বিচিত্রগুণের মানুষ চাঁদপুর পৌরসভার সচিব!
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬নম্বর রূপসা ইউনিয়নের রূপসা ভূইয়া বাড়ির মৃত খোরশেদ আলম ভূঁইয়ার ছেলে চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া। কুমিল্লা জেলার লাকসাম (খ) শ্রেণীর পৌরসভায় সর্বপ্রথম সচিব পদে যোগদান করেন তিনি। এরপর চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতাকে দিয়ে বদলি হয়ে চলে আসেন চাঁদপুর পৌরসভায়। এখানে এসেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান ধূর্ত পৌর সচিব। তার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, তার বাবা পাকিস্তান আমলে এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। সে সময়ে অর্জিত সম্পত্তিও নেহায়েত কম নয়। তবে আবুল কালাম ভূঁইয়া পৈত্রিক সম্পত্তি খোয়াতে হয়নি নিজে কোটি কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক হতে।
আপাদমস্তক দুর্ণীতিবাজ ঘুষখোর অবৈধ কমিশনখোর চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া। তিনি গত ১১ বছর চাঁদপুর পৌরসভায় অবস্থান করে মেয়রের অজান্তে প্রথম শ্রেণীর চাঁদপুর পৌরসভাকে স্বেচ্ছাচারী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে দুই বার সরকারের তরফ থেকে নিবার্হী কর্মকর্তা পদয়ান করলেও তার তদবিরের দরুণ ওই পদে কেউ পোস্টিং নিতে পারেনি। কারণ পৌরসভাকে কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। সিন্ডিকেটের প্রধান সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া। কোনো কাজ টেন্ডারের আগেই র্পাসেন্টিজ গ্রহণ, জন্মসনদ, মৃত্যসনদ, সার্টিফিকেট, অটোরিক্সার লাইসেন্সে ২পার্সেন্ট কমিশন, পৌরসভার বিভিন্ন পদে নিয়োগ বানিজ্য, বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক এডহকসহ অবৈধ প্রক্রিয়ায় চাকুরী স্থায়ী করার ব্যাপারেও ওস্তাদ এ পৌর সচিব। গত ১১ বছরে চাঁদপুর পৌরসভার অধীনে যত নিয়োগ হয়েছে প্রত্যেকটি নিয়োগ থেকে লাখলাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন পৌর সচিব আবুল কালম। বিষয়টি পৌরসভার সকল কর্মকর্তা কর্মকচারী অবগত থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। নাম কায়েস্ত প্রাইভেট ইউনির্ভাসিটির সার্টিফিকেট দিয়ে পদোন্নতি করিয়ে দেন তিনি।
এছাড়া মতলব দক্ষিণ পৌরসভার অতিরিক্ত দায়িত্বে থেকেও কম যান না। প্রথম শ্রেণীর দুইটি পৌরসভার সচিব দায়িত্ব কিভাবে তিনি থাকেন এ নিয়ে আলোচনা সমালেচনা নেহায়েত কম হয় না। মূলত দুটি পৌরসভার বেশির ভাগ কাজই তার পরিকল্পনায় বাস্তবায়ন হয়। পৌর মেয়র একপ্রকার নাচের পুতুলের মতো কাজ করেন। চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদ নানান গুরুত্বপুর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই প্রায় সকল কাজের তদারকির সুযোগ পায় সচিব আবুল কালাম। পৌর মেয়রের সরল বিশ্বাসকে পুুঁজি করে এহেন কর্মকান্ড নেই যে তিনি করেন না।
সম্প্রতি চাঁদপুর পৌর শহীদ জাবেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বানিজ্যে প্রধান সমন্বয়েকের ভূমিকা পালন করেছেন। যে কাজে টাকা নেই, যত গুরুত্বপূর্ণই হোক সে কাজ ফেলে রাখবেন। তৈরি করবেন জটিলতা। এছাড়া সকল কাজে বিশেষ সুবিধা নিয়ে নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। চাঁদপুর শহরের নাজিরপাড়ায় বিলাসবহুল পাঁচতলা বাড়ি, স্টেডিয়ামের পাশের ক্রয়কৃত জমি, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় তিনটি প্লাটের মালিক হয়েছেন অনেক আগেই। অথচ তিনি সরকারি বেতন পান কত? জনমনে এমনটাই প্রশ্ন। চাকুরীকালীন সময়ে বাৎসরিক সঞ্চয় কত তার হিসেব করলেই বেরিয়ে আসবে কতটাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন এ পৌর সচিব। এদিকে পৌর সচিব হয়ে তিনি চাঁদপুর পৌরসভার গাড়ি ব্যবহার করছেন। অফিসিয়াল কাজ ছাড়াও জেলা ও জেলার বাইরে পৌরসভার গাড়ি ব্যবহার করেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার পারিবারিক কাজেও এ গাড়ি ব্যবহার করা হয়। যা প্রচলিত আইন পরিপন্থি।
প্রায় একবছর আগে চাঁদপুর পৌর শহীদ জাবেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত এক শিক্ষক পৌরসভার বিরুদ্ধে কিছু যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে অব্যহতিপত্র জমা দেন। সে অব্যহতি পত্র মেয়রের টেবিলে যাওয়ার পর তিনি সচিবকে মেনশন করেন। কিন্তু বিগত ১১মাসে অব্যহতিপত্রের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি পৌর সচিব। যে কারণে পৌরসভার হিসেব সেকশন থেকে শিক্ষকের এবি ব্যাংক একাউন্টে বেতন ঢুকতে থাকে। যদিও চলতি মাসে ৯ তারিখ প্রার্থীর ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। সেই নোটিশেও আরেক প্রতারণার আশ্রয় নেয় সচিব। সহকারি শিক্ষক পদ থেকে অব্যহতি নিলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয় ‘অবসরজনিত’ কারণে লেনদেন স্থগিত করা হয়। অথচ কয়েক মাসে চাঁদপুর পৌরসভায় স্কুল শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে অন্তত দশটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পৌর শহীদ জাবেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে চারজন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। যার বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের ঘুষ। ওসব নিয়োগের কাগজপত্র সঠিক ভাবেই চালাচালি হেয়েছে। অথচ যে শিক্ষক বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে অব্যহতি নিয়েছেন; তাকে সসস্মানে অব্যহতি দেয়ার ব্যাপারে কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণও করলেন না। প্রাচীন এ পৌরসভায় এমন দায়িত্বেই বলে দেয় তিনি কতটা কর্তব্যপরায়ন। অব্যহতি এবং অবসরজনিত প্রতিটি বিষয়ে থাকে পৌর সচিবের খামখেয়ালিপনা।
আক্ষেপ করে ওই শিক্ষক মোঃ আবদুল কাদের বলেন, ২০১৫সালের ১০ফেব্রুয়ারি আমাকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। ৬সেপ্টম্বর ২০১৫ইং চাঁপৌস/প্রশা/সাধা/২০১৫/১২১৭ নং স্মারকে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৮ফেব্রুয়ারী ২০১৬ খৃীষ্টাব্দে আমার চাকুরী স্থায়ী করতে আপনার দপ্তরে আবেদন করি। চাকুরী স্থায়ীকরণ ও এমপিও’র ব্যাপারে সচিব কোনো প্রকার উদ্যোগ নেয়নি। অথচ আমার নিয়োগের ছয়মাস পর এনটিআরসি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এতে যেমনি আমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তেমনি পৌরসভাও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্তমান সরকার ঘোষিত জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ ঘোষণার পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা শেষে গত ২৩অক্টোবর ২০১৬ খৃীষ্টাব্দ বেতনস্কেল সমন্বয় করার আবেদন করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমি গত ২জুলাই ২০১৭ তারিখে অব্যহতি নিয়েছি। কিন্তু পৌরসভা আমাকে অব্যহতি দেয়নি কিংবা আমার কাছে কোনো চিঠি এসে পৌছায় নি।
এব্যাপারে পৌর সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, আমাকে দিয়ে পৌরসভার উপকার হয় বলেই এখানে রেখে দেয়। আর চাকুরি তথা নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই। মেয়র সাহেবই সব কিছু তদারকি করেন। এতো সম্পদের মালিক আপনি কি করে হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিভিন্ন প্রকার বিজনেস আছে। ছাত্রজীবন থেকেই আমি অন্যের পূঁজি দিয়ে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করি।