কচুয়ায় এক অধ্যক্ষ বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ!
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলাধীন শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এটিএম শাহ আলমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তিনি বহাল তবিয়তে বীর দর্পে অধ্যক্ষগীরী করে যাচ্ছেন। অথচ তিনি চাকুরীতে প্রবেশের সময় সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতা নিয়ে অনিয়ম, অধীনস্থ শিক্ষকদের সাথে উগ্র আচারণ, শিক্ষকদের মাঝে গ্রুপিং সৃষ্টি, মহিলা শিক্ষক কর্মচারীদের যৌন হয়রানি করেছন। এছাড়া কলেজের বিভিন্ন খাতের টাকা ভুয়া বিলভাউচার বানিয়ে আত্মসাত করেছন। এসব অভিযোগের মধ্যে বেশ কয়েকটির সত্যতা পায় মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অনুসন্ধান শেষে গত ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর ৭জি/৬৭(ক-৩)/ ২০০৬/৬২৯৮/২ স্মারকে কারণ দর্শানোর দেন সহকারী পরিচালক (ক-৩) ফারহানা আক্তার।
সে নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অধ্যক্ষ মোঃ আবু তাহের শাহ আলম চাকুরি পাওয়ার জন্যে তার শিক্ষাগত যোগ্যতায় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্যে তার কাম্য অভিজ্ঞতা ছিল না। তখন তার অভিজ্ঞতা ৯বছর ৩মাস ৩দিন ছিলো। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াস্থ সরাইল আবদুস সাত্তার কলেজ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে যোগদান করার মধ্যবর্তি সময়কাল ২বছর ৮মাস ১২দিন। অর্থাৎ তার চাকুরির ধারাবাহিকতা ‘ব্রেক অব সার্ভিস’ বিগ্নিত হয়েছে। তিনি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াস্থ সরাইল আবদুস সাত্তার কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির স্বাক্ষর জল করে অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ তথা অসৎ উপায় অবলম্বন করে শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে চাকুরী নিয়েছেন। অধ্যক্ষ মিথ্যা তথ্য, জাল রেকর্ড প্রদান করায় জনবল কাঠামো অনু: ১৮ ১. (গ) (খ) মোতাবেক কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এর জবাব সাত (০৭) কর্ম দিবসের মধ্যে দেয়ার জন্যে নিদের্শক্রমে অনুরোধ করা হয়।
এব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এটিএম শাহ আলম বলেন, আমি প্রতিটি অভিযোগ আলাদা আলাদা জবাব দিয়েছি। কি জবাব দিয়েছেন এমন প্রশ্নের প্রতিত্তুরে তিনি চুপ থাকেন।
এ অধ্যক্ষ ২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী কলেজের যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেন। বিবিণœ সময়ে সময়ে তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠতে শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে মৌখিক অভিযোগ উঠলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কলেজ পরিচালনা বোর্ড। ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টম্বর কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক লায়লা পারভিন লাকি কচুয়া উপজেলা চেয়রম্যান বরাবরে প্রথম লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের কোনো সমধান না পেয়ে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মাধ্যম করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আরেকটি অভিযোগ দেন লায়লা পারভীন লাকী। অভিযোগ উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে লাকীকে এ টিএম শাহ আলম বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিতে শুরু করে। এমনিক সয়ন কক্ষে যাওয়ার জন্যে মুঠোফোনে কল করে। শুধু লাকী নয়, সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক নাজমুন নাহার, সহ-হ্রন্খহারিব আয়েশা বেগমও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের আদেশক্রমে গত ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর ড. মোঃ শামসুদ্দীন ইলিয়াস ০৭(চ-১৮২) জাতীঃ বিঃ/কঃপঃ/ কোড-৩৯১২/ ২৭৩৬ স্মারকে কলেজ সভাপতি বরাবরে চিঠি পাঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ এ টিএম শাহ আলম বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে গর্ভনিং বডির সভায় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে পরিচালনা পর্ষদের সভায় কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিক্ষকদের-কর্মচারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সর্বশেষ গত ২৬ মে শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ভেবে ভূক্তভোগিরা অপেক্ষায় ছিলেন। কারণ সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কলেজ পরিচালনা কমিটি সভাপতি ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সে সভায়ও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সভার শেষ পর্যায়ে কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, শিক্ষকরা অভ্যন্তরিণ সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলা উচিৎ। কলেজের স্বার্থে সমোঝতা করার নির্দেশ দেন।
সভাপতির এমন মন্তব্যে হতাশ হয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, অধ্যক্ষ এতো অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন বিষয়টি খুবই পীড়াদায়ক। আমরা জানি, অধ্যক্ষকে দেশের এক প্রভাবশালী নেতা আশ্রয় প্রশ্রয় দেন। তাইতো তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারপরে আমরা আশায় বুক বেধে আছি, নিশ্চয় একদিন এ অনিয়মের বিচার হবে। সভাপতি মহোদয়ই বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।