বেড়েছে ক্রেস্টের ব্যবহার, গুরুত্ব বেড়েছে কি?
বিল্লাল ঢালী:
চাঁদপুরে গত কয়েক বছরে বেড়েছে ক্রেস্টের ব্যবহার। অনুষ্ঠান মানেই ক্রেস্ট। একটা ক্রেস্ট না দিলে যেন আয়োজনই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাইতো আয়োজকরা প্রায় প্রতি অনুষ্ঠানেই ক্রেস্ট প্রদানের একটি অংশ রাখেন। এতে সম্মানিতবোধ করেন যেমনি অতিথি তেমনি আয়োজকরাও তৃপ্ত হন। কিন্তু ভূঁইফোঁড় সংগঠনও ব্যবহার করছে দামিদামি ক্রেস্ট।যার হাতে তুলে দিচ্ছেন সে ব্যক্তির কাজের চেয়ে ক্রেস্টের ওজন বেশি হয় ঢের।নামকায়েস্ত কিছু সংগঠন আছে যারা শুধুমাত্র ক্রেস্ট প্রদানের জন্যেই অনুষ্ঠান করে থাকে। যদিও এর আগে আয়োজক সংগঠনের নাম সাঁটিয়ে দেয়। এসব নিয়ে সুশীল সমাজে আলোচনা-সমালোচনা চলে তুখোড়। যেন গোপন কথা। কেউ যেন না শোনে দুজন ছাড়া।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে চাঁদপুরে অন্তত ১০টি ক্রেস্টের দোকান রয়েছে। এছাড়া কেউ কেউ ঢাকা থেকে বিশেষ ভাবে অর্ডার করে নিয়ে আসে। কেউ কেউ ইভেন্টম্যানেজম্যান্টরের মাধ্যমে চাকচিক্যে ভরা বড় বড় ক্রেস্ট সংগ্রহ করেন। অবশ্য করোনাকালীন সময়ে এর ব্যবহার ছিলো না বললেই চলে। স্থবিরতা থেকেইর্দানিং আবার শুরু হয়েছে ক্রেস্ট ক্রেস্ট খেলা। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানিত করতে ক্রেস্ট দেয়ার প্রচলন দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য খ্যাতিমানদের সম্মানিত করার এই প্রথা সর্বজন প্রশংসিত। এই উদ্যোগ অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করে ব্যক্তি তথা সমাজ জীবনে। কিন্তু এখন এসব ক্রেস্ট কতটা সম্মানের কিংবা সম্মানজনক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের মনে। অনেকেই বলছেন, ক্রেস্ট প্রদানের এই প্রশংসিত প্রক্রিয়াকে ‘অমর্যাদাকর’ পর্যায়ে নামিয়ে ফেলেছেন কিছু ব্যক্তি। ক্রেস্ট প্রদান এখন এক ধরণের বাণিজ্য হিসেবে ধরা দিয়েছে মানুষের চোখে। বছর দেড়েক আগেও ডেকে ডেকে বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নামে ক্রেস্ট দেয়া হতো। এখন সেই চক্র কিছুটা হলেও নিষ্ক্রিয়।কারণ ওসব ক্রেস্ট এখন ভূঁইফোঁড় সংগঠনও দিতে পারে। তাই ক্রেস্ট দেয়ার নামে এখন আর টাকা আয় হয় না।এতে সটকে পড়েছে একটি চক্র। কিন্তু তাই বলে ক্রেস্টের ব্যবহার করেনি বরং বেড়েছে।
নাম প্রকাশে একজন লেখক জানান, ক্রেস্ট বা সংগঠন বড় কথা নয়। অনেকেই এটাকে স্বীকৃতি হিসেবে নেয়। কারণ বছর দুয়েক পরে ক্রেস্ট থাকে না কিন্তু স্বীকৃতি থেকে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে যোগ্য লোককে যথাযত স্বীকৃতি দিলে কোনো আপত্তি থাকতো না। কিন্তু খোলা চোখে মনে হচ্ছে ক্রেস্টের যাচ্ছেতাই ব্যবহার শুরু হয়েছে।
সচেতন মহল বলছেন, অধিকাংশ ক্রেস্ট গ্রহীতার অবদান এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সম্মানীয় ব্যক্তিরা যদি ক্রেস্ট নিতে অনিহা প্রকাশ করেন তবে আয়োজকরা এ ধরনের হীন কাজ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য।
আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা অনেকেই এখন আর ক্রেস্ট গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন।গণহারে ক্রেস্ট দেয়াকে সমর্থন করেন না এমন কয়েকজন বলেন, ক্রেস্ট গ্রহণ সম্মানের বিষয়। আজকাল যে কোন অনুষ্ঠানে যে কারো হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। আবার দেয়ার আগে নামের সাথে জুড়ে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদপদবী। এখনো জাতীয় পর্যায়ে যে পদক বা সম্মাননা দেয়া হচ্ছে যদিও তা সর্বজন শ্রদ্ধেয়।
এ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে কাউকে ক্রেস্ট দেবোনা এবং আমরা নিজেরাও গ্রহণ করবো না। আমরা ক্রেস্ট এর পরিবর্তে বই উপহার দেব। কারণ ক্রেস্টের মান এখন আর আগের মত নেই।