সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের গ্রাম আদালত বিষয়ে পরামর্শ সভা
প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
গণমাধ্যমের সহায়তায় গ্রামীণ জনগণের মাঝে কীভাবে গ্রাম আদালতের ওপর ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, যাতে স্থানীয় জনগণ বিশেষত: নারী, দরিদ্র ও বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী নিজেদের মধ্যকার বিরোধগুলো স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুততম সময়ে, স্বল্প খরচে ও স্বচ্ছতার সাথে নিষ্পত্তি করতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনার জন্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ‘গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতসতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভাটি গতকাল সোমবার চাঁদপুুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় চাঁদপুর জেলায় কর্মরত ৪০ জন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ মোট ৫৫ জন উপস্থিত ছিলেন।
চাঁদপুরের স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মঈনুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান ও মতলব সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাজন কুমার দাস। চাঁদপুর স্থানীয় সরকারের গ্রাম আদালত প্রকল্প বিষয়ক ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান বলেন, গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা না থাকায় গ্রামে অনেক ছোটখাটো ঘটনা ঘটলেও সাধারণ মানুষ তার প্রতিকার চাইতে থানা বা জেলা আদালতে আসেন, যাতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। গ্রাম আদালতের সেবা সম্পর্কে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাগণ সাধারণ মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি আরো বলেন, গ্রাম আদালতকে আরো কার্যকর করা, স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং সেবা গ্রহণে উৎসাহিত করতে আমাদের যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। এটা সরকারের একটা অন্যতম সেবা।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, প্রান্তিক এলাকার জনগণ বিশেষ করে দরিদ্র নারী ও জনগোষ্ঠী যাতে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে কম সময়ে ও কম খরচে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেন এ জন্যে আমাদের সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।
সভার সভাপতি মোঃ মঈনুল হাসান বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ছোট খাট বিবাদ বা বিরোধ ইউনিয়ন পরিষদে কার্যকরভাবে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। তিনি এই বিচারিক সুবিধার কথা চাঁদপুর জেলার চরসহ সকল প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ বিশেষত নারীদের মাঝে পেঁৗছে দেয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, গ্রাম আদালতের অন্যতম অংশীজন হিসেবে সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা গ্রাম আদালতের সাফল্য তুলে ধরে এর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে পারি।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে জানা যায় যে, চাঁদপুর জেলায় গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের কাজ গত দেড় বছর ধরে চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাম আদালতের সাথে যুক্ত প্রকল্পাধীন ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, ইউপি সচিব ও আদালত সহকারীদের গ্রাম আদালত বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গত জুলাই ২০১৭ হতে মে ২০১৮ পর্যন্ত মোট ১৭৫৯টি মামলা গৃহিত হয়েছে এবং এর মধ্যে ১৩৮৩টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে, যেখানে মামলা নিস্পত্তির হার শতকরা ৭২ ভাগ।
উল্লেখ্য, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প চাঁদপুর জেলার ৫টি উপজেলায় মোট ৪৪টি ইউনিয়নে কাজ করে। তবে গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (সংশোধন ২০১৩) অনুযায়ী বাংলাদেশের সকল ইউনিয়নেই গ্রাম আদালত থাকার কথা।