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু কি হলো? সেই নিবেদন অন্তত টাইগার ব্যাটসম্যানদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ছিল না বলাই যায়। চোট নিয়েও ইমরুল টিকে থাকতে চেয়েছেন। স্বস্তিতে ছিলেন না। অন্যদের মতো তার আউটও পেশাদার ব্যাটসম্যানের মতো নয়! প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু মুমিনুল হকের আউটটা বলা যায় শোভনীয়। লাফিয়ে ওঠা বল গ্লাভসে চুমু খেয়ে উইকেট কিপারের হাতে।

এই অবসরে একে একে দেখুন সেরা ব্যাটসম্যানদের রান গুলো, আউটের ক্রম হিসেবে। মুমিনুল ৪ রান ৭ বলে, ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহীম ৭ রান ৮ বলে, মাহমুদউল্লাহ ৪ রান ৬ বলে, ইমরুল ২৬ রান ৪৬ বলে, সাব্বির রহমান ৬ বলে ০। সৌম্য ও মুমিনুলের পর মুশফিক শরীরের বাইরে অনেক ওপরের বলটাকে খেলে ফেলেছেন অযথাই। সেটি স্লিপের ফিল্ডার টেম্বা বাভুমা পাখি হয়ে উড়ে গালিতে একহাতে ধরে নিজেই অবাক! অলিভিয়ের টানা দুই উইকেট নিলেন।

মাহমুদউল্লাহ চার মেরে শুরু করে পরের বলেই আউট। ওয়েন পারনেল বুঝেছেন শরীরের থেকে বাইরে টেনে এনে এই ব্যাটসম্যানদের ব্যাট চালানোর ব্যবস্থা করে উইকেট নেওয়া যায়। সেই ফাঁদে পা দিয়ে উইকেটের পেছনে নিজেকে বিসর্জন মাহমুদউল্লাহর। পরের দুটি উইকেট টপাটপ নিলেন রাবাদা। অফ স্টাম্পের বাইরের বলকে মেরে ইমরুল নেই। সাব্বির রহমানের সাধ হলো মরিবার! এক্সট্রা কাভারে রাবাদার বলটা তুলে দিলেন স্বস্তায়।

তারপর আর কি থাকে? আত্মবিশ্বাসহীনতা কিংবা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারা লিটনই বড় লজ্জার মুখে পড়া থেকে টানতে শুরু করলেন। তাইজুল ইসলামকে (১২) নিয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৫০ রানের জুটি সপ্তম উইকেটে। ৫৩ বলে ৯ চারে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি লিটনের। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। প্রথম থেকে বাকি জুটিগুলো যথাক্রমে ১৩, ১৩, ১০, ১৩, ১২, ৪ রানের!

ক্যারিয়ার সেরা ৭০ রান করার পর অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন যখন ফেরেন বাংলাদেশ তখন ১৪৩ রানে। রাবাদার চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে ৭৭ বলে ১৩ চারে দলের জন্য সবচেয়ে দামি সংগ্রহটা দিয়ে গেলেন লিটন। তারপর তো ছাতা বানিয়ে ঘিরে ফেলা টেল এন্ডারদের। মোস্তাফিজুর রহমান (০) দলের একই রানে লিটনের পিছু ধরেন। রুবেল হোসেন (১০) নেই একটু পর। রাবাদার হয় ৫ উইকেট। ১৪৭ রানেই অল আউট বাংলাদেশ।

তার আগের গল্পটা হাশিম আমলা ও ফ্যাফ ডু প্লেসির আর স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের দুর্দমনীয় ব্যাটিংয়ের। ২৪৭ রানের জুটি তাদের চতুর্থ উইকেটে। বৃষ্টির কারণে দিনের খেলা দেঢ় ঘণ্টা দেরিতে শুরু হলো। দেড় ঘণ্টার প্রথম সেশনেই আমলা তার ক্যারিয়ারের ২৮তম এবং অধিনায়ক ডু প্লেসি সপ্তম সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন। ৩ উইকেটে ৪২৮ রান নিয়ে শুরু করে সেটাকে ৬০০ এর কাছাকাছি পৌঁছিয়ে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই ছাড়ে প্রোটিয়ারা। দুই ওপেনার ডিন এলগার ও আইডেন মারকরাম ২৪৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। দুজনই করেছেন সেঞ্চুরি। দিনের একমাত্র উইকেটটি শুভাশিষ রায় নিলেন। আমলা আউট ১৩২ রানে। দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি হলো আমলা ও এলগারের। ডু প্লেসি ১৩৫ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করে ফিরেছেন। কুইন্টন ডি কক সাথে ছিলেন ২৮ রান নিয়ে।

এখন কি হলো ব্যাপারটা? পচেফস্ট্রুমে দুই ইনিংসে একবারও অল আউট করা যায়নি প্রতিপক্ষকে। এখানে প্রথম ইনিংসেও গেলো না। উল্টো ফলো অনে। সামনে কি? ওখানে ৩৩৩ রানের হার ছিল। এখানে? ওখানে ৫ দিনে গিয়েছিল খেলা। এখানে? খুবই বাজে এক অবস্থায় টাইগাররা।

সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস : ৫৭৩/৪ ডিক্লে. (এলগার ১১৩, মারকরাম ১৪৩, আমলা ১৩২, ডু প্লেসি ১৩৫*; শুভাশিষ ৩/১১৮, রুবেল ১/১১৩)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৪৭ (ইমরুল ২৬, সৌম্য ৯, মুমিনুল ৪, মুশফিক ৭, মাহমুদউল্লাহ ৪, লিটন ৭০, সাব্বির ০, তাইজুল ১২, রুবেল ১০, মোস্তাফিজ ০, শুভাশিষ ২*; রাবাদা ৫/৩৩, অলিভিয়ের ৩/৪০, পারনেল ১/৩৬, মহারাজ ১/৭)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৭/০ ( ইমরুল ৬, সৌম্য ১)।

Recent Posts

Leave a Comment