চাঁদপুর জাতীয় পার্টির হ-য-ব-র-ল অবস্থা
বিশেষ প্রতিনিধি:
দীর্ঘ তিন বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির কার্যক্রম। কিন্তু কার্যক্রমটা হচ্ছে কী এ নিয়েও রয়েছে নেতা কর্মী সমর্থকদের মনে প্রশ্ন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হলেও সম্মেলন আর করা হয়নি। এরপর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭সালের মধ্যে তিন বার চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সবশেষ ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ১৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আর সে কমিটিতেই চলছে কমিটি! সাংগঠনিক কার্যক্রম বলতে চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও চাঁদপুর পৌর কমিটি ভেঙেছে কিন্তু গঠন করার কথা আর শোনা যায়নি। অপরদিকে ফরিদগঞ্জে একসদস্য বিশিষ্ট কমিটিতেই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ! মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলাতেও হযবরল অবস্থা। হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়ায় কার্যক্রম নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ বলেই জেলা পর্যায়ের নেতারা মনে করেন।
সম্মেলন বা নতুন কমিটি না হওয়ায় জেলা জাতীয় পার্টির নেতা কর্মী সমর্থকদের মাঝে চরম হতাশা আর ক্ষোভ বিরাজ করছে। পূর্বে যারা জাতীয় পার্টির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা দলকে সুসংগঠিত করার আহ্বান জানালেও কে শোনে কার কথা? তাইতো চাঁদপুর জাতীয় পার্টির এখন ত্রাহি অবস্থা। যদিও পদপঞ্চিত নেতা কর্মীরা শহরে দুই একটি কর্মসূচি পালন বা অনুষ্ঠান করলেও আয়োজন থাকে সীমিত পরিসরে। অবশ্য আহ্বায়ক কমিটির তরফ থেকে এমন কোনো কার্যক্রম করতে দেখা যায়নি। তবে ব্যক্তি বিশেষের চেম্বারে চলে চা আড্ডা যা চালিয়ে দেয় দলীয় কর্মসূচি হিসেবে। অবশ্য জেলা জাতীয় পার্টির মুরব্বি এবং চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজীর মৃত্যুর পর যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দলটি। এখন যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন তারা শুধু পদ দখল করেই আছে এমনটাই অভিযোগ কর্মী সমর্থকদের। সর্বপরি চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি প্রকাশ্যে বিরাজমান। সাম্প্রতিক সময়ে আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে পদ বঞ্চিতরা পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন কর্মসূচি করতে দেখা গেছে। এ নিয়ে একনিষ্ঠ জাতীয় পার্টির কর্মী সমর্থকরা আছে বিপাকে। কোন দিকে পাবে কিনার? এ যেন মাঝিহীন নৌকার মতো অবস্থা। বিবাদমান এ পরিস্থিতি কেন্দ্রের বিশেষ ব্যক্তিদের অবহিত করা হলেও কার্যকর কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। এ নিয়ে স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝে তৈরি হচ্ছে অভিমান।
অপরদিকে চাঁদপুর জেলা যুবসংহতির সম্মেলন চলতি বছরের ৭নভেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও জেলা জাতীয় পার্টির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের আপত্তির প্রেক্ষিতে তা আর করা হয়নি। উল্টো ১৯ ডিসেম্বর ২৪ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। এ কমিটি গঠন নিয়েও ত্যাগী নেতাদের প্রশ্ন ছুঁড়তে দেখা গেছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর, ১মার্চ ২০১৬ সালে ৩৯সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি, ২৯ মে ২০১৭ সালে ৫৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি এবং ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ১৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটিতেই চলছে চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টি। সর্বশেষ কমিটির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান’কে সম্বনয়কারী এবং ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ এমরান হোসেন মিয়াকে আহ্বায়ক, নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজী ও আলহাজ্ব শেখ আব্দুল মান্নানকে উপদেষ্টা করে জাতীয় পার্টি চাঁদপুর জেলা শাখার ১শ ৪২ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়।
মতলব উত্তর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক কাইয়ুম খান, বিভিন্ন কারণে উপজেলা কমিটিতে পদ নেইনি। কারণ যাদের নিয়ে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের দলের সদস্য হওয়ার যোগ্যতাও নেই। তিনি মন মতো কমিটি গঠন করে নিচ্ছেন। যারা দুঃসময়ে জাতীয় পার্টিকে ধরে রেখেছে তারা বঞ্চিত হোক আমি তা চাই না। সে সমস্ত নেতা কর্মীদের ছাড়া আমি দল করতে পারবো না। তিনি পুরাতন কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করেছে। মিজান মোল্লা নামে একজনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তাকে ইউনিয়নের মানুষই চিনে না। সোহরাব নামে একজন দুইটি পদে (জেলা ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক এবং ছেঙ্গারচর পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতি পদ) থাকা সত্ত্বে তাকে মতলব উত্তর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। যা প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের মতো ত্যাগী নেতা কর্মী বাদ দিয়েই তিনি পকেট কমিটি গঠন করছেন। মূলত জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এমরান হোসেন মিয়া স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়ে দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. মোঃ মহসীন খান জানান, বর্তমান আহ্বায়ক স্বেচ্ছাচারীভাবে সংগঠন চালাচ্ছে। তিনি দলের প্রতিষ্ঠিত, ত্যাগী ও সাংগঠনিক নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের বলয়ের মধ্যে সংগঠন চালানোর চেষ্টা করছেন। যা ভবিষ্যত জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সংকট তৈরি করতে পারে।
চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আলহাজ্ব মোঃ এমরান হোসেন মিয়া জাতীয় পার্টির যুব সংহতির নতুন আহ্বায়ক কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, হাতের আঙুলতো সব এক নয়। অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। হাসিনা খালেদাকে সবাই ভালো বলে না।
জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিটি যখন হবে আপনারাতো খবর পাবেনই। আমরা খবর দিবো। আমরা করোনাকালীন সময়ে ডিসি এসপির কাছ থেকে অনুমতি পাচ্ছি না। প্রায় একবছর আমরা ঘুরতেছি। সম্মেলনতো আর ঘরে বইসা করা যাবে না। আমাদের সম্মেলনে দুইতিন হাজার লোক হবে। ডিসি বা এসপির কাছে আবেদন করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না না করবো কেন? ডেট দিয়েই না আবেদন করবো।