পৌঁছেনি প্রাক-প্রাথমিকের অনুশীলন খাতা! চাহিদার চেয়ে ৩লাখ ৯১হাজার ১শ ১২টি বই কম এসেছে
নজরুল ইসলাম আতিক:
পহেলা জানুয়ারি থেকে দেশের সকল বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। করোনা মহামারীতে এবার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১১ শ্রেণীর বই একেকদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হবে। পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেয়া বরাদ্দের তুলনায় পাওয়া গেছে কিছুটা কম। বিশেষ করে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুশীলন খাতা বরাদ্দ থাকলেও সরকার অনুশীলন খাতায় বছর দেয়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বরাদ্দকৃত বইয়ের ৭১.১ভাগ নতুন বই জেলা শিক্ষা অফিসে পেলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এর ক্ষেত্র পরিসংখ্যানটা একটু ভিন্ন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্যে বই প্রাপ্তির হার মাত্র ৪০ ভাগ বলে জানা গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর জেলায় এবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট বই চাহিদা ছিলো ১৪লাখ ১৩হাজার ৩শ ৩৫ আর পাওয়া গেছে ১০লাখ ২২হাজার ২শ ২৩। এর মধ্যে জেলায় প্রাক-প্রাথমিক এ বরাদ্দ ছিলো ৫২ হাজার ৬শ ৪০ সেখানে পাওয়া গেছে ৫২ ১শ ৪৭ বই। ১ম শ্রেণিতে বইয়ের চাহিদা ছিলো ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৬, ২য় শ্রেণিতে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮শ ৪৯, ৩য় শ্রেণিতে চাহিদা ছিলো ৩ লাখ ৪৭ হাজার ২শ ২৫ আর পাওয়া গেছে ৩ লাখ ১হাজার ৬শ ৪৩। ৪র্থ শ্রেণির চাহিদা দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ১শ ৭৪ সেখানে পাওয়া গেছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭শ ৭৮ টি বই। এছাড়া ৫ম শ্রেণিতে বইয়ের চাহিদা ছিলো ৩ লাখ ১০ হাজার ৩শ ৯১ বিনিময়ে পাওয়া গেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭শ ৫০টি বই।
এবছর চাঁদপুর সদর উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিকের বই চাহিদা দেওয়া হয়েছিল ১০ হাজার ৯শ ৮১। বরাদ্দও পাওয়া গেছে সমপরিমাণের কিছুটা বেশি। যদিও অনুশীলন খাতার চাহিদা দেয়া থাকলেও ২৮ডিসেম্বর পর্যন্ত সে খাতা এসে পৌঁছায়নি। প্রথম শ্রেণীতে চাহিদা ছিলো ৩৯ হাজার। দ্বিতীয় শ্রেণীতে বরাদ্দকৃত বইয়ের ও প্রাপ্তির সংখ্যা ৩৬ হাজার। ৩য় শ্রেণিতে বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা ৭৫ হাজার। ৪র্থ শ্রেণিতে বরাদ্দ ৬৭ হাজার ২শ থাকলেও প্রাপ্তির পরিমানটা অনেক কম এবং তা হলো ৩৪ হাজার ৪শ এবং পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাপ্তির সংখ্যাটা অনেক কম। ৫ম শ্রেণির চাহিদা দেয়া হয়েছিলো ৬১ হাজার ২শ কিন্তু প্রাপ্তি মাত্র ৪০ হাজার ৫০।
কচুয়ায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তি সংখ্যা সমান ৭ হাজার ৮শ। ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা ২৫ হাজার ৭শ ৪৬। ২য় শ্রেণীর বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা ২৫ হাজার ৫শ। ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা ৫০ হাজার ৪শ। ৪র্থ শ্রেণির ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ৪৯ হাজার ২শ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৫ হাজার ৫০। এবং ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ৪৭ হাজার ৪শ কিন্তু প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৩১ হাজার ৬শ।
হাজিগঞ্জে প্রাক-প্রাথমিক ৮ হাজার দেওয়া হলেও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৭ হাজার ৫শ। ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৫ হাজার ৫শ। ২য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৬ হাজার ৮শ। ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৪২ হাজার ৫শ। ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ৪১ হাজার সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৪ হাজার ৬শ। এবং ৫ম শ্রেণির বরাদ্দের কোন বই পাওয়া যায়নি।
হাইমচর উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক এ বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২ হাজার ১শ। ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১০ হাজার ৫শ। ২য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১০ হাজার ৫শ। ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৯ হাজার ২শ। ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ১৯ হাজার ২শ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৯ হাজার ২শ। এবং ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৬ হাজার ৫শ।
শাহরাস্তি উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক এ বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৫ হাজার ২৯। ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৮ হাজার ৬শ। ২য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৮ হাজার। ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৩৬ হাজার। ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ৩৬ হাজার সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৮ হাজার। এবং ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ ছিলো ৩৩ হাজার ৬শ কিন্তু প্রাপ্তির সংখ্যা হলো মাত্র ৩শ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক এ বরাদ্দ ছিলো ৬ হাজার ৬৫ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৬ হাজার ৫শ ৯৫। ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৫ হাজার ৫শ ৬০। ২য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৬ হাজার ৪শ ৯৬। ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৪৪ হাজার ৬শ ৫৫। ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো ৪৪ হাজার ৮শ ৮০ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৬ হাজার ৯শ ২৮। এবং ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ ৪১ হাজার ৭৬ থাকলেও এখনো কোন বাই হাতে এসে পৌঁছায়নি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক এ বরাদ্দ ছিলো ৪ হাজার ৫শ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৪ হাজার ২০। ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৮ হাজার ১শ ৫০। ২য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৮ হাজার। ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৩৩ হাজার ৮শ ৮৮। ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো দেওয়া হয়েছিলো ৩০ হাজার ৬শ। এবং ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৩০ হাজার ৩শ।
মতলব উত্তর উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিক এ বরাদ্দ ছিলো ৮ হাজার ১শ ৬৫ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৮ হাজার ১শ। ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৪ হাজার। ২য় শ্রেণির বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ২৩ হাজার ৫শ ৫৩। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ হলো যথাক্রমে ৪৫ হাজার ৫শ ৮২, ৪৪ হাজার ৯৪, ৪১ হাজার ৭৬। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখনো কোন বই প্রাপ্তি স্বীকারে আসেনি।
এছাড়াও জেলায় প্রাথমিক স্তরের ইংরেজি ভার্সন পাঠ্যপুস্তক বরাদ্দ প্রাপ্তির সংখ্যা হলো: ১ম শ্রেণির বরাদ্দ ৩ প্রাপ্তি ৪, ২য় শ্রেণির বরাদ্দ ৫ প্রাপ্তি ৬, ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ৭ এবং প্রাপ্তি ৮, ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দ ৯ এবং প্রাপ্তি ১০, ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ ছিলো ১১ এবং প্রাপ্তি হলো ১২।
পুরো জেলায় প্রাথমিক স্তরের ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক বরাদ্দ প্রাপ্তির সংখ্যা নিচে দেওয়া হল:
ইসলাম ধর্ম বিষয়ের ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ৫৬ হাজার ৯শ ৬২ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৪৯ হাজার ৮শ ৮১, ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দ ছিলো ৫৪ হাজার ৪শ ৫ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৭ হাজার ৫শ, ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ ছিলো ৫০ হাজার ৯শ ১২ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ১৬ হাজার ৫শ।
হিন্দু ধর্ম ৩য় শ্রেণির বরাদ্দ ৩ হাজার ৭শ ১৮ এবং প্রাপ্তি সংখ্যা হলো ৩ হাজার ২শ ৯৮। ৪র্থ শ্রেণির বরাদ্দ ৩ হাজার ৭শ ২০ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৩ হাজার ৩শ। ৫ম শ্রেণির বরাদ্দ ছিলো ৩ হাজার ৫শ ৫০ সেখানে প্রাপ্তির সংখ্যা হলো ৩ হাজার ১শ ৭০।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাহাব উদ্দিন জানান, বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে। বই দেয়ার আগে বইয়ের সেট করা হবে। তারপর শিক্ষার্থী অথবা অভিভাবক এসে একসেট করে বই নিয়ে যাবেন। করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে এবছর বই বিতরণ করা হবে। খুব শীঘ্রই প্রাক প্রাথমিকের অনুশিলন খাতা আমাদের হাতে পৌঁছাবে। আর বাকী বইও নিশ্চয় পেয়ে যাবো।