করোনায় বন্ধ স্কুল কলেজ, বন্ধ হয়নি কোচিং বাণিজ্য!
বিল্লাল ঢালী:
করোনা মহামারির মধ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজ। বন্ধ হয়নি কোচিং বাণিজ্য। আইন ফাঁকি দিয়ে চলছে কোচিং সেন্টারগুলো। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা বাসা ভাড়া নিয়ে নামে- বেনামে চালাচ্ছেন কোচিং বাণিজ্য। সেখানেই প্রতিদিন চলছে শিক্ষকদের পাঠদান। মানা হয় না স্বাস্থ্য বিধি।
চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলাসহ প্রতিটি উপজেলার একই চিত্র। করোনা মহামারীর কারণে সরকারি নির্দেশনা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু একশ্রেণীর শিক্ষক সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং অথবা প্রাইভেট বাণিজ্য। সকাল-দুপুর-বিকেল ৮ থেকে ১০জন ছাত্রের গ্রুপ করে পড়াচ্ছেন প্রাইভেট। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব তথা স্বাস্থ্যবিধি। সরকারি স্কুল কলেজগুলোর কিছু শিক্ষকদের পাশাপাশি এই বাণিজ্যে জড়িত প্রাইভেট এবং এমপিওভুক্ত কিছু শিক্ষক।
অর্থ লোভে ‘মানুষগড়া কারিগর নামের অনেক শিক্ষকই জড়াচ্ছেন কোচিং বাণিজ্যে। ভুলে যাচ্ছেন শিক্ষার নীতিমালা ও নৈতিকতা। হচ্ছেন আদর্শ বিচ্যুত। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষার পিছনে বছরে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সরকার ঘোষিত নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে একশ্রেণীর শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন কোচিং সেন্টার নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সরকারি ও এমপিও সুবিধাভোগি শিক্ষকরা কোচিং সেন্টারের মালিক হয়ে পঙ্গু করে দিচ্ছেন স্কুল কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষাকে করে তুলেছেন বাণিজ্যিকরণ। যার ফলে অনেক অভিভাবক মনে করেন স্কুল কলেজগুলোতে ঠিকমতো পড়াশোনা করানো হয় না। কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষকগণ বাড়তি আয়ে যত্ন সহকারে শিক্ষা দেয় ছাত্র-ছাত্রীদের।
জেলার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নামি শিক্ষকরাও বাসাবাড়িতে সাইনবোর্ডবিহীন কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাচে ব্যাচে শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়ছে। কোচিং বাণিজ্যের কারণে প্রতিটি স্কুলের প্রায় ৬০ থেকে ৫০ ভাগ ছাত্র-ছাত্রী বাধ্য হচ্ছে কোচিং সেন্টারে পড়তে। ফলে কোচিং সেন্টারগুলোর মালিক শিক্ষকরা শিক্ষার নামে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকায় নিজ স্কুলের শিক্ষকদের কাছেই গণিত, ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থসহ পাঠ্যসূচির বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে বাধ্য হচ্ছে।
কোচিং করার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, করোণা মহামারীর কারণে সারাদেশে স্কুল-কলেজ বন্ধ। অনলাইনে সরকার ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে। পুরো বছরের পড়াশোনা এভাবে সম্ভব নয়। ছেলে মেয়েরা বাসায় বসে অলস সময় পার করছে। এতে পড়াশোনার ব্যাঘাত হচ্ছে তাদের। পড়াশোনায় মনোযোগ বিগ্ন না হয় সেজন্য কোচিং সেন্টারে পড়ানো। তাছাড়া কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ছেলে মেয়েদের স্কুলের শিক্ষক। মূল্যায়নের সময় তারা বিশেষ নজর রাখবে তারা অভিমত প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন পাটওয়ারী জানান, কোচিং সেন্টারের বিষয়ে আমরা একটা সভা করেছি। প্রত্যেকটা স্কুল সভার রেজুলেশন পাঠিয়েছি। সভায় আমরা একটা মনিটরিং টিম গঠন করেছি। প্রতিদিন এই টিম বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে এবং কোথাও কোচিং সেন্টার চালু আছে কিনা রিপোর্ট প্রদান করে। আমরা যদি কোন কোচিং সেন্টার খোলা পাই তবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। করোনা মহামারীতে এ ধরণের কোচিং বাণিজ্য কোনো ভাবেই কাম্য নয়।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) দাউদ হোসেন চৌধুরী জানান, এমন খবর আমরা পাইনি। তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে আলাপ সাপেক্ষে দ্রুত বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করবো।